ইসলাম ডেস্ক: জুলুমের পরিণতি ভয়াবহ এই পৃথিবীতে যার যা প্রাপ্য বা অধিকার তাকে সেই প্রাপ্য বা হক থেকে বঞ্চিত করার নামই জুলুম। ইনসাফবিরোধী কাজ করা, কারও অধিকার হরণ করা, বিনা অপরাধে মানুষের ওপর হামলা বা নির্যাতন চালানো, আর্থিক, দৈহিক ও মর্যাদার ক্ষতিসাধন করা, দুর্বলের ওপর নৃশংসতা চালানো, অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ হরণ, অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করা, কাউকে উৎপীড়ন করা বা যন্ত্রণা দেয়া ইত্যাদি জুলুমের পর্যায়ভুক্ত।
জুলুমের ভয়াবহতা সম্পর্কে কোরআন-হাদিসে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। জালেম বা জুলুমবাজদের জানা উচিত, তাদেরও একদিন আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। আল্লাহ বলেন, জালেমদের কর্মকা- সম্পর্কে আল্লাহকে উদাসীন মনে করো না। যারা মানুষের ওপর অত্যাচার করে, জুলুমবাজরা তাদের অত্যাচারের পরিণতি অচিরেই জানতে পারবে (সুরা-২২)।
মুসলমানদের অবশ্যই জেনে রাখা উচিত, দুনিয়াবাসীকে আল কোরআন ও রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহর দাওয়াত দেয়া প্রতিটি মুসলমানের ওপর ফরজ। যারা মানুষকে এ হক থেকে বঞ্চিত করে তারাও জালেমের অন্তর্ভুক্ত। তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে, যার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি সাক্ষ্য বা সত্য রয়েছে, সে তা প্রকাশ না করে গোপন করে (বাকারা-১৪০)।
আর যেসব মানুষ আল্লাহর দাওয়াতকে প্রত্যাখ্যান করে বা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাদের বিষয়ে আল্লাহপাক বলেন, তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে যাকে তার রবের আয়াত শুনিয়ে উপদেশ দেয়ার পরও সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় । (সুরা কাহ্ফ-৫৭)।
ক্ষমতা থাকলেই জুলুম করা ঠিক নয়। জুলুমকারী জুলুম করে সুখনিদ্রা গেলেও মজলুমের চোখে ঘুম থাকে না। তার কষ্টের কথা আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়। মজলুমের অভিশাপের পরিণাম ভয়াবহ। মানুষ মানুষের অধিকার হরণ, নির্যাতন, উৎপীড়ন ও যন্ত্রণা দেয়া যেমন জুলুম, তেমনি মহান আল্লাহর সঙ্গে তাঁর কোনো সৃষ্টিকে অংশীদার করা বা শিরক করা সবচেয়ে মারাত্মক জুলুম। আল্লাহর কোনো শরিক করিও না। নিশ্চয়ই শিরক হচ্ছে বড় জুলুম (লুকমান-১৩)।
রাসূল পাক (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, হে আমার বান্দারা! আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের পরস্পরের মধ্যেও তা হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা পরস্পরের ওপর জুলুম করো না (মুসলিম, তিরমিজি)।
জুলুমকারী যতই জ্ঞানী, বিত্তশালী, ক্ষমতাবান বা যত বড় ব্যবসায়ীই হোক না কেন, সে যদি জুলুমের ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে অবহিত হতো, তাহলে সে কখনও জুলুম করত না। নবীজি (সা.) বলেছেন, কেউ যদি তার ভাইয়ের সম্মানহানি কিংবা কোনো জিনিসের ক্ষতি করে, তবে আজই তার কাছ থেকে তা বৈধ করে নেয়া উচিত এবং সেই ভয়াবহ দিন আসার আগেই এটা করা উচিত। সেদিন টাকাপয়সা দিয়ে কোনো প্রতিকার করা যাবে না, বরং তার কাছে কোনো নেক আমল থাকলে তার জুলুমের পরিমাণ হিসেবে মজলুমকে সেই নেক আমল দিয়ে দেয়া হবে এবং অসৎ কাজ না থাকলেও ওই মজলুমের অসৎ কাজ তার ওপর বর্তাবে (বুখারি, তিরমিজি)।
২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/