সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১১:১৬:১০

যারা অন্যায়ভাবে এতিমের ধন-সম্পত্তি গ্রাস করে, সত্বরই তারা অগ্নি শিখায় উপনীত হবে

যারা অন্যায়ভাবে এতিমের ধন-সম্পত্তি গ্রাস করে, সত্বরই তারা অগ্নি শিখায় উপনীত হবে

ইসলাম ডেস্ক: এতিম শব্দের আভিধানিক অর্থ একক, অদ্বিতীয়, অতুলনীয়, অনুপম, বিস্ময়। মূলত অচেতন থেকে এতিমের উৎপত্তি হয়েছে। কেননা এতিম তার হক থেকে অচেতন থাকে।পরিভাষায় এতিম বলা হয়; বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার পূর্বেই পিতার মৃত্যু হওয়া। রাসূল (সাঃ) বলেন; স্বপ্নদোষ তথা বালেগ হয়ে গেলে আর কেউ এতিম থাকে না। বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার পূর্বে মাতার মৃত্যু হলে আরবদের পরিভাষায় তাকে লতীম বলে, আর মাতা-পিতা উভয় মৃত্যুবরণ করলে তাকে কাতী’ বলে। মানে এতিম বলে।

ইসলামে এতিমের তত্ত্বাবধানের ফযীলত: ইসলাম এতিমের হক আদায়ের ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছে। বিশেষ করে বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ১০টি হকের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে;

১. এতিমের মাল অন্যদের জন্য স্পর্শ করা নিষিদ্ধ: আল্লাহ বলেন; যারা অন্যায়ভাবে এতিমের ধন-সম্পত্তি গ্রাস করে, নিশ্চয় তারা স্বীয় উদরে অগ্নি ব্যতীত কিছুই ভক্ষণ করে না এবং সত্বরই তারা অগ্নি শিখায় উপনীত হবে। (সূরা নিসা: ১০)

২. কঠোরতা বা জোরকরা নিষিদ্ধ: পাওনা আদায়ে অধিকার না থাকা সত্ত্বেও জোরপূর্বক নিজের আয়ত্বে রাখাকে আরবী ভাষায় ক্বাহ্র বলে। মহান আল্লাহ এতিমের সাথে এই ক্বাহ্র বাক্যটি ব্যয় করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ বলেন; অতএব, তুমি এতিমের প্রতি কঠোর হয়ো না। (সূরা জুহা: ৯)

৩. মর্যাদার অধিকার: করম বলা হয় কোন প্রকার বিনিময় ছাড়া কাউকে কিছু দেয়া। আল্লাহ বলেন; না কখনই নয়। তোমরা এতিমদেরকে করম তথা সম্মান কর না। (সূরা ফাজর: ১৭)

৪. রূঢ়তা ও দুর্ব্যবহার নিষিদ্ধ: আল্লাহ বলেন; সে তো ঐ ব্যক্তি, যে পিতৃহীনকে রূঢ়ভাবে তাড়িয়ে দেয়। (সূরা মাউন: ২)

৫. খাদ্যের অধিকার: আল্লাহ বলেন: আহার্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও তারা অভাবগ্রস্ত ও এতিম ও বন্দীকে আহার্য দান করে না। (সূরা দাহ্র: ৮)

৬. আশ্রয়দানের অধিকার: আল্লাহ বলেন;তিনি কি তোমাকে পিতৃহীন অবস্থায় পাননি, অতপর তোমাকে আশ্রয় দান করেন নি? (সূরা জুহা: ৬)

৭. বয়ঃপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত উত্তরাধিকার সংরক্ষণ: আল্লাহ বলেন; আর ঐ প্রাচীরটি- ওটা ছিল নগরবাসী দুই পিতৃহীন কিশোরের, এর নিুদেশে আছে তাদের গুপ্তধন এবং তাদের পিতা ছিল সৎ-কর্মপরায়ণ। সুতরাং তোমার প্রতিপালক দয়াপরবশ হয়ে ইচ্ছা করলেন যে, তারা বয়ঃপ্রাপ্ত হোক এবং তারা তাদের ধন ভান্ডার উদ্ধার করুক। (সূরা কাহ্ফ: ৮২)

৮. ইহসানের অধিকার: ইহসান অর্থ ভাল কাজ করাকে বুঝায়, যা ইন’আম তথা পুরস্কার অপেক্ষা ব্যাপক। আর ইহসান, আদল তথা ইনসাফের উপরও অগ্রাধিকার রাখে। বলা হয় ইনসাফ হলো যে পরিমাণ গ্রহণ করা হয়, সে পরিমাণ ফিরেয়ে দেয়া। পক্ষান্তরে ইহসান হচ্ছে বেশী দিয়ে কম গ্রহণ করা। তাই বলা হয় ইনসাফ করা ওয়াজিব। আর ইহসান নফল হলেও এতে সাওয়াব রয়েছে বেশী।

৯. ইনসাফের অধিকার: আল্লাহ বলেন; এবং পিতৃহীনদের প্রতি সুবিচার প্রতিষ্ঠা কর। (সূরা নিসা: ১২৭)

১০. ফাই’র অধিকার: ফাই শব্দের আভিধানিক অর্থ প্রত্যাবর্তন করা। ফুক্বাহাদের নিকট ফাই হলো কাফেরদের যে মাল যুদ্ধ ছাড়া হস্তগত হয়। যেমন খেরাজ, জেযিয়া। এই মালে সকল মুসলমানের অধিকার থাকে। আর এর থেকে এক পঞ্চমাংশ বের করা হয়। আর যে মাল যুদ্ধের পরে অর্জিত হয় তাকে মালে গনীমত বলে। আবার কেউ কেউ ইমামের (খলীফার) (অংশ) ভাগকে মালে ফাই বলেছেন। মোট কথা হলো মুসলমানদের ঘর হতে সংগৃহীত মালই মালে ফাই। এই মর্মে আল্লাহ বলেন; আল্লাহ এই জনপদবাসীদের নিকট হতে তাঁর রাসূল (সাঃ) কে যা কিছু দিয়েছেন, তা আল্লাহর, তাঁর রাসূল (সাঃ)’র এবং রাসূলের স্বজনগণের এবং এতিমদের, অভাবগ্রস্ত ও পথচারীদের, (সূরা হাশর: ৭)

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে