ইসলাম ডেস্ক: নবীজি (সাঃ) অনেকগুলো কবর দেখলেন। খুশী হলেন। শেষমেশ একটা কবরের সামনে গেলেন। উনার চেহারা মুবারকে ঘাম দেখা দিল। তিনি অস্থির হয়ে পড়লেন। দুঃচিন্তায় চেহারা কালো হয়ে উঠল। হয়রান পেরেশান হয়ে গেলেন তিনি।
একজন সাহাবী (রাঃ) উনার অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এত পেরেশান কেন? তিনি অস্থির হয়ে বললেন, ‘এই কবরের বাসিন্দার উপর ভয়ানক আযাব হচ্ছে। এমনই শাস্তি যা ভাষায় বলা যায় না। আহা! এই ব্যক্তির কি উপায়?’
বলে তিনি কবরে হাত মুবারক রেখে দোয়া করলেন। কিন্তু চেহারায় প্রশান্তি এলো না। তিনি বললেন, ‘দোয়া কবুল হচ্ছে না। কোন রহস্যময় কারণে। সাংঘাতিক বড় পাপ করেছে সে।’
হুজুর (সাঃ) এর উপর অস্থিরতা বেড়েই চললো। তিনি বললেন, ‘ আমার উম্মতের উপর এমন কঠিন শাস্তি হচ্ছে আর আমি বাড়ী গিয়ে ঘুমাবো? তিনি একজন সাথীকে ডেকে বললেন, ‘যাও, মদীনার বাজারে। সেখানে আওয়াজ দিয়ে ডাকো যাদের আত্নীয়ের কবর এখানে রয়েছে। তারা এলো। তাদেরকে নিজ নিজ আত্নীয়ের কবরে দাঁড়াতে বললেন। সবাই দাড়াঁলো। কিন্তু আশ্চর্য্য! ওই কবরের পাশে কেউ দাড়াঁলো না।
বেদনায় নীল হয়ে গেলেন হুজুর (সাঃ)। অনেক পরে এলো এক বুড়ি। ধীর পায়ে। লাঠিতে ভর দিয়ে। তিনি দাড়াঁলেন সেই কবরের পাশে। হুজুরের পাক (সাঃ) স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। তারপর বৃদ্ধাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এটা কার কবর?’
‘আমার ছেলের।’ বৃদ্ধা বললেন। ‘আপনার ছেলের কবরে ভয়ানক শাস্তি হচ্ছে।’ ‘ইয়া রাসূলূল্লাহ! এটা কি সত্যি?’ ‘সত্যিই ‘। ‘শুনে আমি খুব খূশী হলাম।’ ‘আল্লাহ মাফ করুন! আপনি এ কি বলছেন মা ?’ সে আপনার সন্তান !’ শুনুন তাহলে, হে আল্লাহর রসূল! এই বাচ্চা যখন আমার পেটে তখন তার বাবা মারা যায়। সে পৃথিবীর মুখ দেখল। তার কেউ ছিলো না। আমি নিদারুণ কষ্ট করে তাকে বড় করে তুললাম।
তিল তিল করে। সে বিয়ে কর । স্ত্রীকে পেয়ে সে ভূলে গেল আমাকে। একদিন তার ভালোবাসার বউ কানে কানে কি যেন বলল। ছেলে রাগে অধীর হয়ে মারতে শুরু করল আমাকে। ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেলাম আমি। জ্ঞান হারালাম।
হুশ ফিরলে আমি প্রার্থনা করলাম, প্রভুর দরবারে। দু’হাত তুলে। বললাম, ‘হে আল্লাহ! তাকে কবরে শাস্তি দাও। অনন্ত কাল ধরে। দুনিয়াতে দিওনা। চোখের সামনে ছেলের কষ্ট সহ্য করতে পারব না। ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি এখন এজন্য খুশী যে আমার দোয়া কবূল হয়েছে। ‘
হুজুর (সাঃ) অত্যাচারিতা সরল প্রাণ এই বৃদ্ধার কথা শুনে চোখের পানি চেপে রাখতে পারলেন না। উনার মুক্তার মতো অশ্রু, গাল বেয়ে ফোটায় ফোটায় পড়তে লাগল। খানিকপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, ‘হে বৃদ্ধা মা ! তুমি তোমার ছেলেকে ক্ষমা করো। সে ভয়াবহ শাস্তি পাচ্ছে। ‘
বৃদ্ধা বললেন, ‘হে রাসূলূল্লাহ! অন্য কিছু বলুন। ছেলেকে ক্ষমা করব না আমি।’ নিরুপায় হয়ে হুজুর (সাঃ) আকাশের দিকে মুখ তুললেন। কাতর স্বরে বললেন, ‘হে আল্লাহ! এই বৃদ্ধাকে কবরের শাস্তি দেখাও।’ চোখের পলকে ঘটনা ঘটল।
বৃদ্ধার চোখ বিস্ফোরিত হলো। সে প্রাণ ফাটা চিৎকার করে বেহুশ হয়ে গেল। খানিক পর, জ্ঞান ফিরল বৃদ্ধার। থর থর করে কাপছেন তিনি। তীর খাওয়া কবুতরের মত।
তিনি বললেন, ‘ও খোদা! কবরের আযাব কি এমন ভীষণ! এমন ভয়ানক! ছেলের পুরো শরীর থেকে চামড়া উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। তাকে মুগুর পেটা করা হচ্ছে। হে আল্লাহর রাসূ ! আমি তাকে ক্ষমা করলাম। আপনি দোয়া করুন। সে যেন মুক্তি পায়। ‘
হুজুর (সাঃ) হাত উঠালেন। দোয়া শেষ। উনার চেহারা উজ্জ্বল। প্রকৃতিতে, আকাশে বাতাসে নেমে এল সুমহান সমাহিত পরিবেশ। গভীর প্রশান্তি – দয়াল নবীর চেহারা মুবারকে। চারদিকে শান্তির ছায়া। আমীন। সূত্র: অনলাইন।