ইসলামিক ডেস্ক : পানি ছাড়া যেমন প্রাণ বাঁচে না, তেমনই আল্লাহ তায়ালার যিকির ছাড়া মানবমনের খোরাক সঞ্চয় হয় না। তাই যিকিরের ফযিলত অনেক এই সম্পর্কে মহান আল্লাহ আল্লাহ পবিত্র কেরআনে এরশাদ করেন।
ألاَ بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوْب (سورة رعد
অর্থ:-তোমরা সকলে শুনে জেনে রাখ যে, একমাত্র আল্লাহর যিকির ব্যতীত আত্মার শান্তি আর কিছুতেই নাই। একমাত্র আল্লাহর পবিত্র নামের যিকির জপাতেই আত্মার শান্তি লাভ হয়।
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেছেন:
فَاذْكُرُوْنِيْ أَذْكُرْكُمْ (سورة بقرة
অর্থ: তোমরা আমার যিকির করো (আমাকে স্মরণ রেখো) তা হলে আমিও তোমাদেরকে স্মরণ রাখব।
যারা আল্লাহর আশেক, তারা জানে যে, প্রাণপ্রিয়কে স্মরণ রাখার কত মূল্য! কত স্বাদ! সারা পৃথিবীর সোনা-রূপা, হীরা-জওয়াহেরাত, মণি-মুক্তা, চুনি-পান্নারও সে মূল্য নাই। বেহেশতের হূর-গিলমান, হাওযে কাওসার আর সোনার বাগানেরও সে মূল্য নাই, যা শুধু প্রাণপ্রিয়ের যিকিরের মধ্যে আছে।
তাই আল্লাহ পাক বলেছেন:
وَبَشّرِ الْمُخْبِتِيْنَ الَّذِيْنَ إِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ
অর্থ: যারা নম্রতা ও ভক্তি সহকারে আল্লাহর আদেশ পালন করতে থাকে এবং আল্লাহর নাম শ্রবণ করা মাত্রই যাদের প্রাণ কেপে উঠে তাদেরকে আপনি সুসংবাদ প্রদান করুন।
আল্লাহ তায়ালা আবার বলছেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اذْكُرُوا اللهَ ذِكْرًا كَثِيْرًا وَسَبِّحُوْهُ بُكْرَةً وَأَصِيْلا
অর্থ:-হে মু-মিনগণ! তোমরা আল্লাহর যিকির বেশী করে কর এবং সকাল-বিকাল (দিবা-রাত্র) তার পবিত্রতা ঘোষণা করতে থাক।
এছাড়াও পবিত্র কোরআনে আল্লাহর যিকির সম্পর্কে আনেক আয়াত বিদ্যমান আছে।
এখানে সহজ এগারোটি যিকিরের কথা উল্লেখ করা হলো যেই যিকির গুলো পাঠ করার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তার বান্দাকে পরকালে জান্নাতে স্থান দিবেন।
(১) প্রতিদিন ১০০ বার সুবহান আল্লাহ্ পাঠ করলে ১০০০ সাওয়াব লিখা হয় এবং ১০০০ গুনাহ মাফ করা হয়।[সহীহ মুসলিম-৪/২০৭৩]
(২) ‘আলহামদুলিল্লাহ’ মীযানের পাল্লাকে ভারী করে দেয় এবং সর্বোত্তম দোআ’। [তিরমিযী-৫/৪৬২,ইবনে মাযাহ-২/১২৪৯,হাকিম-১/৫০৩,সহীহ আল জামে’-১/৩৬২]
(৩) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সর্বোত্তম যিকর। [তিরমিযী-৫/৪৬২,ইবনে মাযাহ-২/১২৪৯,হাকিম-১/৫০৩,সহীহ আল জামে’-১/৩৬২]
(৪) ‘সুবহান আল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবর’ এই কালিমাগুলি আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় এবং নবী (সঃ) বলেনঃ পৃথিবীর সমস্ত জিনিসের চইতে আমার নিকট অধিক প্রিয়। [ সহীহ মুসলিম -৩/১৬৮৫, ৪/২০৭২]
(৫) যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী’ প্রতিদিন ১০০ বার পাঠ করবে সমুদ্রের ফেনা পরিমান (সগীরা) গুনাহ থাকলে ও তাকে মাফ করে দেওয়া হবে। [সহীহ আল-বুখারী-৭/১৬৮,সহীহ মুসলিম-৪/২০৭১]
(৬) নবী (সঃ) বলেনঃ ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবি হামদিহী সুবহানাল্লিল আযীম’ এই কালীমাগুলি জিহ্বায় উচ্চারনে সহজ , মীযানের পাল্লায় ভারী ,দয়াময় আল্লাহর নিকট প্রিয় । [সহিহ আল- বুখারী-৭/১৬৮,সহীহ মুসলিম-৪/২০৭২]
(৭) যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহিল আযীমি ওয়াবি হামদিহী’ পাঠ করবে প্রতিবারে তার জন্য জান্নাতে একটি করে (জান্নাতী) খেজুর গাছ রোপন করা হবে । [আত-তিরমিযী-৫/৫১১,আল-হাকীম-১/৫০১, সহীহ আল-জামে’-৫/৫৩১, সহীহ আত-তিরমিজী-৩/১৬০]
(৮) নবী (সঃ) বলেনঃ ‘লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ হচ্ছে জান্নাতের গুপ্তধন সমুহের মধ্যে একটি গুপ্তধন। [ সহীহ আল-বুখারী -১১/২১৩, সহীহ মুসলিম-৪/২০৭৬]
(৯) নবী (সঃ) বলেনঃ ‘সুবহান আল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবর ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ এই কালীমাগুলি হচ্ছে “অবশিষ্ট নেকআ’মল সমুহ” । [ আহমাদ (সহীহ)-৫১৩, মাজমাউজ জাওয়াঈদ-১/২৯৭ ]
(১০) নবী (সঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দুরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তাআ’লা তার প্রতি দশ বার রহমত বরষন করবেন- “আল্লাহুম্মা সাল্লি ’আলা মুহাম্মাদিঁওয়া ’আলা আলি মুহাম্মাদিন্ কামা সাল্লায়তা ’আলা ইব্রাহীমা ওয়া ’আলা ’আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজিদ আল্লাহুম্মা বারিক ’আলা মুহাম্মাদিঁওয়া ’আলা আলি মুহাম্মাদিন্ কামা বারাকতা ’আলা ইব্রাহীমা ওয়া ’আলা ’আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজিদ। এবং
(১১) মহানবী (সঃ) আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার প্রতি সকালে দশবার এবং বিকেলে দশবার দুরুদ পাঠ করবে সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত পাবে ।” – [তাবারানী, মাজময়াউজ জাওয়াঈদ-১০/১২০, সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব-১/২৭৩]
২৯জুলাই, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জই/আআজু