ইসলাম ডেস্ক: মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে স্পন্দন ও আবেগ শীর্ষস্থান দখল করে আছে মদিনা। মর্যাদায় পবিত্র কাবা শরিফের পরেই যার স্থান। যদিও মদিনার জিয়ারত হজের অংশ নয়, তথাপিও অধিকাংশ মুসলমানের কাছে বিভিন্ন কারণে মক্কার চেয়ে মদিনার ভালোবাসা অনেক বেশি। তাই সারাবিশ্ব থেকে আগত কোনো হজযাত্রীই মদিনার সফর ও জিয়ারত মিস করেন না।
মুসলিম উম্মাহর প্রিয় শহর মদিনা। এ মদিনায় বসবাস করেছেন দু’জাহানের বাদশাহ বিশ্বনিব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আজও তার রওজা মদিনার মসজিদে নববিতে অবস্থিত মদিনার মসজিদে নববি ছাড়া আরও ৪টি স্থান মুসলিম উম্মাহ সবচেয়ে বেশি পরিদর্শন করেন। যা ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য স্মৃতি বিজড়িত স্থান। এ স্থানগুলো সঙ্গে ইসলাম ও মুসলমানদের আবেগ ও ভালোবাসা জড়িত। আবেগ ও ভালোবাসার সে স্থানগুলো হলো-
প্রিয় নবির রওজা
মসজিদে নববির অভ্যন্তরে হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুর সে ঘর। যে ঘরে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দাফন করা হয়েছে।
মুসলিম উম্মাহ প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজায় আবেগ ভক্তিপূর্ণ সালাম জানায়। এ স্থানে রয়েছে ইসলামের প্রথম দুই খলিফা হজরত আবু বকর ও ওমর রদিয়াল্লাহু আনহু। মুসলিম উম্মাহ প্রিয় নবির সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকেও সালাম জানায়।
জান্নাতুল বাকি
মদিনার মসজিদে নববির দক্ষিণ পূর্ব দিকে অবস্থিত। একে আরবিতে মাকবারাতুল বাকি, বাকউল গারকাদও বলা হয়ে থাকে। এখানে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, হজরত ওসমানসহ সাহাবায়ে কেরামদের অনেককেই দাফন করা হয়েছে।
বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশ কয়েকবার এ কবরস্থান জিয়ারতে এসেছিলেন। বিশ্বনবি হিজরত করে মদিনা আসার সময় জান্নাতুল বাকির স্থান সবুজ বৃক্ষে আচ্ছাদিত ছিল। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ রাতে জান্নাতুল বাকির দিকে বেরিয়ে যেতেন এবং বলতেন, হে (কবরের) মুমিন সম্প্রদায়! তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, তোমাদের কাছে এসেছে যা তোমাদেরকে ওয়াদা দেয়া হয়েছিল। কেয়ামত পর্যন্ত তোমরা অবশিষ্ট থাকবে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় নিশ্চয়ই আমরাও তোমাদের সঙ্গে মিলিত হবো। হে আল্লাহ! তুমি বাকিউল গারদবাসীদের ক্ষমা করে দাও।’ (মুসলিম)
বর্তমানে হজ ও ওমরা মৌসুমে মদিনায় যারা মারা যান তাদেরকে জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়। সারাবিশ্ব থেকে আগত মুসলিম উম্মাহ এ জান্নাতুল বাকি সবচেয়ে বেশি জেয়ারত করেন।
মসজিদে কুবা
ইসলামের প্রথম মসজিদ। হিজরতের পর মদিনায় সর্ব প্রথম এ মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয় হয়। হিজরতের পর প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখানে ১৪দিন অবস্থান করেছিলেন।
মসজিদে কুবা উম্মতে মুহাম্মাদির সর্ব প্রথম মসজিদ। সম্মান ও মর্যাদার দিক থেকে মসজিদে হারাম, মসজিদে নববি এবং মসসিদে আকসার পরই মসজিদে কুবার স্থান। গুগল ম্যাপে মসজিদে নববি থেকে কুবা মসজিদে দূরত্ব প্রায় ১৪ থেকে ১৬ কিলোমিটার দেখালেও মূলতঃ এটি ৩-৪ কিলোর বেশি নয়।
মসজিদে কুবা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে মসজিদ প্রথম দিন থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকওয়ার উপর (মসজিদে কুবা) -তাই বেশি হকদার যে, তুমি সেখানে নামাজ কায়েম করতে দাঁড়াবে। সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালবাসে। আর আল্লাহ্ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ১০৮)
বিশ্বনবি মদিনায় ১০ বছর কাটিয়েছেন। এ সময়ে তিনি পায়ে হেঁটে কিংবা উটে আরোহণ করে কুবা মসজিদে যেতেন এবং সেখানে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করতেন। হাদিসে এসেছে-
– হজরত উসাইদ ইবনে হুজাইব আল আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ‘মসজিদে কুবায় এক ওয়াক্ত নামায আদায় করা; সওয়াবের দিক থেকে একটি ওমরা আদায়ের সমতুল্য।’ (তিরমিজি)
– অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নিজের ঘরে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করে (সুন্নাত মোতাবেক অজু করে) মসজিদে কুবায় আগমন করে নামাজ আদায় করে তাকে একটি ওমরাহর সমপরিমাণ সওয়াব দান করা হবে। (ইবনে মাজাহ)।
মসজিদে কিবলাতাইন
মসজিদ আল কিবলাতাইন বা দুই কিবলার মসজিদ। মদিনায় অবস্থিত একটি মসজিদ। ঐতিহাসিক দিক থেকে এই মসজিদ গুরুত্বপূর্ণ। নামাজ পড়াকালীন সময়ে আল্লাহর নির্দেশে প্রিয়নবি কেবলা পরিবর্তন করেছিলেন।
এ ঘটনা থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে মসজিদে কিবলাতাইন বা দুই কিবলার মসজিদ। আগে দুটি মেহরাব থাকলেও মসজিদ পূর্ণঃনির্মাণের সময় জেরুজালেমের মসজিদে আকসা মুখী কিবলা সরিয়ে নেয়া হয়।
ওহুদ পাহাড় ও প্রান্তর
মদিনা শহরের উত্তরে ১০৭৭ মিটার তথা ৩৫৩৩ ফুট উচ্চতার ওহুদ পাহাড় অবস্থিত। এ পাহাড়ের পাদদেশে মক্কার কুরাইশ ও মদিনার মুসলিমদের মধ্যে দ্বিতীয় যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মক্কার বাহিনীর আক্রমণের বিশ্বনবি আহত হন এবং তাঁর একটি দাঁত ভেঙে যায়। গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, তিনি নিহত হয়েছেন।
হৃদয় বিদারক এ যুদ্ধে প্রথম দিকে মুসলিমরা বিজয় লাভ করলেও পাল্টা আক্রমণে কুরাইশদের তুলনায় মুসলিমদের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়। এ হজরত হামজা রাদিয়াল্লাহু আনহুসহ ৭০ জন সাহাবি শাহাদাত বরণ করেন। ওহুদ পাহাড়েরর পাদদেশে এ ৭০ জন সাহাবিকে দাফন করা হয়।
সারাবিশ্ব থেকে আগত মুসলিম উম্মাহ সাহাবাদের কবর জিয়ারত ও ওহুদ প্রান্তর দেখতে এখনও ওহুদ প্রান্তর সবচেয়ে বেশি পরিদর্শন করেন।
মদিনার এসব স্থানগুলো ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত ও তাৎপর্যপূর্ণ স্থান। এ স্থানগুলোর প্রতি মুসলিম উম্মাহর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা আজন্ম। যা কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। সূত্র- জাগো নিউজ