মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা: মুসলিম অধ্যুষিত ‘প্যারাডাইজ আইল্যান্ড’ কোকোস (কিলিং) দ্বীপপুঞ্জ। ২৮টি প্রবালদ্বীপের দুটি কক্ষপথ নিয়ে গঠিত নজরকাড়া এই দ্বীপকে স্বচক্ষে দেখলে অনেকেই প্যারাডাইজ বা স্বর্গ বলে ফেলে। কোকোসের বিভিন্ন ডকুমেন্টারি শুরু করা হয় ‘ওয়েলকাম টু প্যারাডাইজ’ দিয়ে। ছোট এই মুসলিম দেশে স্থানীয় মানুষের চেয়ে পর্যটকের ভিড়ই বেশি থাকে।
১৬২২ সালে আবিষ্কৃত হয় কোকোস দ্বীপপুঞ্জ এবং ১৭০৩ সালে খোঁজ পাওয়া যায় কিলিং দ্বীপের। পরে ১৮০৫ সালে কোকোস দ্বীপপুঞ্জ ও কিলিং দ্বীপ মিলিত হয়ে উনিশ শতকে একটি যৌথ দ্বীপরাষ্ট্র গঠন করে, আর নাম দেওয়া হয় কোকোস-কিলিং দ্বীপ।
এই অঞ্চলের দুটি অংশ রয়েছে। এর মধ্যে একটিকে বলা হয় ওয়েস্ট আইল্যান্ড, অন্যটি হোম আইল্যান্ড। দ্বীপটির আয়তন মাত্র ১৪ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ৬০০। এর মধ্যে ১৪০ জন বাস করে ওয়েস্ট আইল্যান্ডে, অন্যরা থাকে হোম আইল্যান্ডে। এদের মধ্যে ৭৫-৮০ শতাংশই মুসলমান। অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো এরাও বেশ ধর্মসচেতন। স্থানীয় মুসলমান ও মুসলিম পর্যটকদের জন্য রয়েছে হোম আইল্যান্ড ও ওয়েস্ট আইল্যান্ড নামের দুটি বড় মসজিদ।
এখানকার প্রায় ৬৮.৮ শতাংশ মানুষ মালয় ভাষায় কথা বলে। ইংরেজি ভাষায় কথা বলে ২২.৩ শতাংশ। অন্যান্য ভাষায় কথা বলে ৮.৯ শতাংশ। (ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক)
এ অঞ্চলটি অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল সরকারের অবকাঠামো ও আঞ্চলিক উন্নয়ন বিভাগের দ্বারা পরিচালিত হয়। স্থানীয় শাইবার কাউন্সিলের মাধ্যমে দ্বীপপুঞ্জের একটি স্বতন্ত্র সরকার রয়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুলিশিংসহ জনসাধারণের অনেক সেবা ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া রাষ্ট্র কর্তৃক সরবরাহ করা হয়।
১৬০৯ সালে এই দ্বীপটি আবিষ্কার করেন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির অধিনায়ক উইলিয়াম কিলিং। কিন্তু উনিশ শতকের প্রথম দিকেও এখানে কোনো বসতি ছিল না। উনিশ শতকের শুরুতে এখানে একজন স্কটিশ ব্যবসায়ী—ক্লুনিস রস বসতি স্থাপন করেন। তারপর তাঁর ব্যবসার কাজে মালভূমি থেকে কিছু শ্রমিক আনা হয়েছিল। দ্বীপের বর্তমান জনসংখ্যার বেশির ভাগই একসময় মালভূমি থেকে আসা।
১৮৫৭ সাল থেকে দেশটি ব্রিটিশ দ্বারা শাসিত হচ্ছিল। ১৯৫৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে স্থানান্তরিত হয়।
মুসলিমবান্ধব দেশ ও হালাল খাবারের নিশ্চয়তা থাকায় সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে দেশটি ভ্রমণের জন্য বেশ জনপ্রিয়। তা ছাড়া অন্য ধর্মের মানুষ এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে যায় কোকোস দ্বীপে।