জাব্বার করিম : কুরআন তিলাওয়াত মোমিনের হৃদয় আলোকিত করে। কুরআন তিলাওয়াতের সুর ও শব্দ মোমিনের অন্তরের ভিত কাঁপিয়ে দেয়। যা তিলাওয়াত করলে জান্নাত ও জাহান্নামের চিত্র চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কুরআনই একমাত্র কিতাব, যা পাঠ করার সাথে সাথে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হয়। যারা সব কিছুতেই আল্লাহর ওপর ভরসা করেন, তারাই কুরআন তিলাওয়াত করে আনন্দ পান। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘মোমিন তো তারাই, আল্লাহর কথা স্মরণ হওয়া মাত্রই যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে ওঠে। আর যখন তাদের সামনে কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা তাদের রবের ওপরই ভরসা করে।’ (সূরা আনফাল:২)।
মা-বাবা অমূল্য সম্পদ। যার মূল্য পরিশোধ করে শেষ করা যাবে না। জগৎ-সংসারে মা-বাবার চেয়ে বেশি হিতাকাক্সক্ষী ব্যক্তি দ্বিতীয় আর কেউ নেই। শৈশবে সন্তানের পড়ালেখা ও বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে মা-বাবার যেমন করণীয় রয়েছে, তেমনি মা-বাবার বার্ধক্য বয়সে কিংবা অসুস্থ হলে তাদের জন্য সন্তানের কিছু করণীয় রয়েছে। মা-বাবার মৃত্যুর পরও সন্তানের কিছু করণীয় থাকে। মৃত্যুর পর মানুষের নিজের আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু মৃত ব্যক্তির দুনিয়াতে রেখে যাওয়া নেক সন্তানের দোয়া ও সাদকায়ে জারিয়ার সাওয়াবের দরজা বন্ধ হয় না।
মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের সন্তানেরা কুরআন তিলাওয়াত করবে। তাদের মা-বাবাকে হাশরের দিন নূরের টুপি পরানো হবে। হজরত মুয়াজ জুহানি রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ সা: এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করেছে এবং তাতে যা আছে সে অনুযায়ী আমল করেছে, তাহলে তার মা-বাবাকে কিয়ামত দিবসে একটি (নূরের) তাজ (টুপি) পরানো হবে। যদি সূর্য তোমাদের গৃহে প্রবেশ করত, তাহলে ওই সূর্যের আলো অপেক্ষাও ওই টুপির আলো উজ্জ্বলতর হবে। এখন তোমরা চিন্তা করো, যে ব্যক্তি কুরআনের নির্দেশ অনুসারে আমল করে, তার মর্যাদা ও অবস্থা কত উত্তম হবে?’ (আবু দাউদ, আহমাদ পৃ. ১৮৬)।
যারা কুরআন তিলাওয়াতকারী তারা আল্লাহর পরিবারভুক্ত। কোরআন তিলাওয়াতকারী জগৎ-সংসারের বিশিষ্ট জ্ঞানী ব্যক্তি। তাদের সুপারিশ আল্লাহ কবুল করবেন। কুরআন তিলাওয়াতকারীর মা-বাবাকে আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন। ইবনে আবু তালেব রা: হতে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল সা: এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে এবং উহা মুখস্থ করেছে অতঃপর কুরআন যা হালাল করেছে সে নিজের জন্য তা হালাল করেছে এবং কুরআন যা হারাম করেছে সে নিজের জন্য তা হারাম করেছে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং নিজ পরিবারের এমন দশজনের জন্য তার সুপারিশ কবুল করা হবে। যাদের পরিণাম জাহান্নাম অবধারিত ছিল।’ (তিরমিজি:৫/২৯০৫)।
হজরত আনাস ইবনে মালেক রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ সা: এরশাদ করেছেন, ‘মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক, যারা আল্লাহর পরিবারভুক্ত। সাহাবিরা আরজ করল যে, হে আল্লাহর রাসূল তাঁরা কারা? তিনি বলেন, যারা কুরআন পাঠকারী এবং উহার ওপর আমলকারী। তারা হলেন- আল্লাহর পরিবারভুক্ত ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।’ ( মুসনাদে আবু দাউদ:৩/২২৩৮)।
মা-বাবার মৃত্যুর পর হাত দিয়ে সেবাযতœ করার সুযোগ থাকে না, কিন্তু দোয়া করা কিংবা মাগফিরাত কামনা করার সুযোগ থাকে। তাই মা-বাবার মৃত্যুর পরও তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া যাবে না। মা-বাবার মৃত্যুর পরে সন্তানের দোয়া খেদমত হিসেবে কবর জগতে উপকারে আসে। তখন সন্তানের দোয়াই হলো মা-বাবার প্রতি উত্তম আচরণ। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে, তার সাথে কোনো কিছুকে শরিক করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে।’ (সূরা নিসা:৩৬)।
হজরত আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল সা: এরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তোমাদের বাবার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। কেননা, যে ব্যক্তি আপন বাবার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো সে কুফরি করল। (বোখারি:৬৩১১)। আল্লাহ তায়ালা পরকালে বুঝে কুরআন তিলাওয়াতকারীর মা-বাবাকে আরো উচ্চ মর্যাদা দান করুক। আমিন।
লেখক: ইসলামিক চিন্তাবিদ ও গবেষক