ইসলাম ডেস্ক : ড. রোজার গারোদির নাম মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র কমবেশি পরিচিত। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফরাসি দার্শনিক। তিনি ছিলেন সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের একনিষ্ঠ ভক্ত ও নাস্তিক। কমিউনিস্ট পার্টির মহাসচিব। বিচক্ষণ এক দার্শনিক। পরে তিনি ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
ফ্রান্সের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে ড. রোজার গারোদির সুনাম ও সুখ্যাতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি তিনি পুঁজিবাদী মানসিকতা বহুদিন বাদ দিতে পারেননি। ইসলামবি'দ্বে'ষী পথচলাকে সে সময় কৃতিত্বের পরিচায়ক বলে মনে করা হতো। এ ধারণা বেশি দিন তার মাঝে আসন গেড়ে বসে থাকতে পারেনি।
ড. রোজার গারোদি একসময় আঁচ করতে পারেন যে পুঁজিবাদী গোষ্ঠীর একটি জঘন্য দিক হচ্ছে, আধুনিক বিশ্বের বিনির্মাণে ইসলামী সভ্যতার অবদানকে হেয় করা। এই বিষয়টিকে কূটনীতির মূল মানদ'ণ্ড হিসেবে গ্রহণ করে পুঁজিবাদ। তা ছাড়া জাতীয়তাবাদী বিভেদ সৃষ্টির মাধ্যম মুসলিম জাতি-গোষ্ঠীর পশ্চাৎপদতার পথ জোরদার করার কাজটি পুঁজিবাদের অন্যতম লক্ষ্য।
এটা এ কারণে যে মুসলিম বিশ্বের ঐক্য ও সংহতি যাতে কখনো স্থাপিত হতে না পারে। আর এই কৌশলই পুঁজিবাদী শ্রেণির স্বার্থরক্ষার বা প্রতিষ্ঠার একমাত্র হাতিয়ার। এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণে একসময় ড. রোজার সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের ওপর বী'তশ্র'দ্ধ হয়ে পড়েন। এই সময় তিনি বিভিন্ন ধর্মের পুস্তকাদি পড়তে শুরু করেন। একই সঙ্গে তুলনামূলক গবেষণা ও পর্যালোচনাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্রহণ করেন।
এর ফলে এমন একটি সত্য তিনি উপলব্ধি করতে সক্ষম হন যে গোটা বিশ্বের জ্ঞান ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যাদের দান ও ভূমিকা সবচেয়ে বেশি তারা সবাই ছিলেন মুসলমান। মানুষের উন্নতি ও অগ্রগতির এমন কোনো দিক নেই, যেখানে মুসলমানদের পদচারণ ঘটেনি। মুসলমানরা সব ক্ষেত্রে ছিলেন অগ্রণী ভূমিকায় অবতীর্ণ। তিনি এটাও লক্ষ করেন যে এ সত্যটিকে চাপা দেওয়ার জন্যই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এই সত্য ও বাস্তবতায় ড. গারোদি খুবই ব্যথিত ও ম'র্মা'হ'ত হন। ফলে তিনি ইসলামকে জানার ও বোঝার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। তিনি এটাও উপলব্ধি করেন যে সাম্রাজ্যবাদীরা ১৮৬১ সাল থেকে গোটা বিশ্বকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার লক্ষ্যে নানা রকম জঘন্য ফন্দি-ফিকির এঁটে যাচ্ছে। যার ফলে দুনিয়ার মানুষ শোষণ, ব'ঞ্চ'না ও নি'র্যা'তনের শি'কা'র হচ্ছে। তবে এ অন্যায়বোধ সাম্রাজ্যবাদীদের লোভ ও হিং'সার পথ থেকে সামান্যতম দূরেও সরাতে পারেনি।
এরপর ড. গারোদি কোরআন শরিফ পাঠে গভীর মনোযোগী হন। এ পর্যায়ে তিনি এমন এক আলোর সন্ধান পান, যা তাকে ইসলাম গ্রহণে আগ্রহী করে তোলে। ফলে ১৯৮২ সালে ২৭ বছর বয়সে সপরিবারে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণ করার পর গারোদি ইসলামের প্রচার ও প্রসারের কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেন। সত্যের মহাজ্ঞান রশ্মির ঝলক তাকে পথ চলতে সহায়তা করে।
তিনি ইসলামের মর্মবাণী বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে সচেষ্ট হন। জাগতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আত্মিক শক্তির বিকাশকে খুবই গুরুত্বসহকারে উপলব্ধি করার জন্য তিনি জ্ঞানীসমাজকে একান্তভাবে আহ্বান জানান। ড. রোজার গারোদির অকাট্য যুক্তি ও ক্ষুরধার লেখনীর প্রভাব সাম্রাজ্যবাদী চক্রকে ভাবিয়ে তোলে। তাই তারা নি'র্ম'ম প্র'তিশো'ধ গ্রহণের পথ বেছে নিতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি।
এর পরও ইসলামের এই অতন্দ্র সৈনিক তার অভীষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে মোটেই পিছ-পা হননি। বরং অকুতোভয়ে তিনি এগিয়ে যান সম্মুখ অভিমুখে। তার অবিস্মরণীয় দৃঢ়তা ও আন্তরিকতার ফলে পাশ্চাত্যজগতে ইসলামের বিজয় কেতন আরো উচ্চতায় উন্নীত হতে সক্ষম হয়েছে। ২০১২ সালে এই মনীষী ই'ন্তে'কাল করেন।
লিখেছেন ড. ইকবাল কবীর মোহন, কালেরকণ্ঠ।