ইসলাম ডেস্ক : উইলিয়াম হেনরি কুইলিয়াম ছিলেন একজন আইনজীবী। ১৮৮৭ সালে মরক্কো সফরের সময় যাত্রা বিরতিতে মরক্কোর কয়েকজনকে নামাজ পড়তে দেখে ইসলামের প্রতি আগ্রহী হন তিনি।
"জাহাজটি দুলছিল, প্রবল বাতাস বইছিল, কিন্তু তারা তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ করছিল না। আমি তাদের এভাবে নামাজ পড়তে দেখে ভীষণ অবাক হই।"
"তাদের চেহারায় যে প্রশান্তির ছাপ ছিল তা স্রষ্টার প্রতি তাদের অটুট বিশ্বাস আর আনুগত্যের প্রমাণ", কুইলিয়াম বলছিলেন সেদিনটির কথা।
সেসময় মরক্কোতে কিছুদিন ছিলেন কুইলিয়ান। তিনি ওই সময় ইসলাম সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেন। এরপর ৩১ বছর বয়সী কুইলিয়াম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর নাম পরিবর্তন করে আবদুল্লাহ রাখেন কুইলিয়াম
তিনি বলেন, "আমার নিজের বিশ্বাসের সঙ্গে ইসলামের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। বরং অনেক মিল রয়েছে। তাই ইসলাম গ্রহণ করা আমার কাছে খুবই যুক্তিসংগত ব্যাপার মনে হয়েছে।" ইসলামে নাম পরিবর্তনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবু তিনি নিজের নাম বদলে 'আবদুল্লাহ' নাম গ্রহণ করেন। ১৮৮৭ সালে ইংল্যান্ড ফিরে গিয়ে তিনি ধর্মপ্রচার শুরু করেন।
বলা হয়ে থাকে, পুরো ইংল্যান্ডে প্রায় ৬০০ জনকে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছিলেন। ঐ বছরই তিনি লিভারপুলে ব্রিটেনের প্রথম মসজিদ স্থাপন করেন। লিভারপুলকে তখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় প্রধান শহর মনে করা হত।
ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে কুইলিয়াম একটি ছোট পুস্তিকা প্রকাশ করেন। সেটি ১৩টি ভাষায় অনূদিত হয়েছিল। রানী ভিক্টোরিয়া তার লেখা এ পুস্তিকা সংগ্রহ করেছিলেন। বলে রাখা ভালো যে, তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে যত মুসলমান ছিল, তার চেয়েও বেশি সংখ্যক মুসলমানদের শাসক ছিলেন রানী ভিক্টোরিয়া।
রানী নিজের পরিবারের সদস্যদের জন্য আরো ছয় কপি বই অর্ডার করেছিলেন। তবে তার সমাজ এই আগ্রহ ভালোভাবে নেয়নি। ১৮৯৪ সালে, রানীর অনুমতি নিয়ে অটোমান সুলতান কুইলিয়ামকে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের 'শেখ-আল-ইসলাম' বা 'মুসলমানদের নেতা' খেতাব দেন। এই স্বীকৃতির পরেও, লিভারপুল শহরের ধর্মান্তরিত মুসলমানদেরকে নানা লাঞ্ছনা, গঞ্জনা সইতে হতো। তাদের দিকে ইট-পাথর, ঘোড়ার মলসহ নানা আবর্জনা ছুঁড়ে মারার মত ঘটনাও ঘটেছে।
কুইলিয়াম বিশ্বাস করতেন আক্রমণকারীদের ব্রেইনওয়াশ করা হয়েছে। তাদেরকে বোঝানো হয়েছে যে মুসলমানরা খারাপ লোক। তিনি স্থানীয় লোকজনের কাছে বেশ পরিচিত ছিলেন। কেননা তিনি সুবিধাবঞ্চিতদের নিয়ে কাজ করতেন। বিশেষ করে ট্রেড ইউনিয়ন ও বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার নিয়ে তিনি বেশ সোচ্চার ছিলেন।
এক মহিলাকে বিবাহ বিচ্ছেদে সাহায্য করতে গিয়ে তার ওকালতি পেশা হুমকির মুখে পড়ে। ওই মহিলার কুখ্যাত দুশ্চরিত্র স্বামীকে হাতেনাতে ধরার জন্য ফাঁদও পেতেছিলেন তিনি। তখন ইংল্যান্ডে আইনজীবীদের ক্ষেত্রে এটা খুব সাধারণ ঘটনা ছিল। কিন্তু ওই কৌশল ব্যর্থ হয়, কুইলিয়াম নিজে উল্টো ফেঁসে যান।
মুসলমান সম্প্রদায়ের ওপর এ ঘটনার বেশ প্রভাব পড়েছিল। বিতর্ক এড়াতে তিনি ১৯০৮ সালে লিভারপুল ত্যাগ করে হেনরি ডি লিওনে চলে যান। তবে সেখানেও অনেকেই তাকে চিনতেন বলে দাবি করেছেন কুইলিয়ামকে নিয়ে রচিত বইয়ের লেখক প্রফ রন গিভস। তার ‘সুনাম নষ্ট হওয়ার’ পরেও তিনি ওকিন শহরে দেশটির দ্বিতীয় পুরাতন মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ওকিনে ১৮৮৯ সালে মসজিদটি তৈরি হয়েছিল। ১৯৩২ সালে কুইলিয়ামের মৃত্যু হয়। লিভারপুল মসজিদে এখনো তার নাম খোদাই করা আছে।