ইসলাম ডেস্ক: নরডিক বংশোদ্ভূত মার্কিন র্যাপসংগীত শিল্পী ক্রিস্টিন নিকোলি রিচি ১৯৮৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন খ্যাতির শীর্ষদেশে। গর্ব করে নিজেকে ‘ফার্স্ট লেডি অব নরডিক’ বলতেন রিচি। একসময়ের তুমুল জনপ্রিয় এই শিল্পী ২০১৪ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি আবিদাহ রিচি নাম ধারণ করেন এবং তাঁর জীবনযাপনে আসে আমূল পরিবর্তন।
পেশাগত জীবনে স্টেজ পারফরম্যান্সের পাশাপাশি তিনি ছিলেন গেম সাকাসের সহযোগী পরিচালক। বর্তমানে তিনি একজন অনুবাদক হিসেবে কাজ করছেন। কোরআন তিলাওয়াত ও ইবাদত-বন্দেগিতেই তিনি সময় কাটাতে পছন্দ করেন। শেষ জীবনে সৌদি আরবে স্থায়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। ইউটিউবে প্রচারিত একটি ভিডিওতে তিনি নিজের ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে বলেন। এখানে তা তুলে ধরা হলো
দক্ষিণাঞ্চলীয় ব্যাপ্টিস্ট পরিবারে আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তবে পরবর্তী জীবনে আমি ছিলাম একজন ধর্মবিমুখ খ্রিস্টান। আমি বিধিবদ্ধ ধর্মীয় রীতিনীতির বাইরে স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করতাম। তবে এ কথা বলার সুযোগ নেই, ধর্মের সঙ্গে আমার শিথিল সম্পর্কের কারণে আমার জন্য ইসলাম গ্রহণ সহজ হয়েছে; বরং ভিন্ন একটি কারণে এই সৌভাগ্য হয়েছে আমার। তা হলো, আমি সারা জীবন মহান স্রষ্টা আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী ছিলাম।
আমি খ্রিস্টধর্মে সেটা খুঁজে পাইনি। কারণ খ্রিস্টধর্মের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন যিশুখ্রিস্ট [ঈসা (আ.)]। স্রষ্টা সম্পর্কে সেখানে সামান্যই আলোচনা হয়ে থাকে। ফলে সব সময় আমার মধ্যে সংশয় কাজ করত এবং ধর্মের ব্যাপারে আমি কখনো অন্তরে আস্থা ও তৃপ্তি খুঁজে পেতাম না। আমি স্রষ্টার সন্ধান করতে লাগলাম, যা আমি খ্রিস্টধর্মে খুঁজে পাইনি। স্রষ্টার অনুপস্থিতির কারণেই আমি কখনো পুরোপুরি ধার্মিক হয়ে উঠতে পারিনি। ইসলামের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর আমার চিন্তার আমূল পরিবর্তন হলো। আমি দেখলাম, ইসলামের সব কিছুর কেন্দ্রে রয়েছেন মহান স্রষ্টা আল্লাহ। স্রষ্টার আলোচনা ও বন্দনাই ইসলামের প্রাণসত্তা। তাঁকে আড়াল করার কোনো চেষ্টা ইসলামে নেই; বরং সব কিছুতে তিনি আবর্তিত। ইসলামে আমি স্রষ্টাকে খুঁজে পেলাম। ইসলাম গ্রহণ করে যেন আমি স্রষ্টার আশ্রয় পেলাম এবং আমার হৃদয় প্রশান্ত হলো।
আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম। আমার আরবি ভাষার একটি ক্লাস ছিল। একদিন আমি ক্যাফেতে বসে আরবি ক্লাসের জন্য হোমওয়ার্ক করছিলাম। একটি ছেলে তখন আমাকে বলল, এটা কি আরবি? আমি তাকে জানালাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সেমিস্টারে আমার আরবি কোর্স রয়েছে। সে আমাকে সাহায্যের প্রস্তাব দিল। আমি তা সাদরে গ্রহণ করলাম। সে আমার সঙ্গে বসল এবং আমাকে সাহায্য করল। সে শেখাল, কিভাবে আরবি বর্ণগুলো উচ্চারণ করতে হয়। বিশুদ্ধভাবে লেখা ও শোনার পদ্ধতিও শেখাল। একদিন সে আমাকে তার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার প্রস্তাব দিল।
তারা সবাই ছিল সৌদি আরবের নাগরিক। আমি ভাবলাম, এরাই আমাকে প্রকৃতপক্ষে আরবি শিখতে সাহায্য করতে পারে। আরবি শেখা সত্যিই আমার জন্য কঠিন ছিল। এক বছর আমি তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখলাম। এ সময় তাদের সঙ্গে ইসলাম বিষয়েও কথা হয়। আমি তাদের আচরণে মুগ্ধ হলাম। কারণ তারা ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে আমাকে জোর করেনি। আরব যুবকরা আমার মধ্যে ইসলাম ঢুকিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে আমার সামনে ইসলাম উপস্থাপন করে।
এমনকি তারা কখনো বলেনি, ইসলাম গ্রহণ না করলে তুমি জাহান্নামে যাবে। তাদের সঙ্গে আমার খোলামেলা আলোচনা হয়। আমি তাদের প্রশ্ন করতাম এবং তারা উত্তর দিত। তারা আমাকে অনুরোধ করত, আমি যেন কোরআন নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করি। তাদের আলোচনা, কোরআনের ভাষ্য ও আমার অনুসন্ধান আলোর দুয়ার খুলে দেয়। আমি ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিই।
অনুবাদ : শেখ আবদুল্লাহ বিন মাসউদ