বয়স ১১৯ ছুঁই ছুঁই। যে বয়সে মানুষ বিছানায় মৃ’ত্যুর প্রহর গোণেন। সেই বয়সে তিনি এখনো হেঁটে চলেন। চশমা ছাড়াই সবকিছু ভাল ভাবে দেখতে পান। কোনো ওষুধ খেতে হয় না তাকে। নিয়মিত ফজরের নামাজের পর খালি চোখে কোরআন শরীফ তেলোয়াত করেন। শতবর্ষী এই মানুষটি এখন কুড়িগ্রামে আলোচনার বি’ষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি কুড়িগ্রাম সফরে এসে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) শেখ মুজিবুর রহমান এনডিসি দেখা করলেন শতবর্ষী এ মানুষের সঙ্গে।
এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জে’লা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন, কুড়িগ্রাম জে’লা পরিষদের প্রধান নির্বাহী আলেয়া খাতুন, জে’লা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মণ্ডল, জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান প্রমুখ।
রাজারহাট উপজে’লা নির্বাহী অফিসার মুহ. রাশেদুল হক প্রধান এই বয়োবৃদ্ধকে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের স’চিবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এসময় জে’লা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন স’চিবের মাধ্যমে তাকে অর্থসহায়তা ও উপহার সামগ্রী প্রদান করেন।
শতবর্ষী জোবেদ আলী জানান, জাতীয় পরিচয়পত্রে তার জন্ম তারিখ ১৯০০ সালের ২৫ অক্টোবর হলেও তার বয়স আরও বেশি হবে। বাড়ী কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজে’লা সদর ইউনিয়নের মেকুরটারী তেলীপাড়া গ্রামে। বাবা মৃ’ত: হাসান আলী। স্ত্রীর নাম ফয়জুন নেছা (৮৭)। ব্যক্তিগত জীবনে ৩ পুত্র ও ৪ কন্যার জনক তিনি।
আলাপচারিতায় জোবেদ আলী জানান, যুবক বয়স থেকে তিনি নিজস্ব দীঘির মাছ, বাড়িতে পালিত পশুর মাংস, দুধ, ডিম খেতেন। আবা’দী জমির ধানের ভাত, খাঁটি ঘি, সরিষার তেল, রাসায়নিক ও সারবিহীন শাক-সবজি উৎপাদন করে সেটাই খেতেন। এই বয়সে ছোট-খাটো সর্দি-জ্বর ছাড়া বড় ধরনের কোনো রোগ-ব্যাধি তার হয়নি।
তিনি জানান, তিনি শতবর্ষ আগে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন বলে জানান। স্পষ্ট উচ্চাড়ণে কোরআন শরীর পড়েন জোবেদ আলী। পত্রিকা ও বইও পড়তে পারেন। রাতে কুপি জ্বালিয়ে কোরআন মজিদ পড়তে তার খুব ভাল লাগে।
তিনি আরও বলেন, কোনোদিন ফজরের নামাজ ক্বাজা করি নাই এবং ফজরের নামাজের পর কোরআন তেলোয়াত করি। তাই হয়তো আল্লাহ পাক আমাকে সুস্থ রেখেছেন। এজন্য আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া। এছাড়াও পত্রিকা পড়াই তার এখন প্রধান নে’শা বলে জানান জোবেদ আলী।
মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) শেখ মুজিবুর রহমান এনডিসি জানান, ‘ব্যক্তি জীবনে অনেক প্রয়োজনীয় কাজের ভিড়ে আমরা প্রবীণ এই মানুষগুলোকে তেমন একটা গুরুত্ব দেই না। কিন্তু এই প্রবীণ মানুষগুলোই এক সময় সংসারে প্রাণপাত করে সন্তানদের মুখে খাবার জুগিয়েছেন। মিটিয়েছেন সমস্ত আবদার।
তিনি বলেন, বৃদ্ধ হয়ে গেলে তাদের দিকে তাকানোর যেন কারো সময় হয় না। পারিবারিক মুল্যবোধ তৈরি, সামাজিক নীতি নৈতিকতা, মানবিক আচরণই পারে নবীন ও প্রবীণদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করে দিতে।