শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৩:৪০:০৭

জেনে নিন, বিশ্বনবী (সা.)-এর অলৌকিক সাফল্য

জেনে নিন, বিশ্বনবী (সা.)-এর অলৌকিক সাফল্য

ইসলাম ডেস্ক : ঈদে মিলাদুন্নবী তথা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর পবিত্র জন্ম-বার্ষিকী উপলক্ষে নানা শোভাযাত্রা, সমাবেশ এবং আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং হচ্ছে এখনও। এ উপলক্ষে ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পালিত হচ্ছে ইসলামী ঐক্য সপ্তাহ। বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এ মহানমানবের জীবনের নানা দিক নিয়ে পত্র-পত্রিকায় এবং নানা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে বিভিন্ন প্রবন্ধ। প্রশ্ন হ’ল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)-এর সবচেয়ে বড় মু’জিজা বা অলৌকিক সাফল্য কী? চাঁদকে দুই টুকরো করা? না, এর চেয়েও বড় মু’জিজা বা অলৌকিক সাফল্য হল, অসভ্য ও বর্বর আরব জাতির চরিত্রকে বিস্ময়করভাবে বদলে দেয়া। বিশ্বনবী (সা)-এর আহ্বানে এক আল্লাহতে বিশ্বাসী তথা মুসলমান হওয়ার আগে কেমন ছিল আরবরা? আমীরুল মু’মিনিন হযরত আলী (আ)-এর বর্ণনাসহ নানা নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী, সে যুগে আরবরা এমন কোনো অনাচার নেই যা তারা করত না। তারা নিজেরা নানা মূর্তি বানিয়ে সেইসব মূর্তির পূজা করত। এক আরব গোত্রের লোকদের সখ হল তারা মিষ্টি দিয়ে মূর্তি বানিয়ে সেই মূর্তির পূজা করবে! তাই খেজুরের সঙ্গে তেলসহ নানা উপাদান মিশিয়ে বানানো হল মূর্তি! এরপর শুরু হল পূজা। কিন্তু একই সময়ে শুরু হল দুর্ভিক্ষ। খাদ্যাভাব ও ক্ষুধার চাপ সইতে না পেরে শেষ পর্যন্ত সেই মিষ্টি ‘খোদাকে’ই খেয়ে ফেলে তারা! সে সময় আরবরা সাপ ও ইঁদুরসহ নানা ধরনের অখাদ্য ও কুখাদ্য খেত (মহানবীর পূর্বপুরুষদের একটি ধারা ছাড়া প্রায় সবাই)। প্রায় সব ধরনের প্রাণীই তারা খেত! আরব দেশে রক্তপাত ও যুদ্ধ ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। আরবদের বেশিরভাগই তখন জীবিকা নির্বাহ করতে চুরি-ডাকাতি ও লুটপাটের মাধ্যমে। একবার এক আরব গোত্র গেল অন্য এক গোত্রের ঘর-বাড়ি লুট করতে। লুটপাট করা শেষ করে নিজেদের আবাসে এসে দেখল যে তাদের ঘর-বাড়ি লুট করে গেছে অন্য কোনো গোত্র! আরবদের মধ্যে ব্যভিচার ছিল খুবই সাধারণ ব্যাপার। নারীদের মধ্যে নানা ধরনের অদ্ভুত বিয়ের প্রথাও প্রচলিত ছিল। যেমন, এক নারীর সঙ্গে দশজন বা তার চেয়েও বেশি পুরুষের বিয়ে! এক্ষেত্রে যেসব অবৈধ সন্তান জন্ম নিত তার পিতা কে- সেটা নির্বাচন করত ওই নারী! কোনো কোনো পুরুষের যখন আর সন্তান হত না তখন তারা নিজ স্ত্রীকে পাঠাত অন্য কোনো পুরুষের সঙ্গে রাত্রি যাপন করতে। এটাকে বিশেষ ধরনের বৈধ বিয়ে বলে মনে করা হত! অনেকে নিজ স্ত্রীকে সুদর্শন কোনো যুবকের সঙ্গে শয্যা-সঙ্গী করতে দিত এই আশায় যে তাতে তারা সুদর্শন শিশুর অধিকারী হবে! আরবরা তখন কন্যা শিশু হওয়াকে লজ্জাজনক বলে মনে করত এবং কন্যা শিশুকে জীবন্ত কবর দিত। যারা নিজ সন্তানের সঙ্গে এমন নৃশংস আচরণ করতে পারত তারা অন্য পরিবার, প্রতিবেশী ও অন্য গোত্রের সঙ্গে কেমন আচরণ করত তা সহজেই অনুমান করা যায়। অথচ বিশ্বনবী (সা) তাঁর শ্রেষ্ঠ চরিত্র ও রেসালাতের আহ্বানের মাধ্যমে আরব জাতির মধ্যে আনেন বৈপ্লবিক পরিবর্তন। আরব নও-মুসলিমদের আগের আর পরের চরিত্রের মধ্যে পার্থক্যকে তুলনা করলে তাতে আসমান ও জমিনের মত ব্যবধান দেখা যাবে। এই আরবরাই মুসলমান হওয়ার পর যুদ্ধক্ষেত্রে জখম হয়ে চরম পিপাসায় যখন মৃত্যুর সম্মুখীন হত তখন কেউ তাদের পানি দিতে চাইলে সে বলত: আমার অমুক আহত ভাই সম্ভবত আরো বেশি তৃষ্ণার্ত, তাকে আগে দিন! অন্য আহত আরব মুসলমানও বলতেন একই কথা! (সুবহানাল্লাহ!) গতকাল তেহরানের জুমা নামাজের অস্থায়ী খতিব এবং ইরানের (সাংবিধানিক) অভিভাবক পরিষদের চেয়ারম্যান আয়াতুল্লাহ আহমাদ জান্নাতি প্রথম খুতবায় এইসব বক্তব্য তুলে ধরেন। একজন প্রভাবশালী ও বিজ্ঞ আলেম হওয়া সত্ত্বেও তিনি এই খুতবার শুরুতে ও শেষে অত্যন্ত সবিনয়ে জানান যে বিশ্বনবী (সা)’র মত মহান ব্যক্তিত্বের পরিচয় তুলে ধরার মত যোগ্যতা তার মত ‘বড় পাপীর’ নেই বলে তিনি দুঃখিত! তবুও কর্তব্যের খাতিরে এ মহামানবের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য কিছু কথা তিনি বললেন! পরিশেষে তিনি পরকালে মহানবী (সা) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের সাহচর্য পাবার জন্য মুনাজাত করেন। (আমিন) সূত্র: রেডিও তেহরান ২৬ ডিসেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে