ইসলাম ডেস্ক: মহানবীর মিরাজ বা উর্দ্ধগমন ছিলো মহাবিস্ময়। পৃথিবীর শুরু থেকে কেয়ামত পর্যন্ত যত বিস্ময়জনক ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটবে তার মধ্যে আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ সা.-এর মেরাজের ঘটনা অন্যতম মহাবিস্ময়। পবিত্র কুরআন মাজিদের অসংখ্য আয়াতে কারিমায় আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন আশ্চর্যজনক কাহিনী বর্ণনা করেছেন, কিন্তু কোথাও ‘সুবহানা’ শব্দ উল্লেখ করেননি।
সুবহানা শব্দটি বিস্ময়চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার হয়। মূলতঃ কোন কাজকর্ম বা বস্তু থেকে যখন আমরা আশ্চর্যবোধ বা বিস্ময় প্রকাশ করি তখনই আমরা ‘সুবহানাল্লাহ’ বলি। মিরাজের ঘটনা যেহেতু এক মহাবিস্ময়কর ঘটনা, সেজন্য আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এর বর্ণনা দিয়েছেন ‘সুবহানা’ শব্দ দ্বারা।
মিরাজ নিয়ে যত গবেষণা করা যাবে ততই বিস্মিত হতে হয়। আরবরাও বিস্মিত হয়েছিল রাসূল (সা.)-এর কাছ থেকে মিরাজের বর্ণনা শুনে। কিভাবে রাসূল (সা.) এক রাতের ভিতরে মক্কা থেকে ১২৩২ কিলোমিটার (৭৬৫ মাইল) দূরের বায়তুল মুক্কাদাস সফর করে আবার মক্কায় ফিরে আসলেন! যে পথ অতিক্রম করতে তৎকালীন প্রায় ৪০ দিনের প্রয়োজন ছিল।
আর বর্তমান যুগে জ্যোতির্বিজ্ঞান (Astronomy) ও মহাজাগতিক (Cosmology) বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় মানুষ মহাকাশ সম্পর্কে যথাযত জ্ঞান লাভ করে মিরাজ নিয়ে গবেষণা করে বিস্মিত হচ্ছে এবং একে আল্লাহ পাকের মহা কুদরত বলে মেনে নিচ্ছে।
বিজ্ঞানীদের কাছে আরো বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, এত অল্প সময়ে কিভাবে নবী করীম (সা.) মধ্যাকর্ষণ শক্তি (Gravitation) ভেদ করে সূর্য (Sun), যুগ্ম নক্ষত্র (Binary Star), গুচ্ছ নক্ষত্র (Cluster), ধূমকেতু (Comet), নক্ষত্র পুঞ্জ (Galaxy) ও অন্ধকার গহ্বর (Blackhole) ইত্যাদি পার হয়ে সপ্তাকাশে পৌঁছেছেন!
রাসূলুল্লাহ (সা.) মিরাজে এত অল্প সময়ে যে পথ সফর করেছেন, আধুনিককালে সে পথ অতিক্রমে কত সময় লাগবে এর উত্তরে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের হিসেব মতে, পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব ০৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল, আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে ১,৮৬,০০০ (এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার) মাইল গতিবেগে পৃথিবী থেকে ধাবমান হলে শুধু সূর্যের দূরত্ব পাড়ি দিতে সময় লাগবে ০৮ মিনিট।
আর মহাকাশে সূর্যের চেয়ে শতকোটি গুণ বড় লক্ষ লক্ষ নক্ষত্র রয়েছে যা দূরত্বের কারণে খালি চোখে দেখা যায় না। আবার এমন কিছু নক্ষত্রও রয়েছে যেগুলো এতদূরে অবস্থিত, যা থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময় হতে আজ পর্যন্ত পূর্বোল্লিখিত গতিতে পৃথিবীতে আলো আসছে কিন্তু অদ্যাবধি পর্যন্ত এসে পৌঁছেনি এমনকি ভবিষতেও পৌঁছবে কিনা সন্দেহ আছে।
কতদূর তাদের অবস্থান ভাবতেও অবাক লাগে। এ জাতীয় বহু নক্ষত্ররাজির দ্বারা আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আকাশসমূহকে সৌন্দর্যমন্ডিত করেছেন। আর এসব তারকারাজির বহু উপরে প্রথম আকাশের অবস্থান। এক আকাশ থেকে আরেক আকাশের রাস্তা ৫০০ শত আলোক বৎসরের রাস্তা।
এতো বিশাল রাস্তা পাড়ি দিয়ে বিশ্বনবী (সা.) সিদরাতুল মুনতাহার উপরে আল্লাহর দিদার লাভ করে আবার বায়তুল মুক্কাদাস হয়ে মক্কায় ফিরে আসলেন, বিষয়টি সত্যিই মহাবিস্ময়! তথ্যসূত্র : মিরাজ ও আধুনিক বিজ্ঞান