রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:২৩:৪২

মহানবী (সা.)-এর হাতে গড়া শ্রেষ্ঠ মানব যিনি

ইসলাম ডেস্ক: ৪০ হিজরির একুশে রমজান। সব-হারানোর বেদনায় গোটা বিশ্ব জগত যেন ব্যথিত, প্রকৃতি যেন নির্জীব, অচল, স্পন্দনহীন। ইয়াতিম, বঞ্চিত আর মজলুমের মর্মভেদী কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারাক্রান্ত!  যে অবিস্মরণীয় নিষ্পাপ-ফুলেল সত্তা হিজরি-পূর্ব ২৩ সনের ১৩ই রজব পবিত্র কাবা ঘরে জন্ম নিয়ে তাঁর বহুমুখী সৌরভে ও অতুলনীয় সব গুণের ছোঁয়ায় বারে বারে ইসলামকে দিয়েছে নব-জীবন এবং টিকিয়ে রেখেছিল ইসলামের প্রকৃত প্রাণ ও চেতনা সেই পবিত্র ব্যক্তিত্বের শাহাদত শোক-সাহারায় তুলেছে অনন্ত মাতম! প্রায় ১৪০০ বছর ধরে মু'মিনের চোখে রক্ত-অশ্রু-ঝরাচ্ছে এই রাত! কিন্তু সে রাতে বিশ্বনবী (সা.)'র পর হেদায়াতের উজ্জ্বলতম প্রদীপ অসময়ে চিরতরে নির্বাপিত হলেও মানুষের অন্তরে তিনি আজো অমর, অক্ষয় এবং ঈমানের অফুরন্ত শক্তির উৎস !   

একুশে রমজান পৃথিবী হারিয়েছিল বিশ্বনবী-(সা.)'র শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি ও শ্রেষ্ঠ অনুসারীকে, হারিয়েছিল বিশ্বনবী (সা.) এর জ্ঞান-নগরীর মহাতোরণকে,  হারিয়েছিল রাসূল (সাঃ)'র পর সবচেয়ে দয়ালু ও উদার আত্মার অধিকারী মানুষ এবং হেদায়াতের উজ্জ্বলতম প্রদীপকে। সেদিন মুসলিম বিশ্ব তার অত্যন্ত দুঃসময়ে হারিয়েছিল সাধনা ও আধ্যাত্মিক পূর্ণতার সর্বোত্তম আদর্শকে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় মহানবী (সাঃ)'র নিজ হাতে গড়ে তোলা ইসলামের শ্রেষ্ঠ সেনাপতি ও সবচেয়ে আপোষহীন নেতা হযরত আলী (রা.)কে।

আলী (আ.) ছিলেন যুবকদের জন্য বীরত্ব ও সাহসিকতার আদর্শ, সরকার-প্রধানদের জন্য ন্যায়বিচারের আদর্শ, ইবাদত, খোদাপ্রেম ও ভারসাম্যপূর্ণ অনাড়ম্বর জীবনের জন্য সব মুমিন মুসলমানের জন্যই আদর্শ। তাঁর মুক্তিকামীতা বিশ্বের সব মুক্তিকামীর আদর্শ এবং প্রজ্ঞাময় বক্তব্য ও চিরস্মরণীয় উপদেশগুলো আলেম, বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও চিন্তাবিদদের জন্য আদর্শ।

আলী (আ.) ছিলেন সেই ব্যক্তিত্ব  নদী-দখলকারী শত্রুরা যার বাহিনীর জন্য নদীর পানি ব্যবহার নিষিদ্ধ করলে সেই  শত্রুদের পরাজিত করার পরও তিনি ওই নদীর পানি  কোনো শত্রুর জন্য নিষিদ্ধ করেননি। জালিমদের বিরুদ্ধে আলী (আ.) সবচেয়ে কঠোর হলেও তিনি ব্যক্তিগত ক্রোধের বশে নয় বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাদের ওপর আঘাত হানতেন।
         
হযরত আলী (আঃ) ছিলেন সেই ব্যক্তিত্ব যার সম্পর্কে রাসূলে পাক (সাঃ) বলেছেন,  মুসার সাথে হারুনের যে সম্পর্ক তোমার সাথে আমার সেই সম্পর্ক,  শুধু পার্থক্য হল হারুন (আঃ) নবী ছিলেন, তুমি নবী নও। রাসূল (সা.) বলেছেন, " আমি জ্ঞানের নগরী, আলী তার দরজা, যে কেউ আমার জ্ঞানের মহানগরীতে প্রবেশ করতে চায় তাকে এ দরজা দিয়েই আসতে হবে"।

বিশ্বনবী (সাঃ) আরো বলেছেন: আমি আলী থেকে, আর আলী আমার থেকে, যা কিছু আলীকে কষ্ট দেয়, তা আমাকে কষ্ট দেয়, আর যা কিছু আমাকে কষ্ট দেয় তা আল্লাহকে কষ্ট দেয়।

হযরত আলী (আ.)'র আকাশ-ছোঁয়া বীরত্ব ও মহত্ত্বে অমুসলিম পণ্ডিতরাও অভিভূত ও হতবাক হয়েছেন। আর ডি ওসবোর্ন বলেছেন, আলী (আ.) ছিলেন মুসলমানদের ইতিহাসের সর্বোত্তম আত্মার অধিকারী সর্বোত্তম ‍ব্যক্তি।

ওয়াশিংটন আরভিং বলেছেন, "সব ধরনের নীচতা ও কৃত্রিমতা বা মিথ্যার বিরুদ্ধে আলী (আ.)'র ছিল মহত সমালোচনা এবং আত্মস্বার্থ-কেন্দ্রীক সব ধরনের কূটচাল থেকে তিনি নিজেকে দূরে রেখেছিলেন।"

ঐতিহাসিক মাসুদির মতে, রাসূল (সা.)'র চরিত্রের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি মিল যার ছিল তিনি হলেন আলী (আ.)।

 

 শাহাদত-প্রেমিক আলী(আ.) যখন মৃত্যুশয্যায় শায়িত, তাঁর সঙ্গীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, সবাই কাঁদছে, চারিদিকে ক্রন্দনের শব্দ, কিন্তু আলী (আ.)-এর মুখ হাস্যোজ্জ্বল। তিনি বলছেন,

“আল্লাহর শপথ! আমার জন্য এর চেয়ে উত্তম কি হতে পারে যে, ইবাদতরত অবস্থায় শহীদ হব?”

ঘাতকের প্রাণঘাতী আঘাতে ধরাশায়ী আমিরুল মু'মিনিন এ ঘটনা নিয়ে কোনো ধরনের বাড়াবাড়ি বা অবিচার না করার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন,

“আব্দুল মুত্তালিবের সন্তানেরা তোমরা এমন যেন না কর, যখন আমি পৃথিবী থেকে বিদায় নেব তখন মানুষের উপর হামলা করবে এ অজুহাতে যে, আমীরুল মু'মিনীনকে শহীদ করা হয়েছে। অমুকের এটার পেছনে হাত ছিল, অমুক এ কাজে উৎসাহিত করেছে। এসব  কথা বলে বেড়াবে না, বরং আমার হত্যাকারী হল এই ব্যক্তি।”
 

এবারে হযরত আলী (আঃ)'র প্রবাদতুল্য কয়েকটি বাণী শুনিয়ে শেষ করব আজকের আলোচনা:

*বাহ্যিক অলংকার ও পোশাক-পরিচ্ছদ সৌন্দর্য নয়, সৌন্দর্য হল-জ্ঞান ও সভ্যতা। যার পিতা-মাতা মারা গেছে সে এতীম নয়, প্রকৃত এতীম সে যার মধ্যে জ্ঞান ও বিবেক নেই।
*সত্যকে আঁকড়ে ধর, যদি তাতে তোমার ক্ষতিও হয় এবং মিথ্যাকে বর্জন কর যদি মিথ্যা দিয়ে তোমার লাভও হয়। আর এটাই হল ঈমান।
* আমি তাদের সম্পর্কে বিস্মিত হই যারা কিছু হারিয়ে ফেললে তা ফিরে পাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে, অথচ নিজ আত্মাকে হারিয়ে ফেলার ব্যাপারে তাদের মধ্যে সচেতনতা নেই।
সূত্র: রেডিও তেহরান
২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে