ইসলাম ডেস্ক: সেদিন আমরা মক্কাতুল মুকাররমায়। হিজরা রোডের এক হোটেলে। মসজিদুল হারামের খুব কাছেই। একদল বসে আছি। বাংলাদেশ থেকে ৪১৯ হজযাত্রী নিয়ে একটি বিমান জেদ্দায় পৌঁছেছে। তাদেরকে অভ্যর্থনা জানানোর অপেক্ষায়।
হাজী সাহেবরা এলেন। তাদেরকে কয়েকটি দলে ভাগ করে আমাদের কয়েকজনের মাঝে বণ্টন করে দেয়া হলো। কিছুক্ষণ বিশ্রামের পরই ওমরা করতে নিয়ে যেতে হবে। তামাত্তু হজ। সকলেই ওমরা করে হালাল হবেন। যথাসময়ে সকলেই যার যার কাফেলা নিয়ে রওয়ানা হয়েছেন। ওমরা আদায়ের পর পুনরায় ফিরেও এসেছেন।
এবার একটু অবসর সময়। বিশ্রাম আর গল্প করছি। সকলে হাজিদের নিয়ে অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করছে। হাজিদের হজসংক্রান্ত বিষয়ে জানার কমতি, তাওয়াফ ও সায়ীতে ভুল করা, তাওয়াফ অবস্থায় অযু চলে যাওয়া, কাফেলা একসাথে না থেকে বিক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাকার সমস্যাগুলো তুলে ধরছেন।
তবে এক ভাই আমাকে ভিন্ন কিছু শোনালেন। তিনি যা শোনালেন, শতাব্দীকাল ধরে তা আমার হৃদয়তন্ত্রীতে চির জাগরুক থাকবে। তিনি বললেন- “হাজীদের কাফেলাকে নিয়ে মসজিদুল হারামের দিকে যাচ্ছি। নারী-পুরুষ সকলেই আছে। আমি বারবার সকলকে বিক্ষিপ্ত না হয়ে একসাথে থাকার ব্যাপারে সতর্ক করছি। এরপর মাতাফে ( কাবা ঘরের চতুর্দিকে তাওয়াফ করার জন্য যে খালি স্থান) গেলাম। তখনও মাতাফে তেমন একটা ভিড় নেই। সকলকে নিয়ে তাওয়াফ শুরু করার আগে কিছু কথা বলছি। হঠাৎ একজন মহিলা দাঁড়ানো থেকে পড়ে গিয়ে বসে গেছেন। দেখলাম, তিনি কাবার দিকে তাকিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে আছেন। মনে হয় অজ্ঞান হয়ে গেছেন। ছুটে গেলাম। নাহ! কিছুটা স্বাভাবিকই আছেন মনে হলো। জানতে চাইলাম, কি হয়েছে আপনার?
হোটেলে ফিরে যাবেন?
তিনি অঝোরে কাঁদতে লাগলেন। আর বললেন, “শুধু কাবা ঘরকে একনজর দেখবো বলে, শুধু একবার নিজ চোখে দেখবো বলে, আমি ১৯ বছর ধরে ডিম বিক্রি করে টাকা জমিয়েছি! আজ সেই দিন এসেছে!! আমি কাবাকে দেখেছি!! তাই দেখামাত্রই আমি আর থাকতে পরিনি। শরীর নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে যাই। চলো, এবার তাওয়াফ শুরু করি!” এরপর শীর্ণ দেহের মানুষটি অসীম দৃঢ়তা নিয়েই ওমরার কাজ সম্পন্ন করেন।
“ভাবলাম, একটি জীর্ণ শরীরের নরম হাড্ডিগুলোতে কি পরিমাণ শক্তিমত্তা বিরাজ করছে? কি পরিমাণ গতিবেগে তিনি ১৯টি বছর ধরে ছুটে চলেছেন? সংকল্পের এ দৃঢ়তা কি সুুউচ্চ পর্বতকেও হার মানাবে না?”-ইসলামটাইমস