ইসলাম ডেস্ক: যাকাত ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম বুনিয়াদ। খিলাফতের যুগে যাকাতের মাল-সম্পদ বাইতুল মালে জমা হতো। সেখান থেকে খলীফার পক্ষ হতে যাকাতের হক্বদারদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে সেই খিলাফতের ব্যবস্থা না থাকায় যাকাতদাতাগণ নিজেই যাকাতের মাল হক্বদারদের মধ্যে বণ্টন করে থাকেন। এ কারণে যাকাতদাতার মধ্যে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় গইরুল্লাহ অর্থাৎ রিয়া বা লৌকিকতা এ ধ্বংসাত্মক বদ গুণটি জন্ম নেয়। ফলে তার যাকাত কবুল হওয়ার বিপরীতে বরবাদ হয়ে যায়।
এছাড়া সে এমন সব লোককে যাকাত দেয় যাদের আক্বীদা ও আমলের মধ্যে কুফরী রয়েছে অথবা যারা হারাম-নাজায়িয বিদয়াত-বেশরা কাজে মশগুল অথবা যারা নামায কালাম পড়ে না, পর্দা-পুশিদায় চলেনা, গান-বাজনা করে, টিভি-সিনেমা দেখে, খেলাধুলা করে ইত্যাদি যা চরম ফাসিকী ও নাফরমানী কাজের অন্তর্ভুক্ত অথবা এমন সব মাদরাসায় যাকাত দেয় যেসব মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে পর্দা নেই, হারাম কাজে লিপ্ত, হারাম দল-মত ও আন্দোলনের সাথে জড়িত অর্থাৎ হক্কানী আলিম- আল্লাহওয়ালা হওয়ার পরিবর্তে তাদের উদ্দেশ্য থাকে গইরুল্লাহ অর্থাৎ দুনিয়াবী ফায়দা হাছিল করা। এদেরকে যাকাত, ফিতরা, কুরবানীর চামড়া ইত্যাদি ফরয, ওয়াজিব দান-ছদকা দেয়া মোটেই শরীয়ত সম্মত নয়। কারণ আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
تعاونوا على البر والتقوى ولاتعانوا على الاثم والعدوان واتقوا الله ان الله شديد العقاب.
অর্থ: তোমরা নেকী ও পরহিযগারীর মধ্যে সাহায্য করো। আর পাপ ও শত্রুতা অর্থাৎ আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের বিরোধিতা বা নাফরমানীর মধ্যে সাহায্য করো না। এ বিষয়ে তোমরা আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি কঠোর শাস্তিদাতা। (সূরা মায়িদা: আয়াত শরীফ-২)
যাকাত ও ফিতরা কাদেরকে দেয়া যাবে না:
১। উলামায়ে ছূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী মাওলানা দ্বারা পরিচালিত মাদরাসা অর্থাৎ যারা জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও অন্যান্য কুফরী মতবাদের সাথে সম্পৃক্ত সেই সমস্ত মাদরাসাতে যাকাত প্রদান করলে যাকাত আদায় হবে না।
২। নিসাব পরিমাণ মালের অধিকারী বা ধনী ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া যাবে না।
৩। মুতাক্বাদ্দিমীন অর্থাৎ পূর্ববর্তী আলিমগণের মতে কুরাঈশ গোত্রের বনু হাশিম-এর অন্তর্গত হযরত আব্বাস, হযরত জাফর, হযরত আকীল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের বংশধরের জন্য যাকাত গ্রহণ বৈধ নয়। তবে মুতাআখখিরীন অর্থাৎ পরবর্তী আলিমগণের মতে বৈধ।
৪। অমুসলিম ব্যক্তিকে যাকাত ও ফিতরা দেওয়া যাবে না।
৫। যে সমস্ত মাদরাসায় ইয়াতীমখানা ও লিল্লাহ বোডিং আছে সেখানে যাকাত দেয়া যাবে এবং যে সমস্ত মাদরাসায় লিল্লাহ বোডিং নেই সেখানে যাকাত ও ফিতরা দেয়া যাবে না।
৬। নিজের দরিদ্র পিতামাতাকে, সন্তানকে, স্বামী বা স্ত্রীকে যাকাত দেয়া যাবে না।
৭। প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ইয়াতীমখানা লিল্লাহ বোর্ডিংএর জন্য যাকাত আদায়কারী নিযুক্ত হলে তাকে যাকাত দেয়া যাবে না।
৮। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি যদি উপার্জন ছেড়ে দিয়ে নামায-রোযা ইত্যাদি নফল ইবাদতে মশগুল হয়ে যায় তাকে যাকাত দেয়া যাবে না। তবে সে যদি উপার্জন না থাকার কারণে যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত হয় তবে যাকাত দেয়া যাবে।
৯। বেতন বা ভাতা হিসেবে নিজ কর্মচারী, কর্মচারিণী বা কাজের পুরুষ ও মহিলাদেরকে যাকাতের টাকা দেয়া যাবে না।
২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/