সাইদুর রহমান: হাদীসে লাইলাতুল বরাতকে লাইলাতুন নিসফ মিন শা’বান বলা হয়েছে। বাংলায় শবে বরাত হিসেবে পরিচিত। এ রাতকে কেন্দ্র করে একদল নানা রকম নাজায়েজ কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকেন। অনেকেই এই রাতের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করেন। শবে বরাতের অস্তিত্ব আছে কি না এ সম্পর্কে সহিহ হাদিস নিন্মে উল্লেখ করা হলো,
-হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রাঃ)থেকে বর্ণিত,রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন- আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে(শবে বরাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন।এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে মাফ করে দেন। -সহীহ ইবনে হিব্বান ১২/৪৮১;আত-তারগীব ওয়াত- তারহীবে ২/১৩২
আয়েশা সিদ্দিকা রা. থেকে বর্নিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন অর্থাৎ রহমতে খাছনাযিল করেন। অতঃপর তিনি বণী কালবের মেষের গায়ে যত পশম রয়েছে তার চেয়ে বেশী সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন”। সুনানে তিরমিযি ২/১২১,১২২; মুসনাদে আহমাদ ৬/২৩৮ অতএব এ রাতের ফযিলত ও মর্যাদা কোন ভাবেই অস্বিকার করা যাবে না
এ রাতে নির্ধারিত পরিমান বা নির্ধারিত পন্থায় কোন আমল বর্ণিত নেই। এবং তাকে উপলক্ষ করে হালুয়া রুটি তৈরি করা আলোকসজ্জা করা আতশবাজি করা ইত্যাদি সম্পূর্ন নাজায়েজ ও বাড়াবাড়ি।
এই রাতে কিছু করনীয় ও বর্জনীয়
এই রাতে করনীয়
১.এই রাতে আল্লাহর রাসুল অনেক দীর্ঘ নামাজ পড়তেন। তাই নামায পড়া। তবে নির্ধারিত পরিমান বা পদ্ধতি জরুরী মনে না করা। ২ পরের দিন রোজা রাখা। কেননা রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,অর্থাৎ যখন অর্ধ শাবানের আসে- তোমরা সেই রাতে ইবাদত বন্দেগীতে কাটাও এবং পরের দিন রোজা রাখো। তাই পরদিন রোজা রাখা। বিঃদ্রঃ শবে বরাতের রোজা একটি।
৩.এই রাতে পুরুষদের জন্য কবরস্থানে যাওয়া এবং তাদের মৃত আত্মীয় স্বজনদের জন্য ইসালে সাওয়াব করা মুস্তাহাব। কেননা রাসূল সা. বরাতের রাত্রে কবরস্থানে গিয়েছেন।
এই সম্পর্কে মুফতি শফি সাহেব অত্যন্ত চমৎকার অভিমত ব্যাক্ত করেছেন। তিনি বলেন রাসুল (সা.) যেহেতু জীবনে একবার মাত্র শবে বরাতের রাত্রে কবরস্থানে গিয়েছেন,কাজেই জীবনে একবার এই রাতে কবরস্থানে গেলেই মুস্তাহাব আদায় হয়ে যাবে।
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হল কোন ভাবেই যেন বিদআতি কোন কাজ না হয়ে যায়।
৪. এই রাতে খুব দোয়া করা। কেননা আল্লাহর রাসুল বলেছেনঃ শাবানের ১৫ তারিখ রাতে আল্লাহর পক্ষ হতে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করেন,- আছে কি কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী,যাকে আমি ক্ষমা করবো। এমনিভাবে সকল বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়।
৫.এই রাতে নির্দিষ্ট কোন নামাজ নেই। যত ইচ্ছা নফল নামাজ পড়া যাবে। তবে যাদের কাজা নামাজ বাকি আছে তাদের জন্য উত্তম হবে কাজা নামাজ গুলো আদায় করে নেয়া। কারন হাশরের মাঠে নফলের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবেনা,ফরজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।
এই রাতের বর্জনীয় আমল সমুহ, এই রাতে সম্মিলিত না হয়ে একাকী আমল করা উত্তম। কারন সম্মিলিত হওয়ার ক্ষেত্রে আমলের চাইতে ফেতনাটাই হওয়ার আশংকা বেশি।
২. আতশবাজি করা যাবেনা
৩.হালুয়া রুটি বিতরন কারা বা নিজ ঘরে তৈরি করা যাবেনা। কারন এতে অহেতুক সময় নষ্ট হয়, এবং বর্তমানে এটা একটা বড় ধরনের ফেতনার আকার ধারন করেছে।
৪.আলোকসজ্জা করা যাবেনা।
৫.মাইকে কুরআন তেলাওয়াত বা হামদ নাত পরিবেশন করে অন্যের আমলে ব্যাঘাত ঘটানো যাবেনা।
৬.কবরস্থানে ভিড় করা বা মেলা বসানো যাবেনা।
সূত্র: আমাদেরসময়.কম