নিউজ ডেস্ক : সাইকেল উপহার পেয়ে কাঁদল অসহায় হাফেজ আল আমিন। মাহমুদুর রহমানের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। চাকরি করেন ঢাকার পান্থপথের একটি অফিসে। বৃহস্পতিবার বিকেল হলেই অফিস শেষে দৌঁড়ে কমলাপুর গিয়ে ট্রেন ধরেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার। ফের সকালে এসে অফিস ধরেন। বাড়ি যান স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে ছুটির সময়টা থাকতে। এই হলো মাহমুদুরের দৈনন্দিন রুটিন।
এই রুটিনের মাঝে একটু ভিন্নতা আনলেন অফিসের পরিচ্ছন্নতা কর্মী রুমা। স্বামী পরিত্যক্তা রুমা মাস দেড়েক আগে মাহমুদুরকে জানালেন তার পরিবারের কথা। বললেন তার একমাত্র ছেলে ১৫ বছর বয়সী ছেলে আল আমিন। সে হাজারীবাগ বটতলা মাদ্রাসায় মাওলানা পড়ছে। কৃতিত্বের সাথে হেফজ পড়া শেষ করেছে তিন বছর হলো। জীবনে যত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে; প্রথম থেকে তৃতীয় স্থানের মধ্যেই তার নাম থেকেছে।
জানালেন, ছেলেকে ৬ বছর বয়স থেকেই বাই সাইকেল কিনে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন তিনি। ছেলে তার কথামতো চলে। মাকে ভালো রেজাল্ট উপহার দেয়। কিন্তু মা ছেলের স্বপ্ন পূরণ করতে পারছেন না। বিষয়টি তাকে খুব পোড়ায়। ছেলে জানে মা এখন আমাদের প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে আর্থিকভাবে ভালোই আছেন। মা জানেন প্রকৃত অবস্থা। দুর্মূল্যের এই বাজারে মাস শেষে তার হাতে কোন টাকাই অবশিষ্ট থাকে না। ছেলেকে বুঝতে দেন না। ছেলের মন ভাঙতে চান না।
মাহমুদুর রহমান রুমার কথা আগ্রহ নিয়ে শুনলেন। তারপর নিজের রুটিনেই অভ্যস্ত হয়ে গেলেন। কিন্তু রুমাকে মাস দেড়েক আগে দেয়া কথা কোথায় রাখছেন। নিজেকেই নিজের কথা পীড়া দেয়। নিজের টাকা দিয়ে যে কিনে দেবেন তার পুরোটা সম্ভব নয়। শেষমেষ দ্বারস্থ হলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। গত সোমবার সন্ধ্যায় তিনি ফেসবুকে একটি পোস্ট দিলেন। প্রথমে ৭ হাজার টাকা দামের একটা সাইকেল কিনে দিতে চাইলেন, কেউ এগিয়ে এলে সাইকেল কেনাটা সহজ হয়ে যায়। খুব অল্প সময়েই অনেকেই এগিয়ে এলো। দেখা গেল ১৩ হাজার টাকা উঠে গেল অল্প সময়। একজন তো এর মধ্যে ৫ হাজার টাকা দিয়ে দিল। নাম প্রকাশ করতে চায় না কেউ।
মাহমুদুর রহমান বলেন, 'আল আমিন ও তার মা বাই সাইকেল নিতে এলেন। আনন্দে কাঁদলেন রুমা আপা। হাফেজ আল আমিন খুশিতে আত্মহারা। আহা! এই আনন্দের কাছে পৃথিবীর সব তুচ্ছ, সব। তিনি বললেন, 'আরো অনেকেই টাকা দিতে চাচ্ছেন। সবার টাকা গ্রহণ করলে আল আমিনকে মোটর সাইকেল কিনে দেয়া যেত!'