মুফতি সাইফুল ইসলাম : করোনার থা'বায় থ'মকে গেছে পৃথিবীর কলরব। শূন্য হয়ে আছে ভূপৃষ্ঠের সবচেয়ে কোলাহলপূর্ণ প্রান্তর নিউ ইয়র্ক টাইম স্কয়ার। কোনো অপ'রাধ ছাড়াই স্ত্রীসহ গৃহব'ন্দি হয়ে আছেন কানাডার মতো সুপার পাওয়ার দেশের প্রধানমন্ত্রী, লন্ডন ব্রিজে হাঁটছে না কোনো মানুষ, প্রভু প্রেমের অমিয় মো'হে কাবার চারপাশে ঘুরছে না মুসলমান, ভাটিক্যান আজ মানুষবিহীন নিস্তব্ধ প্রান্তর, ভেনিসের জলে ভাসছে না কোনো নবদম্পতি আর পর্যটকের প্রমোদতরী, সমগ্র ইতালি যু'দ্ধ ছাড়াই অবরু'দ্ধ, শূন্য গগনে উড়ছে না প্লেন আর সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকছে না কোনো আন্তর্দেশীয় ট্রাক আর ট্রেন।
মিডিয়ার কল্যাণে আমরা দেখতে পাচ্ছি এই ক'ঠিন সং'কট পরি'স্থিতিতে অসংখ্য মানুষ কী দু'র্বিষহ জীবন পার করছে। কর্মহীন শ্রমজীবী জনতা না খেয়ে আছে, ক্ষু'ধার যন্ত্রণায় কা'ন্নাকাটি করছে ছোট ছোট শিশু। একটু চাল ও ডালের জন্য রাস্তায় এসে হা'হাকার করছে মানুষ। আলহামদুলিল্লাহ এ ক'ঠিন পরিস্থিতিতে সরকারিভাবে তাদের জন্য আসছে নানা বরাদ্দ। এসব মানুষের স'হায়তায় এগিয়ে এসেছে অনেক সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সংগঠন। ব্যক্তিগত পর্যায়েও নিজ নিজ অর্থভাণ্ডার খুলে দিয়েছেন অনেক ধনপতি।
কিন্তু খুবই আপ'ত্তিকর এবং আফসোসের কথা হচ্ছে, যেসব মানুষকে এসব বণ্টনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে; সমাজপতিদের যাঁরা এসব বণ্টনের তদারকি বা কর্ণধার আছেন; অনেক ক্ষেত্রেই সেই দায়িত্বশীলরা এসব ত্রাণসামগ্রীর সুষম বণ্টন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। কোথাও তো এমনও দেখা যাচ্ছে, তাঁরা এই ত্রাণসামগ্রীগুলো নিজেরা আ'ত্মসাৎ করছেন। মানুষ কতটা ক'ঠিন হলে, মানুষের ভেতরটা কতটা নিকৃষ্ট হলে এই ভ'য়াবহ অবস্থায়ও নি'রীহ অস'হায় মানুষের খাবার নিজেরা ভ'ক্ষণ করে!
অথচ সমাজের সবার অধিকার রয়েছে এমন কোনো সম্পদ; বিশেষ করে বাইতুলমাল অথবা গনিমতের মাল; যার হক সব যো'দ্ধার ছিল এসব স'ম্পত্তি কেউ যদি আ'ত্মসাৎ করত, তাদের ব্যাপারে রাসুল (সা.) খুবই ক'ঠোর ছিলেন। খাইবার যু'দ্ধে যখন অসংখ্য সাহাবা শাহাদাতবরণ করলেন, আর লোকেরা যখন বিভিন্ন লোকের শহীদ হওয়ার সংবাদ রাসুল (সা.)-কে শোনাচ্ছিল। মুসলিম শরিফে বর্ণিত হয়েছে— ‘উমার (রা.) বলেন, খাইবারে অমুক অমুক শহীদ হয়েছেন। অবশেষে এক ব্যক্তি প্রসঙ্গে তাঁরা বললেন, সেও শহীদ হয়েছে। কিন্তু রাসুল (সা.) বললেন, কখনোই না। গনিমতের মাল থেকে চাদর আ'ত্মসাৎ করার কারণে আমি তাকে জাহান্নামে দেখেছি। (মুসলিম, হাদিস : ২০৯) দেখুন একজন সাহাবির ব্যাপারেও কত ক'ঠোর মূলনীতি ঘোষিত হয়েছে।
তাহলে আজকে যাঁরা অ'সহায় মানুষদের অধিকার হরণ করছেন তাঁরা আল্লাহর কাছে কী জবাব দেবেন। মনে রাখবেন, অ'ন্যায়ভাবে ভক্ষণ করা প্রতিটি চাল কিংবা চাল বিক্রির অর্জিত প্রতিটি টাকা এমন, আপনি জাহান্নামের আগু'ন দিয়ে পে'ট ভরেছেন। একটিবার কী ভেবে দেখেছেন এই ম'হামা'রিতে আ'ক্রা'ন্ত হয়ে আপনিও দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে পারেন?
রাসুল (সা.) সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘হে লোকেরা! তোমাদের মধ্যকার কোনো ব্যক্তিকে আমাদের সরকারি কোনো পদে নিয়োগ করার পর সে যদি আমাদের তহবিল থেকে একটি সুই কিংবা তার বেশি আ'ত্মসাৎ করে তবে সে খেয়ানতকারী। কিয়ামতের দিন সে তার এই খেয়ানতের বোঝা নিয়ে উপস্থিত হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৫৮১)। অথচ আজকের দিনে মানুষ আত্মসােক খুব স্বাভাবিক মনে করে অন্যের সম্পদগুলো হ'রণ করছে। অথচ তারা জানে না যে কিয়ামতের দিন এই ব্যক্তির যদি কোনো সওয়াব থাকে; তাহলে ওই সব হকদার যাদের সম্পদ আত্মসাৎ করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে তা বণ্টন করে দেওয়া হবে। কারণ তাদের হক ওই ব্যক্তি নষ্ট করছে। আর যদি কোনো সওয়াব তার না থাকে তাহলে এই অ'সহায় হকদার মানুষের সব গুনাহ এই আত্মসাত্কারী দায়িত্বশীল ব্যক্তির আমলনামায় সংযোগ করে দেওয়া হবে।
আমাদের সবার উচিত নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে সতর্ক হওয়া। সহিহ মুসলিমে বর্ণিত রয়েছে—‘আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা.) একবার অসুস্থ ইবন আমিরকে দেখতে গিয়েছিলেন। তখন ইবন আমির তাঁকে বললেন, হে ইবন উমর! আপনি কি আমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন না? ইবন উমর বললেন, আমি রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছি যে পবিত্রতা ব্যতিরেকে সালাত কবুল হয় না। খিয়ানতের সম্পদ থেকে সদকাহও কবুল হয় না। আর তুমি তো ছিলে বসরার শাসনকর্তা। (মুসলিম, হাদিস : ৪২৩)। ইবন উমর তাঁর জন্য দোয়া পর্যন্ত করেননি। কারণ তিনি জানতেন যে এই ব্যক্তি বসরার দায়িত্বে থাকার সময় জনগণের সম্পদ আ'ত্মসাৎ করেছেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে অন্যায়ভাবে কারো অধিকার হ'রণ করে জাহান্নামের আ'গুন দিয়ে পে'ট ভরা থেকে মুক্ত রাখুন। আমিন।
লেখক : অনুবাদক ও মুহাদ্দিস