ইসলাম ডেস্ক: একজন মুসলিম হিসেবে আমরা মনেপ্রাণে আখেরাত, বিচার দিবস, জান্নাত ও জাহান্নাম বিশ্বাস করি। দুনিয়ায় ব্যক্তির কর্মের ভিত্তিতে বিচার সম্পন্ন করার পর জান্নাত অথবা জাহান্নামে পাঠানো হবে।
পৃথিবীতে যারা আল্লাহর নির্দেশনার বিপরীত কাজ করবে ও জীবনভর পাপের মধ্যেই নিমজ্জিত থাকবে, তাদের শাস্তির জন্য জাহান্নাম তৈরি করা হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে,
“সে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করো, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর। যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফেরদের জন্য।” (সূরা বাকারা, আয়াত:২৪)
“আমি কাফেরদের অভ্যর্থনার জন্যে জাহান্নামকে প্রস্তুত করে রেখেছি।” (সূরা কাহাফ, আয়াত:১০২)
রাসূল (সা.) নিজেও জাহান্নামের ভয়ে ভীত ছিলেন এবং মানুষকে তা থেকে দূরে থাকার জন্য সর্বদা উপদেশ দিতেন। জাহান্নাম থেকে দূরে থাকার জন্য তিনি বিশেষ কিছু আমলের কথাও বলতেন। নিম্নে এমন সাতটি আমল আলোচনা করা হল–
১. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস
হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেবে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) তাঁর রাসূল, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেবেন।” (বুখারী ও মুসলিম)
২. অন্যের উপর দয়া করা
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, “আমি কি তোমাদের জানাবো না জাহান্নাম কার জন্য হারাম ও কে জাহান্নামের জন্য হারাম? অন্যলোকদের সাথে নিকটবর্তী ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের অধিকারী এবং অন্যের সাথে আচরণে সহজ হবে।” (তিরমিজি)
৩. নিয়মিত নামায আদায় ও সিজদায় মনোযোগী হওয়া
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, “জাহান্নামের আগুন আদম সন্তানের সম্পূর্ণ শরীর জ্বালিয়ে দেবে শুধু সিজদার চিহ্ন ছাড়া, আল্লাহ জাহান্নামের আগুনের জন্য সিজদার স্থানকে জ্বালানো হারাম করে দিয়েছেন।” (ইবনে মাজাহ)
হযরত উম্মে হাবিবা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি যোহরের ফরজ নামাজের পূর্বে চার রাকাত ও পরে চার রাকাত সুন্নত নামায আদায় করে, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নামকে হারাম করে দেন।” (ইবনে মাজাহ)
৪. আল্লাহর ভয়ে কাঁদা
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে, সেই ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত জাহান্নামে যাবে না যতক্ষণ না (পশুর) ওলানে দুধ ফেরত না যায়।” (তিরমিজি)
৫. নফল রোযা রাখা
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, “আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখা এমন কোন ব্যক্তি নেই, যাকে আল্লাহ জাহান্নামের আগুন থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে না রাখেন।” (বুখারী ও মুসলিম)
৬. দান-সদকা করা
হযরত আদী ইবনে হাতিম (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, “অর্ধেক খেজুর দিয়ে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা কর।” (নাসায়ী)
৭. জাহান্নাম থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহর কাছে দুআ করা
হযরত আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষার জন্য তিনবার দুআ করে, জাহান্নামও তার জন্য দুআ করে, “হে আল্লাহ, আমার থেকে তাকে রক্ষা করো।” (তিরমিজি)
আল্লাহ আমাদের সকলকে এই আমলগুলো যথাযথভাবে পালনের তাওফিক দান করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দান করুন। আমীন।