ইসলাম ডেস্ক: আপনারা আমাকে আলি কামারাতা নামে চেনেন। তবে এই পরিচয় ধারণের আগের ইতিহাসটুকু অনেকেই জানেন না। আমি সেটাই আপনাদের শোনাব। আমেরিকার একটি খ্রিস্টান পরিবারে আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। আমার দাদি আমাকে প্রতি সপ্তাহে গির্জায় নিয়ে যেতেন। সেখানে নিয়মিত বাইবেলের পাঠ হতো। কিন্তু আমি বড় হওয়ার পর গির্জায় কম সময় দিতাম। স্কুল, খেলাধুলা ইত্যাদিতেই বেশি সময় কাটত আমার। হাই স্কুলে পড়ার সময় আমি ধর্ম ত্যাগ করে নাস্তিক হয়ে যাই। মূলত একজন নাস্তিক শিক্ষকের সংস্পর্শ আমাকে স্রষ্টায় অবিশ্বাসী করে তোলে।
১৭ বছর বয়সে আমি সামরিক বাহিনীতে যোগ দিই। তখন আমি আবারও ধর্মের পথে ফিরে আসি। দীর্ঘ সময় আমি ধর্ম বিষয়ে পাঠ, অধ্যয়ন ও প্রার্থনায় কাটাতাম। একজন খ্রিস্টান হিসেবে আমি সব সময় সত্য ও অসত্যের ব্যাপারে সচেতন ছিলাম। কিন্তু আমার ধর্ম তার সত্যতার ব্যাপারে আমাকে আশ্বস্ত করতে পারেনি। ধর্মের ব্যাপারে আমি যত পড়ছিলাম, আমার হতাশা তত বাড়ছিল। এরই মধ্যে ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনা ঘটল। সব সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক সম্মিলনে আলোচনার একমাত্র বিষয় ছিল ইসলাম। তারা বলছিল, মুসলিম ধর্মবিশ্বাস কিভাবে মানুষকে অমুসলিম হত্যায় উৎসাহিত করে, যাতে তারা জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা লাভ করে।
এমন আরো অনেক ভুল ধারণা, যা ইসলামকে অসভ্য ধর্ম প্রমাণিত করে—তা আলোচিত হতো সেখানে। ফলে না বুঝেই বহু মানুষ ইসলামের প্রতি ঘৃণা পোষণ করতে লাগল। আমিও ছিলাম তাদের একজন। ইসলামবিরোধী প্রচারণায় আমি মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হই এবং ইসলামের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠি। ইসলাম ও মুসলমানের প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণার পাশাপাশি আমি ছিলাম মার্কিন সামরিক বাহিনীতে শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদে বিশ্বাসী। কয়েক মাস মিডিয়ায় ধারাবাহিক ইসলামবিরোধী প্রচারণায়, যার উদ্দেশ্য ছিল ইসলামের সম্মানহানি ও মুসলিমবিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়া, সেগুলোর কারণে আমি আরো উত্তেজিত হই।
১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার তিন মাস পর স্কুলের শিক্ষকরা আমাদের একটি প্রস্তাব দেন। তা হলো, যদি আমাদের কেউ একটি মৌলিক ও অভিনব প্রজেক্ট তৈরি করতে পারে, তাহলে সে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘পাসিং গ্রেড’ পাবে। সমসাময়িক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমি একটি গেম তৈরির সিদ্ধান্ত নিলাম, যেখানে ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে হত্যা করতে হবে।
আমি খুব দ্রুত প্রকল্পটি শেষ করি। প্রকল্পটি ক্রিসমাসের ছুটির পর জমা দেওয়ার কথা ছিল। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, এটা বাড়ি নিয়ে আসব এবং অবসর সময়ে আরো খুঁটিনাটি কাজ করব। আমি গেমে একটি পর্ব এমন রাখতে চাইলাম, যেখানে ওসামা বিন লাদেনের পাগড়িতে আগুন নিক্ষেপ করা হবে। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমি গুগলে সার্চ দিলাম। তখন ইসলাম বিষয়ে এমন কিছু লেখা পাই, যা আমার চোখ খুলে দেয়।
একটি প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয় ছিল নুহ, ইবরাহিম, মুসা, ঈসা (আ.)-সহ অন্যান্য নবীর ব্যাপারে মুসলিম ধর্মবিশ্বাস। যেহেতু আমি নিয়মিত বাইবেল পড়তাম, তাই আমি এসব নবীর ব্যাপারে জানতাম। আমি আশ্চর্য হলাম, খ্রিস্টান না হয়েও তাঁরা কিভাবে নবীদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে? আমি গেম তৈরির কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই ইসলাম বিষয়ে প্রবন্ধ ও বই পড়তে লাগলাম। আক্ষরিক অর্থে আমি জেগে উঠলাম। ছুটির সময় সর্বক্ষণ আমি পড়তাম। পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যেতাম, আবার জেগে উঠতাম এবং পড়তাম।
আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি এক সত্যিকার খ্রিস্টান হব। আমি ইসলাম ও অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে পড়ব এবং খ্রিস্টধর্মের শ্রেষ্ঠত্বের দিক খুঁজে বের করব, যেন আমাকে কেউ জন্মসূত্রে খ্রিস্টান বলতে না পারে। খ্রিস্টধর্মের ইতিহাস পড়ার পর দেখলাম, ঈসা (আ.)-এর আনীত বাণী অনুসরণ করছে না গির্জাগুলো। বরং তারা ঈসা (আ.)-এর পরে একটি মতবাদ প্রতিষ্ঠা করে এবং যারা ও যা কিছু তাদের মতবাদের বিরোধী ছিল তা ধ্বংস করে দেয়। এরপর আল্লাহ তাঁর সত্য বাণী দিয়ে নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে প্রেরণ করেন।
আমি কোরআন পড়তে শুরু করার পর জানলাম, কোরআন কখনো পরিবর্তন হয়নি এবং হবে না। একজন খ্রিস্টান হিসেবে বিষয়টি আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কেননা বাইবেল তার মূল অবস্থার ওপর টিকে আছে কি না, সেই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারেনি। আর কোরআন প্রথম ব্যক্তির ওপর অবতীর্ণ হওয়ার সময় যেমন ছিল, ঠিক সেভাবেই রয়েছে।
ইসলাম, কোরআন ও মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে পড়ার পর আমি একজন মুসলিমের সঙ্গে ধর্ম নিয়ে কথা বলতে চাইলাম। কিন্তু আমার এলাকায় কোনো মসজিদ ছিল না, তাই ইন্টারনেটে এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার মুসলিমদের সঙ্গে কথা বলি। সব পর্যবেক্ষণের পর আমি আর সত্য অস্বীকার করতে পারলাম না।
কিন্তু আমার ভেতর গুঞ্জন শুনতে পাচ্ছিলাম, আমি মুসলিম হতে পারি না। কারণ আমি আমেরিকান শ্বেতাঙ্গ। তুমি মুসলিম হতে পারো না। কারণ তুমি আরব নও। ইসলাম শুধু আরবের জন্য। ১১ সেপ্টেম্বরের ভয়াবহতার পর ইসলাম গ্রহণ করলে তুমি পরিবারকে কী বলবে? আলহামদুলিল্লাহ! আমি অল্প দিনের মধ্যে এসব প্রশ্ন উপেক্ষা করতে সক্ষম হই। যেহেতু আমার আশপাশে কোনো মসজিদ ছিল না, তাই আমি একলা ঘরে কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করে ইসলামে দীক্ষিত হই।-আলি কারামাতা ডটকম থেকে