সুতরাং পিতামাতা ও জাহান্নাম এই ত্রিস্বত্তার স্বভাব ও প্রকৃতির সম্পূর্ণ প্রভাবই ইবলীসের চরিত্রে নিহিত ছিল। ইবলীসের পিতার সারবুক নামেসর্ববিদ্যায় পারদর্শী একজন বন্ধ ছিল। খবিসের পুত্র ইবলীসেরশিক্ষা-দীক্ষার ভার তার পিতা উক্ত বন্ধু সারবুকের হাতে অর্পণকরল। ইবলীস ছিল অতিশয় মেধাবী ও স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন। সুতরাং কোন পাঠই তাকে একাধিকবার বলে দেয়ার প্রয়োজন হত না। সে একবার যা শুনত তাই সে চিরদিনের জন্য মনে রাখত। ফলে সারবুকের মনে ইবলীস সম্পর্কে অত্যন্ত উচ্চ ধারণা জন্মেছিল।
তাকে পড়াতে শুরু করে সে তার বন্ধু খবিসকে লক্ষ্য করে প্রায়ই বলত, বন্ধু! তোমার পুত্রের ভেতরে যে লক্ষণসমূহ দেখছি তাতে মনে হচ্ছে যে, সে ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই এক মহা বিখ্যাত ব্যক্তিতে পরিণত হবে। আমার শিক্ষকতা জীবনের ছাব্বিশ হাজার বছরের মধ্যে তোমার পূত্র ইবলীসের মত এত তীক্ষ্ম স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন ও বুদ্ধিমান ছাত্র আমার হস্তে আর দ্বিতীয়টি পড়েনি। কিন্তু দুঃখের বিষয় তোমার পূত্রটি অত্যধিক বেয়াদব, অহংকারী এবং ভীষণ একগুয়ে। এটা তার ভবিশ্যতেরজন্য সুখকর নয়। তবে সে যাই হউক না কেন, ইবলীসের ভাগ্য সুপ্রসন্ন।
উল্লেখ্য যে, ফেরেশতারা জিনকুলকে ধ্বংস করার সময় বালক ইবলীসকে স্নেহবশতঃ হত্যা না করলে উল্টা তাকে লালন-পালন করার জন্য আল্লাহর নিকট হতে অনুমতি নিয়ে আসমানে নিয়ে যায়। ফেরেশতারা তাকে প্রথম আসমানে নিয়ে নিজেদের প্রকৃতি ও স্বভাব অনুরূপ আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীর নিয়ম-কানুন শিক্ষাদান করল। ইবলীস স্বীয় প্রতিভাবলে অতি অল্প আয়েসে ও স্বল্পসময়ে শিক্ষালাভ করে দীর্ঘ এক হাজার বছর প্রথম আসমানে আল্লাহর এবাদাত করল। তথাকার ফেরেশতারা তার ইবাদাতে একাগ্রতা ও নিষ্ঠা দেখেঅবাক হয়ে বলতে লাগল যে, আমরা ফেরেশতা জাতি কেবল আল্লাহর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি হয়েছি। একমাত্র ইবাদতই আমাদের শিক্ষা-দীক্ষা ও ধ্যান ধারণা সবকিছু। ইবাদতই আমাদের একমাত্র কাজ। তবুকি আশ্চর্য!
ইবলীস আমাদের কাছে ইবাদতের কায়দা কানুন শিখে সে যে ইবাদত করছে, তাতে তার ইবাদতের তুলনারয় আমরা নিজেদেরকে তো মোটেই ইবাদতকারী বলতে পারি না। আমাদের ফেরেশতাকূলের মধ্যে তো কাকেও এমন ধারায় ও এমন নিবিড় ভাবে কখনোই ইবাদত করতে দেখি নি। মনে হচ্ছে এখন এর কাছেই আমাদের অনেক কিছু শিখবার ও বুঝবার আছে। ফেরেশতারা তার ইবাদত বন্দেগি দেখে এত মুগ্ধ হল যে, তারা ইবলীসের ‘খাশে’ নামকরণ করল।
ইবলী সপ্রথম আসমানে একহাজার বছরইবাদতের পর দ্বিতীয় আসমানের ফেরেশতারা অতি আদর করে তাকে নিজেদের কাছে নিয়ে গেল। ইবলীস দ্বিতীয় আসমানে পৌঁছেও পূর্বাপেক্ষা আরও বেশী পরিমাণে ইবাদত মশগুল হল। এ আসমানের ফেরেশতারা তার ইবাদাত দেখে তাকে ধন্য ধন্য করতে লাগল এবং শতমুখে তার প্রশংসা করতে লাগল, এবং তারা ইবলীসের নামকরণ করল ‘আবেদ’। দ্বিতীয় আসমানে এক হাজার বছর অবস্থানের পর তৃতীয় আসমানের ফেরেশতারা ইবলীসকে তৃতীয় আসমানে নিয়ে গেল। তৃতীয় আসমানে এসে সে আরও বেশী পরিমাণে পরম একাগ্রতা ও মনোযোগের সাথে আল্লাহর ইবাদত শুরু করে দিল। সে এখানেও এক হাজার বছর ইবাদত করল। এখানের ফেরেশতারা তার ইবাদতে মুগ্ধ হয়ে তার নাম রাখল ‘অলী’।
তারপর চতুর্থ আসমানের ফেরেশতারা আল্লাহর অনুমতি লাভ করে ইবলীসকে চতুর্থ আসমানে নিয়েগেল। ইবলীস এখানেও অত্যন্ত একাগ্রতার সাথে দীর্ঘ এক হাজার বছর আল্লাহর ইবাদতে মাশগুল রইল।তথাকার ফেরেশতারা তার ইবাদতে খুশী হয়ে নাম রাখল “ছালেহ”। এইভাবে অবশিষ্ট সকল আসমানে উন্নীত হয়ে প্রত্যেক আসমানে এক হাজার বছর করে ইবাদত করল। তখন পুরো ফেরেশতা জগতই তার প্রশংসায়মুখরিত হয়ে গেল। সকল ফেরেশতার সন্তুষ্টির ভেতর যে সপ্তম আসমানে উপনীত হয়ে পরম সুখে শান্তিতে বসবাস শুরু করল।
ইবলীস ফেরেশতাদের নিকট থেকেই আদব-কায়দা এবং ইবাদতের রীতিনীতিপ্রশিক্ষণ নিয়েছিল। ইবলীস অত্যন্ত মেধাবী হওয়ায় যা শিক্ষালাভ করত তার কোন কিছুই আর ভুলত না। সুতরাং অতি অল্প সময়ে ফেরেশতাদের নিকট হতে সে সর্ববিষয়ে এত বেশী অভিজ্ঞতা অর্জন করল যে, এখন তার ওস্তাদ ফেরেশতাদের তুলনায় তার জ্ঞানই বেশী হয়ে গেল। তদ্রুপ ফেরেশতাদের ইবাদতের পরিমান অপেক্ষা তার ইবাদতের পরিমাণ অনেক বেশী বৃদ্ধি পেল। সাত আসমান ও যমীনের এমন একটি স্থান বাকি থাকল না যেখানে ইবলীসের সিজদাহ পড়েনি। ফেরেশতারা ইবলীসের ইবাদত বন্দেগী দেখে উপলব্ধি করতে লাগল যে, ইবলীসকে তারা শিক্ষা দান করেছে, এখন সেই ইবলীসের কাছেই তাদের অনেক কিছু শিখার আছে। তাই তারা সকলে আল্লাহর দরবারে আবেদন করল, হে মাবুদ! তুমি তোমার প্রিয় ইবলীসকে যদি আরশে মুআল্লার কাছেউঠিয়ে আন তবে আমরা তার কাছ থেকে অনেক মূল্যবান উপদেশ শুনে অনেক কিছু শিখতে পারতাম। কেননা, সে আমাদের অপেক্ষা অনেক বেশী জ্ঞানঅর্জন করেছে।
মহান আল্লাহ পাক ফেরেশতাদের এ আবেদন মঞ্জুর করে ইবলীসকে আরশে মুআল্লার নিকট নিয়ে আসলেন। আরশেমুআল্লার কাছেই রয়েছে ইয়াকুত নির্মিত একটি সুউচ্চ মিম্বর, ইবলীস উক্ত মিম্বরে আল্লাহর ইবাদতে রত হল। স্বীয় ইবাদতের অবসর সময়ে সে ফেরেশতাদেরকে ওয়াজনসিহতও করতে লাগল। ফেরেশতারা তার ওয়াজ ও অমূল্য উপদেশাবলী শুনে মুগ্ধ হয়ে সকলেই তার প্রশংসা করতে লাগল। শেষ পর্যন্তসে মালাইকাহ ফেরেশতার শিক্ষক নামে পরিচিত হয়ে গেল।
ইবলীসের দুনিয়ায় আগমন:
আল্লাহর আদেশে ফেরেশতারা শেষবার জিনদেরকে হত্যা করার পরেও পাহাড়-পর্বত ও বনে-জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে কিছু সংখ্যক জিন প্রাণরক্ষা করে। ক্রমে তাদের বংশ বৃদ্ধি পেয়ে আবার জিনদের দিয়ে জগত পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাদেরকে হিদায়েত করার জন্য পয়গাম্বর বা আল্লাহর দূত ছিল না। ফলে জিন জাতি ভীষন পাপাচারী হয়ে উঠেছিল। আল্লাহ তা’আলা ইবলীসকে আদেশ করলেন, হে ইবলীস! তোমার ইবাদত-বন্দেগী ও আমার প্রতি তোমার আনুগত্যে আমি তোমার প্রতি অন্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছি। এবার তোমার প্রতি আমার নির্দেশ হল তুমি দুনিয়াতে গিয়ে তোমার স্বজাতীয় জিনদেরকে সৎপথে প্রদর্শন কর।
মহান আল্লাহর এ নির্দেশ শুনে ইবলীস বলল, হে মাবুদ! আপনার নির্দেশ আমি অবশ্যই পালন করব। তবে আমার একটি আরজ হল আপনি আমাকেএমন ক্ষমাতা দান করুন, যেন সারাদিন দুনিয়াতে জিনদেরকে হিদায়েত করে সন্ধ্যায় আবার আমি এখানে ফিরে এসে সরারাত আপনার ইবাদত ও ফেরেশতাদেরকে নসিহত করতে পারি। আল্লাহ পাক ইবলীসের এই আবেদন কবূল করলেন। তখন ইবলীস অত্যন্ত আনন্দ চিত্তে দুনিয়ায় নেমে আসল এবং জিনদেরকে হিদায়েতের কাজে আত্মনিয়োগ করল। কিন্তু একাধারে বহুদিন পর্যন্ত সে আপ্রাণ চেষ্টা ও পরিশ্রম করা সত্বেও সামান্য কিছু সংখ্যক জিন ব্যতীতপ্রায় সকলেই ইবলীসের বিরুদ্ধাচরণ করতে লাগল। তখন ইবলীস আবার আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করল হে মাবুদ! আমাকে এমন ক্ষমতা দিয়ে দিন যাতে এই অবাধ্যচারী জিনদেরকে আমি সমূলে ধ্বংস করতে পারি।
আল্লাহ তা’আলা ইবলীসের আবেদন শুনে জিনদেরকে ধ্বংস করার জন্য আসমান থেকে অগণিত ফেরেশতা দুনিয়ায় প্রেরণ করলেন, ফেরেশতাদের সঙ্গে ইবলীসের অনুগত বহু জিনও যোগদান করল। ফেরেশতা ও ইবলীসের বাধ্যগত জিনদের আক্রমণে কিছু সংখ্যক পথভ্রষ্ট জিন সৎপথ অবলম্বন করে প্রাণ রক্ষা করল। বাকি সমস্ত পাপী জিন প্রাণ হারল। ইবলীস দুনিয়ার কার্য থেকে অবসর নিয়ে পুনরায় একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হল। আল্লাহর দরবারে তার কৃত সিজদাহর সংখ্যা যে কত ছিল, তা কারও পক্ষে হিসাব করা সম্ভব নয়। আসমান-যমীনে ও আরশে মুআল্লার নিকটে এমন কোনস্থান অবশিষ্ট ছিল না, যেখানে ইবলীস অসংখ্য সিজদাহ দেয়নি।
ইবলীসের লাওহে মাহফুজ দর্শন:
ইবলীস আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা জানাল হে প্রভু! তোমারই অসীম অনুগ্রহে আমি অতি সামান্য স্তর থেকে সসম্মানে অতিউচ্চস্তরে পৌঁছেছি। তোমারই অসীম অনুগ্রহে আমি তোমার নৈকট্যলাভ করতে সমর্থ হয়েছি। এখন আমার মনের একান্ত বাসনা হল তোমার পবিত্র লাওহে মাহফুজ দর্শ করে আমার জীবন ধন্য ও সার্থক করি। তুমি অনুগ্রহ করে আমার এই আকাঙ্খা পূর্ণ করা। পরম দয়ালু আল্লাহ তা’আলা ইবলীসের প্রার্থনা কবূল করে মিকাঈল ফেরেশতাকে নির্দেশ দিলেনঃ ইবলীসকে পবিত্র লাওহে মাহফুজের একান্ত নিকটে নিয়ে দেখিয়ে আনার জন্যে।
আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী হযরত মিকাঈল (আঃ) ইবলীসকে লাওহে মাহফুজের নিকটে নিয়ে গেল। ইবলীসসেখানে পৌঁছে এক দৃষ্টিতে লাওহেমাহফুজের দিকে তাকিয়ে অদৃষ্টলিপি পাঠ করতে লাগল। হঠাৎএক স্থানে তার দৃষ্টি পড়ল, সেখানে লিখিত রয়েছে- আল্লাহর একবান্দা ছয়লক্ষ বছর পর্যন্ত তার মাবুদের ইবাদত করবে। কিন্তুঅবশেষে আল্লাহর একটি আদেশ অমান্য করে সে জান্নাত থেকে বিতাড়িত হবে। ঐ বান্দা আসমান ও যমীনে মালউন বা অভিশপ্ত নামে পরিচিত হবে। ইবলীস এ লিপি পাঠের পর আপনা হতে কেঁদে ফেলল এবং সিজদায় পতিত হল এবং এ সিজদায় সে দীর্ঘ ছয় হাজার বছর অতিবাহিত করল। ছয় হাজার বছর পর মাথা তুলে, দেখতে পেল তার সিজদাহর জায়গায় লিখিত রয়েছে “লা’আনাতুল্লা-হি ‘আলা-ইবলীস’ অর্থাৎ ইবলীসের উপরেআল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হউক।
ইবলীস আরজ করল, হে আমার রব! ইবলীসকে? তাকে দেখিয়ে দিন। আমি তাকে যথোচিত শিক্ষা দান করি। জবাবে আল্লাহ তা’আলা ইবলীসকে বললেন, অচিরেই তুমি তাকে দেখতে পাবে। এ কথা শুনে ইবলীস সেখানে দাঁড়িয়ে একহাজার বছর পর্যন্ত পাঠ করল,”লা আনাতুল্লা-হি ‘আলা ইবলীস’ ইবলীসের উপর আল্লাহর লা’নত বর্ষিত হউক। এখানে উল্লেখ্য করাপ্রয়োজন যে, তখনও ইবলীস এ নামে পরিচিত হয়নি। আর তার এ কথা তখনও জানা ছিল না যে, এক সময় তারই নাম ইবলীস হবে। তখন আল্লাহ তা’আলা ইবলীসকে বললেন, ওহে! বলত আমার যে বান্দাহ আমার অশেষ অনুগ্রহ লাভ করেও আমার হুকুম অমান্য করবে তার কেমন শাস্তি হওয়া উচিত? জবাবে ইবলীস বলল, হে আমার রব! এরূপ অকৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপর আপনার কঠিন শাস্তি ও অভিশাপ বর্ষিত হওয়া উচিত। আল্লাহ তা’আলা বললেন, তোমার এ মন্তব্যটা এক টুকরা তখতিতে লিখেতোমার নিকটেই রেখে দাও, পরে তা কাজে আসতে পারে। এক টুকরা তখতিতে লিখে রেখে দিল ইবলীস তখনই।
ইবলীসের মনে কুমতলব ও অহঙ্কারেরসূত্রপাত:
উল্লেখিত ঘটনার কিছুদিন পরে হঠাৎ একদিন ইবলীস মনে মনে ভাবল এখন তো ফেরেশতা জগতে ও জিনের রাজ্যে এমন কোন ফেরেশতা বা জিন নেই যে আমার কোন নির্দেশ অমান্য করে। কেননা, আসমান যমীন বা জিন ও ফেরেশতাকুলের মাঝে আমার প্রভাব এখন অতুলনীয়। আমার প্রভাব প্রতিপত্তি ও ক্ষমাতার সাথে মোকাবেলা করার মত এখন আর কেউ নেই। এমতাবস্থায় যদি কোন কারণবশতঃ আল্লাহ তা’আলা নিজের দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণ করেন কিংবা স্বেচ্ছায় ঘোষণা করেন যে, আমি এ সৃষ্টি জগত পরিচালনার দায়িত্ব হতে অবসর গ্রহণ করছি। অতএব এখন তোমাদের মধ্য হতে যোগ্যতম ব্যক্তি আমার সৃষ্টজগতের পরিচালনার ভার গ্রহণ কর। তা হলে নিশ্চয়ই একমাত্র আমিই এ পদের সুযোগ্যতম ব্যক্তি হিসেবে এ দায়িত্ব গ্রহণকরে সুষ্ঠুরূপে পালন করতে পারি। মূলতঃ এখন আর আমি কোন দিক দিয়েই আল্লাহ তা’আলা অপেক্ষা হীনবল ও কম ক্ষমতাবান নই। যাবতীয় ফেরেশতা ও জিনদের ওপর এখন আমার যে রূপ প্রভাব, তাতে আল্লাহ তা’আলার সাথে আমার কোন ব্যাপার নিয়ে বিরোধে অবশ্যই তারা আমার পক্ষাবলম্বন করবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
লাওহে মাহফুজ দর্শনে ফেরেশতারা:
এর কিছুদিন পরেই একদা ফেরেশতারালাওহে মাহফুজে লিখিত দেখতে পান যে, অচিরেই আমার জনৈক বান্দাহর ওপরে চিরদিনের জন্য আমার লা’নত বর্ষিত হবে। এ লেখা পড়ে ফেরেশতারা ভয়ে অস্থির হয়ে পড়ল। তারা ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগল। তারা সঙ্কিত হয়ে পড়ল। হায়! না জানি তাদের মধ্যেই কোন হতভাগ্য বান্দাহর উপরে এ দুর্ভাগ্য নেমেআসবে। ফেরেশতারা এ দুশ্চিন্তায় কেঁদে কেঁদে হয়রান পেরেশান হয়ে সকলে মিলে তাদের ওস্তাদ ইবলীসেরনিকট উপস্থিত হল। ইবলীস এর কারণ জানতে চাইলে ফেরেশতারা বলল ওস্তাদ! ঐ যে পড়ে দেখুন; লওহে মাহফুপের এ লেখা পড়ে আমাদের সকলেরই মনে দারুন আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। আপনি আমাদের জন্য দোয়া করুণ যাতে আমরা আল্লাহর লা’নত থেকে রক্ষা পেতে পারি।
ইবলীস ফেরেশতাদের মিনতিতে তাচ্ছিল্যের সাথে মুচকী হেসে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করল, হে মাবুদ! তুমি ফেরেশতাদের কারো ওপর লা’নত দিও না। আল্লাহ তা’আলা ইবলীসের ঐ প্রার্থনা কবূল করলেন। ফেরেশতারা আল্লাহর সেই নির্ধারিত গযব থেকে রক্ষা পেল। কিন্তু ইবলীস সমগ্র ফেরেশতাদের জন্য দোয়া করল বটে কিন্তু অহংকার বশতঃ নিজের জন্য দোয়া করতে ভুলে গেল। এর কিছু দিন পরও একদিন ইবলীস আরশে মুআল্লার একখানা তখতির উপরে উজ্জ্বল নূরের হরফে ‘আউ’যুবিল্লা’হি মিশাশ শাইতোয়া-নির রাজীম-‘বিতাড়িত শয়তান হলে আল্লাহ তা’আলার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি’ লিখিত দেখতে পেল। এ লেখা পাঠ করে ইবলীস অত্যন্ত বিস্মিত হয়ে আল্লাহর নিকট জিজ্ঞেসা করল, হে মাবুদ! কে সেই দুষ্ট পাপিষ্ঠ শয়তান যাহার নিকট হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য তোমার কাছে প্রার্থনা করার কথা লিখিত রয়েছে? আল্লাহ তা’আলা জবাব দিলেন, তুমি শীঘ্রই তাকে চিনতে পারবে।’
১০আগস্ট, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জই/আআজু