ইসলাম ডেস্ক : আল্লাহর প্রতি ভরসা ছাড়া কোন বান্দাই কোন মুহূর্ত অতিবাহিত করতে পারে না। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ বলেন, ‘আর ভরসা কর সেই জীবিত সত্তার (আল্লাহর) ওপর, যিনি কখনো মৃ'ত্যুবরণ করবেন না।’ (সূরা ফুরক্বান-৫৮)
জাবের বিন আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন, ‘কোন প্রাণী তার নির্দিষ্ট রিজিক পরিপূর্ণরূপে না পাওয়া পর্যন্ত সে মৃত্যুবরণ করবে না। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং রিজিক অনুসন্ধানের জন্য সুন্দর (বৈধ) পন্থা অবলম্বন কর, যা তোমাদের জন্য হালাল করেছেন তা গ্রহণ কর, আর যা হারাম করেছেন তা পরিত্যাগ কর।’ (ইবনু মাজাহ্, হাকেম ও ইবনু হিব্বান)
ওমার (রা.) বলেন, ‘বান্দা এবং তার রিজিকের মধ্যে একটি পর্দা রয়েছে। সে যদি অল্পে তুষ্ট হয় এবং তার আত্মা সন্তুষ্ট হয় তবে তার রিজিক তার কাছে সহজে আগমন করবে। আর যদি সীমা লঙ্ঘন করে এবং উক্ত পর্দাকে ফেড়ে ফেলে, তবে তার নির্দিষ্ট রিজিকের অতিরিক্ত কোন কিছু তার কাছে পৌঁছবে না।’ জনৈক বিদ্বান বলেন, ‘তুমি আল্লাহর ওপর ভরসা কর, রিজিক তোমার কাছে ক্লান্তি ও অতিরিক্ত কষ্ট ছাড়া সহজেই এসে যাবে।’
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা স্মরণ রাখতে হবে যে, বিশুদ্ধভাবে আল্লাহর ওপর ভরসার সাথে আবশ্যক হলো, জীবিকার উপায়-উপকরণ অনুসন্ধান করা ও কাজ করা- ভরসা করে বসে না থাকা। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আর মু’মিনগণ যেন আল্লাহর উপরই ভরসা করে।’ (সূরা মায়েদা-১১)
এ অর্থে একটি হাদিসও বর্ণিত হয়েছে। আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! উটটিকে বাঁধার পর আল্লাহর উপর ভরসা করব? নাকি আল্লাহর উপর ভরসা করে (না বেঁধেই) ছেড়ে দিব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আগে তা বেঁধে দাও, তারপর আল্লাহর উপর ভরসা কর।’ (তিরমিযী)
আল্লাহ তা’য়ালা মুমিন বান্দাদের তাওয়াক্কুলের পতি উদ্বুদ্ধ করে পবিত্র কোরআনে অনেক আয়াত উল্লেখ করেছেন। তার মর্যাদা ও ফলাফল উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাক তবে আল্লাহর উপরই ভরসা কর।’ (সূরা মায়েদা- ২৩) তিনি আরও বলেন, ‘মু’মিনগণ যেন একমাত্র আল্লাহর উপরই ভরসা করে।’ (সূরা তওবা- ৫১)
তিনি আরও এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করবে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হবেন।’ (সূরা ত্বলাক- ৩) তিনি বলেন, ‘যখন তুমি দৃঢ়ভাবে ইচ্ছা করবে, তখন আল্লাহর উপর ভরসা করবে। নিশ্চয় আল্লাহ ভরসাকারীদের ভালোবাসেন।’ (সূরা আল ইমরান- ১৫৯)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হিজরতের সময় মদিনার দিকে যাওয়ার জন্য মক্কা থেকে উল্টো দিকে গমন করেন। আর তা ছিল রাতের আঁধারে। অতপর তাঁরা ‘ছওর’নামক গুহায় আত্মগোপন করেন। আবু বকর (রা.) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হিজরতের ঘটনা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, আমরা যখন ‘গারে ছওরে’ ছিলাম তখন আমি উপর দিকে দৃষ্টি দিয়ে দেখলাম মুশরেকদের পা আমাদের মাথার ঠিক উপরেই। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের কেউ যদি নিজের পায়ের দিকে তাকায় তাহলেই আমাদের দেখতে পাবে।
তখন তিনি আমাকে বললেন, ‘আমাদের দুজন সম্পর্কে তোমার ধারণা কি হে আবু বকর! আল্লাহ আমাদের তৃতীয়জন। অর্থাৎ আমাদের সাহায্যকারী।’ (বুখারী ও মুসলিম)
যে কথা পবিত্র কোরআনে আল্লাহ এভাবে বর্ণনা করেছেন, ‘যখন তাকে কাফেররা বহিষ্কার করেছিল, তিনি ছিলেন দুজনের একজন, যখন তারা গুহার মধ্যে ছিলেন। তখন তিনি আপন সঙ্গীকে বললেন, বিষন্ন হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।’ (সূরা তওবাহ্-৪০)
সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করবে, সে অকল্পনীয়ভাবে তার মর্যাদা লাভ করবে, তার ফলাফল ভোগ করবে। আর সে হবে সর্বাধিক উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষ, সবচাইতে সুখী মানুষ। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।’ (সূরা ত্বালাক-৩)