ফয়জুল্লাহ আমান : গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে ঘটে গেল চ'র'ম দা'ঙ্গা। হিন্দু মুসলিম হা'নাহা'নির এক চ'র'ম রূপ পরিল'ক্ষিত হলো ভারতের রাজধানীত। এনআরসি ও সিএএ-র প্রতিবাদে দীর্ঘ দিন ধরে মুসলমান ও সাধারণ হিন্দুরা আন্দো'লন করে আসছিল দিল্লিসহ ভারতের সব রাজ্যেই। বিজেপি এসব আন্দো'লন ব'ন্ধ করতে ব্য'র্থ হয়ে বি'ক'ল্প পথ হিসেবে গ্রহণ করে সা'ম্প্রদা'য়িক স'হিং'সতা সৃষ্টির মত ম'ন্দ দৃ'ষ্টা'ন্ত।
এই দিল্লিতে এর আগে ১৯৪৭ সালেও দাঙ্গা হয়েছে হিন্দু-মুসলিমে। তারপর আরও বহুবার হাঙ্গামা হয়েছে সেখানে। বৃটিশরা সা'ম্প্রদা'য়িকতার বি'ষ দেড়শ বছরে ছড়িয়ে দিয়েছিল পুরো ভারতবর্ষে। তার ছোয়া বোঝা যাচ্ছে আজও রয়ে গেছে পূর্ণ মাত্রায়। সাম্প্রদা'য়িকতার দীর্ঘ ইতিহাস বর্ণনা করার সময় নেই। এখনও দিল্লি জ্ব'লছে মুসলিম বি'দ্বে'ষের আ'গু'নে। অসংখ্য মানুষের ঘর পু'ড়ে'ছে। মা'রামা'রি হয়েছে লাগাতার ৪৪ ঘণ্টা।
উ'গ্রবা'দি হিন্দুরা মুসলমানদের বাড়ি ঘর জ্বা'লিয়েছে। লা'থি ঘু'ষি ধা'ক্কা দিয়ে আ'গু'ন জ্বা'লিয়ে কু'পিয়ে পি'টিয়ে হ'ত্যা করেছে সাধারণ মুসলিমদের। ভা'ঙ'চুর করেছে দোকানপাট কারখানা। হা'মলা চালিয়েছে মসজিদেও। মিনার ভে'ঙ্গে হনুমানের পতাকা টানানোর মত ঘৃ'ণ্য অ'পক'র্মও করেছে। উ'গ্রবা'দের কোনো ধর্ম হয় না। এদের পরিচয় হিন্দু বা অন্য কোনো ধর্ম নয়। এদের পরিচয় একটাই। আর তা হচ্ছে এরা সবাই ক'ট্ট'র সা'ম্প্রদা'য়িক চ'ক্র।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ দিল্লির ঘটনায় ম'র্মাহ'ত। মুসলিম ম'রে'ছে বলেই যে আমরা ক'ষ্ট পাচ্ছি তা নয়। যে কোনো ধর্মের মানুষই এমন অ'ন্যা'য় নি'পী'ড়নের শি'কার হলে মুসলিম হৃদয় না কেঁ'দে পারে না। একটা পশুর ক'ষ্টও মুসলমানের স'হ্য হয় না। বাঙালি মুসলমান তো অনেক সংবে’দনশীল। এমন এক পরি'স্থি'তিতে বাংলাদেশের কিছু নামধারি মুসলিম সা'ম্প্রদা'য়িক শ'ক্তি মাথা তুলে দাঁড়ানোর চালাচ্ছে অ'পচে'ষ্টা।
ভারতের বি'রু'দ্ধে রীতিমত যু'দ্ধ ঘোষণা দিয়ে ফেলেছে তারা। গাযওয়ায়ে হিন্দের ডাক দিচ্ছে প্রতিটি সমাবেশে। যে কোনো সময় ভারতে আ'ক্র'মণ করবে বলে স্ট্যা'ন্টবা'জি করে বেড়াচ্ছে এরা। গাযওয়ায়ে হিন্দের ব্যা'খ্যায় অ'দ্ভূ'ত সব কথা প্রচার করে বেড়াচ্ছে প্রপা'গা'ণ্ডাকারীরা। ফেসবুক, গুগল, ইউটিউবে কয়েকটি জাল হাদীস দিয়ে বি'শৃং'খলার পরিবেশ সৃষ্টির অ'পপ্র'য়াস প্রতি দিন বেড়ে চলেছে।
সহি হাদিসে রাসূল (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে গাযওয়ায়ে হিন্দের একটি ভবি'ষ্যতবাণী করেছিলেন। ইবনে কাসীর রহ. তার আননিহায়া গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ২০ নং পৃষ্ঠায় স্পষ্ট বলেছেন, মুআবিয়ার শা'সনামলে ৪৪ হিজরি সনে নবীজীর সে ভবি'ষ্যদ্বা'ণী বাস্তবায়িত হয়েছে। নবীজীর উদ্দেশ্য ছিল সাহাবিদের সুসংবাদ দেয়া। তারা কোন কোন যু'দ্ধে জয় লাভ করবে তার বিবরণ ছিল এধরনের বর্ণনায়।
এসব বর্ণনা নিয়ে সাধারণ মানুষকে নানান ভাবে বি'ভ্রা'ন্ত করা হচ্ছে। আমাদের কোনো কথায় ভারতের মুসলমানরা আরও বি'প'দে পড়ে কি না তা ভাবা উচিত। তাদের উপকার করতে না পারলেও আমাদের দ্বারা নি'পী'ড়ি'ত মুসলিমদের কোনো ক্ষ'তি যেন না হয়। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বাবরি মসজিদ শহীদ হওয়ার প্রেক্ষাপটে আমাদের কিছু আলেম ভারত অভিমুখে লং'মা'র্চের ডাক দিয়েছিল।
সাধারণ মুসুল্লিদের নিয়ে ভারতে আ'ক্র'মণের নিয়তেই তারা বের হয়েছিলেন। আমি তাদের স'মালো'চনা করব না। মূলত এ হচ্ছে আমাদের দেশের উ'গ্রপ'ন্থী আলেমদের সারল্যের চিত্র। এতে ভারতে দা'ঙ্গা ফ্যা'সাদ বাড়া ছাড়া কমেনি। মূলত এখন বা'স্তুহা'রা দিল্লির মুসলিমদের প্রয়োজন অর্থ সাহায্যের। ব্রিটেন অ্যামেরিকা থেকে মুসলিমরা সাহায্য করা শুরু করেছে। আমাদের দেশ থেকেও বিভিন্ন জনের উদ্যোগে সাহায্য তহবিল গঠন করা যেতে পারে।
ভারতের জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ দা'ঙ্গার শি'কা'র মুসলিমদের ইতোমধ্যেই শুরু করেছে খাবারের ব্যবস্থা করা। শ্রমজীবি দরিদ্র মুসলিমদের দোকানপাট উ'চ্ছে'দ করেছে উ'গ্র হি'ন্দু'ত্ববা'দীরা। তাদের নতুন কর্ম সংস্থানের জন্যও প্রয়োজন পর্যা'প্ত অর্থ সহায়তার। গাযওয়ায়ে হিন্দের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা ভারতে প্রবেশ করলে প্রথম বাধার সম্মুখিন হবো ভারতের সাধারণ মুসলমানদের।
জুতো পেটা করে আমাদের বাংলাদেশ ফেরত পাঠাবে ভারতীয় মুসলিমরাই। বাঙালি বিবে'কশূ'ন্য ধ'র্মা'ন্ধদের মত তারা নি'র্বো'ধ নয়। আপনি পুরো ভারতের যে কোনো মুসলিমকে জি'জ্ঞে'স করুন গাযওয়ায়ে হিন্দ সম্পর্কে। সেখানে কেউ এসব শ্লো'গা'নে বি'ভ্রা'ন্ত হবার মত নেই। নরেন্দ্র মোদি মুজিববর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যেন না আসতে পারেন সেজন্য বড় বড় হুং'কার ছোড়া হচ্ছে। এ মুহূর্তে ডান বাম কেউ মোদিকে পছন্দ করছেন না। কিন্তু কথা হচ্ছে যেটা গুরুত্বপূর্ণ নয় তা নিয়ে মাতামাতি না করে কাজের কাজ করা উচিত।
মোদি বাংলাদেশে আসলে যে মহাভারত অ'শু'দ্ধ হয়ে যাবে এমন কোনো ব্যাপার নেই। মোদিকে ঠে'কিয়ে দিতে পারলেই যে সাম্প্র'দায়ি'কতা ভারত থেকে মুছে যাবে এমন নয়। অনেকেই ভারতীয় পণ্য ব'র্জনেরও ডাক দিচ্ছেন। চীনের উইঘুরে যখন মুসলমানদের নি'র্যা'তন করা হচ্ছিল তখন পাকিস্তান সরকার তার প্র'তিবা'দে কিছুই বলেনি। চীন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখার স্বার্থে সব সময় চীনের মুসলমানদের নি'র্যা'তনে তারা নিরব ভূমিকা পালন করেছে।
বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানের মত আচরণ করা অ'সম্ভব মনে হয় না। এসব কিছু দু'দেশের সরকারের ব্যাপার। এ নিয়ে হা'ঙ্গা'মা বা'ধানোর চেয়ে আমাদের সাধারণ মানুষের করণীয় কাজগুলি আমরা করতে পারি। হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতির পক্ষে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে এই এখনই।
বাস্তবে ভারতে মাত্র ৪৪ ঘণ্টার অ'ত্যা'চার চলেছে। আর চীনে বছরের পর বছর ধরে দশ লাখ উইঘুর মুসলিমকে অব'র্ণ'নীয় অক'থ্য নি'র্যা'তন চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেসব নি'র্যা'তনের বর্ণনা দেয়াও ক'ষ্টকর। বিশ্ব মিডিয়ায় উইঘুর মুসলিমদের নি'র্যা'তনের নানা খবর পাওয়া যাচ্ছে। মূলত দিল্লির মুসলমানদের জন্য এসব ভ'ণ্ডের কোনো দরদ নেই। আগে থেকে পুষে রাখা ভারত বি'দ্বে'ষ প্রকাশের সুযোগকে তারা কাজে লাগাচ্ছেন।
ভারত বিদ্বেষ ও পাকিস্তান প্রেমকেই তারা তাদের ধর্ম ও রাজনীতি বানিয়েছেন। চীন ও ভারত উভয়ের সা'ম্প্রদা'য়িক শক্তির বি'রু'দ্ধে প্র'তিবা'দ হওয়া উচিত। প্র'তিবা'দের ভাষা ব্যবহারে ভারসাম্য র'ক্ষা উভয় ক্ষেত্রেই আব'শ্যক। গুজরাট রায়েটের পর বাংলাদেশের কোনো কোনো সেবা সংস্থা সাহায্য পাঠিয়েছিল। এবারেও প্রতিটি ইসলামি দল ও এনজিওগুলি এ লক্ষ্যে বিশেষ সাহায্য তহবিল গঠন করতে পারে।
ইসলামী দলগুলো এদেশের হিন্দুদের সঙ্গে নিয়ে এমন কোনো উদ্যোগ নিতে পারলে আরও সুন্দর হয়। অবশ্যই আমাদের দেশের অসা'ম্প্রদা'য়িক রূপটির উন্নয়নের কথাও ভাবা উচিত সবার। সারা বিশ্বে যেন আমাদের সুনাম রক্ষা পায় সাম্প্র'দায়ি'কতাকে র'দ করার ব্যাপারে। এই কদিন আগেও তো বি.বাড়িয়ায় মন্দির ভা'ঙ্গা হয়েছে। নিজেদের চরিত্র ঠিক করে হুং'কা'র দেয়া উচিত উ'গ্রবা'দীদের বি'রু'দ্ধে।
হিন্দু হোক বা মুসলিম- উ'গ্র'তাকে রু'খতে না পারলে উপমহাদেশে শান্তিতে বাস করা যাবে না। গঙ্গা যমুনার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দেশ ভারতের সাধারণ মানুষ আজও অসা'ম্প্রদা'য়িক। সাম্প্র'দা'য়িক শক্তি সেখানে পুরোপুরি ছেয়ে যাবার মত আ'শং'কা নেই। দিল্লিতে যে ঘটনা ঘটেছে তা নি'ন্দ'নীয় নিঃ'সন্দে'হে। কিন্তু আশার কথা এই যে, এ অবস্থা দিল্লিতে স্থায়ী হতে পারবে না কোনো ভাবেই। দিল্লি কলকাতার মুসলিমদের ভালো অবস্থা দেখতে চাইলে আমাদেরকে আরও সা'বধা'নী হতে হবে।
আমাদের প্রভাব পাশের দেশে অবশ্যই পড়বে। এমন প্রভাব সৃষ্টির ক্ষ'মতা আমরা কি অর্জন করিনি? মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে বসে হুং'কা'র ছাড়াই একমাত্র কাজ নয়। প্রতিবেশি দেশের মুসলমানদের দুঃখ-কষ্ট দূর করার কথা আমাদের ভাবা উচিত। হিন্দুর দেশে থেকে মুসলিমরা হিন্দু হয়ে যায়নি। তাদেরও হক রয়েছে সুন্দরভাবে বসবাসের। আল্লাহ আমাদেরকে পৃথিবীর সব অধিকার ব'ঞ্চি'ত নি'পী'ড়ি'ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ ইকরা বাংলাদেশ। খতীব, মসজিদে মদীনা, বাড্ডা, ঢাকা।