শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৪:৩১:৩৮

জুমার দিনের ফজিলত

জুমার দিনের ফজিলত

ইসলাম ডেস্ক: বিশ্বনেতা আল্লাহর প্রিয় হাবিব মুহাম্মাদ সা: বলেছেন, ‘আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।’ তাই নবী মুহাম্মদ সা:-এর প্রতিটি কথা, কাজ ও ভাষণ বা খুতবা আমাদের জন্য শিক্ষণীয়। মুহাম্মাদ সা: খুতবায় যে বক্তব্য দিতেন, তা মানুষকে জানানো-শেখানো ও উপদেশ দেয়ার উদ্দেশ্যে ছিল। খুতবা নিঃসন্দেহে বিধিবদ্ধ করা হয়েছে প্রশিক্ষণের জন্য। হ্যাঁ, এমনই ভাষণ প্রিয়নবী মুহাম্মাদ সা: মদিনার মসজিদে দিয়েছিলেন। তাঁর খুতবা থেকে মানুষ পেত শিক্ষা, নিত দীক্ষা। খুতবায়ে মুহাম্মদী গ্রন্থের মতে, রাসূল সা:-এর জীবনে প্রায় ১১ শ’ খুতবা দান করেন। নবীজী সা:-এর খুতবার পদ্ধতি ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ, হৃদয়গ্রাহী, ঈমানদীপ্ত ও অনুসরণীয়। মানবতার মুক্তির দূত নবীকুলের শিরোমণি মুহাম্মাদ সা:-এর ওফাতের পর হজরত আবু বকর রা:, হজরত উমর রা:, হজরত উসমান রা:, হজরত আলী রা: যেভাবে সমাজের নেতৃত্ব দিয়েছেন তথা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন এবং মসজিদে নামাজের ইমামতি করেছেন; তা ছিল সুশৃঙ্খল ও শান্তিময় সমাজের মডেল। তাঁদের সময়কালে ইমামের কথায়ই সমাজ পরিচালিত হতো এবং সমাজে শান্তি বজায় ছিল। জুমার দিনের ফজিলত ও নির্দেশনা প্রসঙ্গে হজরত আবু লুবাবা ইবনে আবুল মুনজির রা: বর্ণনা করেন, আমি বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ সা:কে বলতে শুনেছি- জুমার দিন সপ্তাহের সব দিনের সরদার, আল্লাহ তায়ালার কাছে অন্য সব দিনের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সম্মানিত দিন। এই দিন আল্লাহ তায়ালার কাছে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা অপেক্ষা অধিক মর্যাদাবান। এই দিনে পাঁচটি ঘটনা ঘটেছে। এই দিনে আল্লাহ তায়ালা হজরত আদম আ:কে সৃষ্টি করেছেন। এই দিনেই তাকে জমিনে নামিয়েছেন এবং এই দিনেই তাকে মৃত্যু দিয়েছেন। এই দিনে এমন এক মুহূর্ত আছে, যে মুহূর্তে বান্দা আল্লাহ তায়ালার কাছে যা চাইবে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তাকে তা দেবেন। এই দিনে কেয়ামত সংঘটিত হবে। সেজন্য সব নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতা, আসমান-জমিন, পাহাড়-সমুদ্র, আলো-বাতাস সবাই জুমার দিনকে ভয় করে। হজরত আউস ইবনে সাকাফি রা: বলেন, আমি রাসূল সা:কে বলতে শুনেছি, যে মুসলমান জুমার দিনে উত্তমরূপে গোসল করে অতি প্রত্যুষে মসজিদে হেঁটে যায়, সাওয়ারিতে আরোহণ করে না, ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসে এবং মনোযোগ সহকারে খুতবা শোনে, খুতবার সময় কোনো কথা না বলে; তবে সে জুমার জন্য যত কদম হেঁটে আসে তার প্রতিটি কদমের জন্য সে এক বছর রোজা রাখার সাওয়াব এবং এক বছর রাতে ইবাদত করার সাওয়াব পাবে। জুমা প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন।’ [ইবনে মাজাহ; ১০৯৮]। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘মহান আল্লাহর কাছে জুমার দিনটি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনের মতো শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনটি আল্লাহর কাছে অতি মর্যাদাসম্পন্ন।’ [ইবনে মাজাহ; ১০৮৪]। বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সা: আরো বলেন, হে মুসলমানগণ, জুমার দিনকে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য (সাপ্তাহিক) ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তোমরা এ দিন মিসওয়াক করো, গোসল করো ও সুগন্ধি লাগাও।’ [মুওয়াত্তা, ইবনে মাজাহ, মিশকাত; হাদিস নম্বর-১৩৯৮, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘পরিচ্ছন্নতা অর্জন ও সকাল সকাল মসজিদে গমন’ অনুচ্ছেদ-৪৪]। উমর ইবনুল খাত্তাব রা: থেকে বর্ণিত, এক ইহুদি তাঁকে বলল,‘হে আমিরুল মুমিনিন! আপনাদের কিতাবে একটি আয়াত আছে, যা আপনারা পাঠ করে থাকেন, তা যদি আমাদের ইহুদি জাতির ওপর অবতীর্ণ হতো, তবে অবশ্যই আমরা সেই দিনকে ঈদ হিসেবে পালন করতাম।’ তিনি বললেন, ‘কোন আয়াত?’ সে বলল, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম। তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।’ [ সূরা মায়েদা : ৩ ]। উমর রা: বললেন, ‘এটি যে দিনে এবং যে স্থানে রাসূলুল্লাহ সা:-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছিল তা আমরা জানি; তিনি যেদিন আরাফার ময়দানে গিয়েছিলেন আর সেটা ছিল জুমার দিন।’ [সহি বুখারি; হাদিস নম্বর-৪৩, ৪৪০৭, ৪৬০৬, ৭২৬৮; সহি মুসলিম ৪৩/১, হাদিস নম্বর-৩০১৭]। ১২ই ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/জুবায়ের/রাসেল

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে