জাব্বার করিম : দুনিয়ার ভালো-মন্দ কর্মগুলো আখিরাতে পরিমাপ করা হবে। দুনিয়ার যারা বেশি বেশি নেক আমল করবে। তারা কিয়ামতের কঠিন সময়ে সফলকাম হবে। কিয়ামত দিবসে পরিবার-পরিজন কেউ কারো কোনো উপকারে আসবে না। প্রত্যেকে নিজের হিসাব নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। সেদিন শুধু দুনিয়ার নেক আমলের ওপর ভরসা করতে হবে। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা যারা ঈমান এনেছ, আল্লাহ পাককে ভয় করো, প্রত্যেকের উচিত লক্ষ করা যে, আগামীকালের জন্য সে কি পেশ করতে যাচ্ছে, তোমরা আল্লাহকে ভয় করতে থাকো; অবশ্যই তোমরা যা কিছু করছ, আল্লাহ পাক তার পূর্ণাঙ্গ খবর রাখেন।’ (সূরা হাশর:১৮)। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে কুরত রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল সা: এরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব নেয়া হবে। যদি নামাজ ঠিক থাকে তবে অন্যান্য আমলও সঠিক বলে প্রমাণিত হবে। আর যদি নামাজের হিসাবে গড়মিল হয়, অন্যান্য আমলও ক্রুটিযুক্ত হয়ে যাবে।’ (তিরমিজি-১:২৪৫পৃ.)।
কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তায়ালা নামাজ আদায়কারী ব্যক্তিদের প্রতিদান দেবেন। যারা দুনিয়াতে নামাজ কায়েম করেছে, জাকাত প্রদান করেছে, সেদিন তারা আনন্দ-উল্লাস করতে থাকবে। তাদের জাহান্নামের কোনো ভয় থাকবে না। আর দুনিয়ার বেনামাজিরা, সেদিন হা-হুতাশ করতে থাকবে। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সালাত কায়েম কর এবং জাকাত দাও। আর তোমরা নিজেদের জন্য অগ্রে যে সৎকর্ম প্রেরণ করবে, তা আল্লাহর কাছে পাবে।’ (সূরা বাকারা:১১০)। ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে, সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে দান করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে যা কখনো ধ্বংস হবে না।’ (সূরা ফাতির:২৯)।
পরকালে সাফল্যে লাভের চাবিকাঠি হলো নামাজ আদায় করা। পরকালে নাজাত পেতে হলে, দুনিয়ার জিন্দেগিতে নামাজের প্রতি যতœবান হতে হবে। নামাজি ব্যক্তিরাই জান্নাতের স্থায়ী বাসিন্দা হবেন। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই ওই সব ঈমানদার সফলকাম হয়েছে, যারা তাদের নামাজে খুশু-খুজুর সাথে আদায় করে।’ (সূরা মুমিনুন:১-২)। ‘যারা নিজেদের সালাতের হেফাজত করে, এরাই আল্লাহর জান্নাতে মর্যাদা সহকারে প্রবেশ করবে।’ (সূরা মা’আরিজ :৩৪-৩৫)। ‘যারা তাদের সালাতসমূহের হিফাজতকারী, মূলত: এরাই হবে জান্নাতুল ফেরদাউসের উত্তরাধিকারী এবং সেখানে তারা স্থায়ীভাবে থাকবে।’ (সূরা মুমিনুন: ৯-১১)।
যারা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, তাদের আমলনামায় কোনো গোনাহ থাকবে না। নামাজ বান্দার আমলনামা থেকে গোনাহগুলোকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দেয়। হজরত আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল সা: এরশাদ করেছেন, ‘তোমরা বলত, যদি তোমাদের কারো দরজার সামনে একটি নহর থাকে যাতে সে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে, তবে তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে? সাহাবারা উত্তরে বললেন: না, কোনো ময়লাই অবশিষ্ট থাকবে না। অতঃপর রাসূল সা: বললেন- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দৃষ্টান্ত এমনই। এর বিনিময়ে আল্লাহ পাক নামাজির সব গোনাহ মাফ করে দেন।’ (বোখারি:৫০৩)।
নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে অবহেলা করলে, আখিরাতে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। হজরত নাওফেল ইবনে মুয়াবিয়া রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল সা: এরশাদ করেছেন, ‘যার এক ওয়াক্ত নামাজ ছুটে গেল তার যেন ঘরবাড়ি, পরিবার-পরিজন ও ধন-দৌলত সবকিছু ছিনিয়ে নেয়া হলো।’ (ইবনে হিব্বান-৪:৩৩০ পৃ.)। নামাজের গুরুত্ব এতটাই যে, মুসলমান ও অন্য ধর্মের লোকদের মধ্যে পার্থক্যই হলো নামাজ। হজরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল সা: এরশাদ করেছেন, ‘মানুষের শিরক এবং কুফরের মধ্যে পার্থক্য নামাজ ছেড়ে দেয়া।’ (মুসলিম:২৪৭)। হজরত হানজালা উসাঈদী রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল সা: এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাযথ পাবন্দির সাথে আদায় করে, উত্তমরূপে অজু করে, সময়ের প্রতি খেয়াল রাখে, রুকু-সিজদা ঠিকমতো আদায় করে এবং এভাবে নামাজ আদায়কে নিজের ওপর আল্লাহ তায়ালার হক মনে করে, তবে জাহান্নামের আগুন তার জন্য হারাম করে দেয়া হবে। ( মুসনাদে আহমাদ-৪: ২৬৭পৃ.)। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাসময়ে আদায় করার জন্য আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করুন।
লেখক: প্রবন্ধকার