এস. এম শরীফ মিয়া, রায়পুরা (নরসংদী) : তাবলীগের মুসল্লিদের দাওয়াত আমল করে স্বপ্ন দেখে সনাতন হিন্দু ধর্ম ছেড়ে স্ব-পরিবারে ইসলাম গ্রহণ করেছেন নয়ন চন্দ্র বিশ্বাস ওরফে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ (২৪) নামে এক যুবক। তিনি উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের নলবাটা ঝালুপাড়া গ্রামের তপন চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে। নয়নের স্ত্রী শুভারাণী ময়মনসিংহ কুলিয়ারচর খাইলশা গ্রামের নিতাই চন্দ্র বর্মণ এর মেয়ে।
জানা গেছে, গতকাল সোমবার নয়ন চন্দ্র বিশ্বাস (মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ),তার স্ত্রী শুভারাণীসহ (আমেনা বেগম) আড়াই বছরের শিশুপুত্রকে (মোহাম্মদ ইব্রাহীম) নিয়ে স্বেচ্ছায় সনাতন হিন্দু ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তারা বর্তমানে উপজেলার করিমগঞ্জ মোড় বজলু মিস্ত্রীর বাড়ীতে ভাড়াবাড়ীতে বসবাস করছেন এবং হাসনাবাদ বাজারে টেক্সটাইল মিলে শ্রমিকের কাজ করছেন।
মুসলমান হওয়ার সময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ উভয় পরিবারের পিতা-মাতাসহ আত্মীয়-স্বজন উপস্থিত ছিলেন।
নব-মুসলিম আব্দুল্লাহ বলেন, ৩/৪ বছর আগে বাড়ীর পাশেই ভাটিবদরপুর গ্রামের এক মুদি দোকানে মুসলিম যুবকদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এসময় স্থানীয় মসজিদের একটি তাবলীগ দল মুসল্লিরা নামাজের দাওয়াতি কাজ করছে। মুসলমান যুবকদের ডেকে আমার পাশেই নামাজের দাওয়াত করেন; সবার সাথে কথা বলা শেষে তখন আমাকে একজন ডেকে দাওয়াত দিতে চেষ্টা করেন।
তিনি বলেন, এসময় আমি নিজেকে বিধর্মী পরিচয় বলতেই প্রতি উত্তরে হুজুর বলেন, তুমি বিধর্মী বলে কি হইছে তুমি কি মানুষ না, কিছু নিয়ম কানুন দিলে পালন করতে পারবা, তুমি কি হাত-পা ধৌত কর? হ্যাঁ বলার হুজুর বললেন, তাহলে রাতে ঘুমানোর আগে হাত-পা ধুয়ে ঘুমানোর আগে শুধু বলবা, হে সৃষ্টিকর্তা তুমি আমাকে সঠিক রাস্তা দেখাও, সঠিক ধর্ম দেখাও। ৪১ দিন এভাবে আমল করলে তুমি সঠিক রাস্তা খুঁজে পাবে।
কথামত কাজ শুরু করার ৫/৬ দিনের মাথায় স্বপ্নে গোরস্থান (বালুয়াকান্দি মাদরাসা কবরস্থান) দেখতে পাই, গোরস্থানে হুজুরকে কোরআন তেলাওয়াত করতে দেখি এবং কবরের মানুষের মাঝে আনন্দ নুরের আলো ঝলমল করতে দেখি।
এভাবে বহুদিন স্বপ্নে ইসলামের ভালো নানান বিষয় দেখি, দেখি নামাজ পড়ছি। তার কিছুদিন পর আমি কোরআন শরীফ কিনে বাসায় গোপনে বাংলা অনুবাদসহ পড়তে থাকি। এভাবে গত কয়েকদিন ধরে আবার স্বপ্ন দেখি, বৃহস্পতিবার ঠিক ভোরেই ঘুম ভেঙ্গে যায়, আমি ঘুম থেকে উঠে করিমগঞ্জ মোড়ের মুদি টং দোকানদার নয়ন মিয়ার কাছে বিষয়টি খুলে বলেছি।
তারপর তিনি স্থানীয় মাদরাসার হুজুরকে নিয়ে এসে কালেমা পড়ান এবং নরসিংদী নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে ধর্মস্তানান্তরসহ ইসলামী শরীয়া মোতাবেক আমি মুসলমান হই। পরে আমার স্ত্রী সে নিজেও আমার কথা শুনে উভয় পরিবারের সম্মতিতে আমরা মুসলমান হই এবং পুনরায় মুসলমান শরীয়াহ মোতাবেক নতুনভাবে স্ত্রীকে বিবাহ পড়ান। তবে আমাদের পরিবারে প্রথম এ বিষয়ে নানা জটিলতা সৃষ্টি হলেও বর্তমানে সবাই মেনে নিয়েছে।
বজলু মিস্ত্রী, সফিকুল ইসলাম ও মমতাজ উদ্দিন বলেন, আমরা এই পরিবারকে সকলেই সহযোগিতা করবো।-নয়া দিগন্ত