মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানী: রাত যত গভীর হয় প্রভাত ততই কাছে। বিপদ যত ক'ঠিন হয় মানুষ শিক্ষা নিলে আল্লাহর দয়া ততই বাড়ে। করোনাভাইরাস মহামা'রীতে সমগ্র বিশ্ব আজ স্থবির। জনজীবন সর্বত্র বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পৃথিবীর তথাকথিত শক্তিধর উন্নত দেশগুলো রীতিমতো ধ'রাশায়ী। রাত-দিন আত'ঙ্কে কাটাচ্ছে বিশ্ববাসী। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় মুসলমানরাও আল্লাহর দয়া ও রহমতের ভিখারি।
এ মুহূর্তে আমাদের মাঝে হাজির হলো মহিমান্বিত রজনী শবেবরাত। এ রজনীতে পরম করুণাময় তাঁর রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন। পাপীদের উদারচিত্তে ক্ষমা করেন। এ মর্মে প্রায় ১০ জন সাহাবি থেকে বিশুদ্ধ হাদিস বর্ণিত আছে। সাহাবি মায়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত। মহানবী (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে সৃষ্টিকুলের প্রতি এগিয়ে আসেন, দয়ার দৃষ্টি দেন। মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।
এ পরিস্থিতিতে আমরা সব পাপ কাজ ছেড়ে দেওয়ার জন্য সংকল্পবদ্ধ হই। শিরক বর্জন করি। হিংসা-বিদ্বেষ, অন্যায়-অনাচার, জুলুম নির্যা'তন ও দুর্নীতি ছেড়ে দেই। তাহলে অবশ্যই আশা করতে পারি আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করবেন। মুক্তি দেবেন করোনাসহ যাবতীয় মহামারী থেকে। তাঁর অসীম রহমতের বারিধারায় এ পৃথিবী তার স্বাভাবিক গতি ফিরে পেয়ে শান্তি সলিলে সজীব হয়ে উঠবে। আমাদের সব নৈরাশা বিতাড়িত হয়ে প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে হেসে উঠবে আনন্দের ঝলমলে প্রভাত। আল্লাহতায়ালা আল কোরআনে বলেন, ‘তোমাদের ওপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয় তা তোমাদেরই কর্মের ফল। এতে তোমাদের অনেক পাপ ক্ষমা করে দেন’। (আশ-শূরা, আয়াত ৩০)।
মহান আল্লাহতায়ালা অন্যত্র ঘোষণা করেন, ‘স্থলে ও জলে বিপর্য'য় ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের কৃতকর্মের জন্য। আল্লাহ তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান। যাতে তারা ফিরে আসে’। (সূরা রুম, আয়াত-৪১)।
মহান আল্লাহতায়ালা অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘যারা অবাধ্য হয় তাদের গুরু শাস্তি প্রদানের আগে আমি অবশ্যই তাদের লঘু শাস্তি আস্বাদন করাব, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে। (আস সাজদাহ, আয়াত ২১)।
সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন কোনো জাতির মধ্যে অশ্লী'লতা ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেখানে মহামা'রী, দু'র্ভিক্ষ ও এমন সব রোগ উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি’। (ইবনে মাজাহ হা. ৪০১৯)।
আরও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো- করোনা মহামা'রীতে কেউ আ'ক্রা'ন্ত হোক বা না-ই হোক, মৃ'ত্যুর স্বাদ কিন্তু সবাইকে পেতেই হবে। তাই আমাদের মৃ'ত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন। প্রয়োজন সব পা'পাচার, দুর্নীতি ও অবাধ্যতা বর্জন করে আল্লাহর নির্দেশনা মতো জীবন গড়া। এমনভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়াই শবেবরাতের একান্ত কাম্য।
শবেবরাতে বিশেষ কাজ হলো- রাত জেগে ইবাদত করা ও পরদিন রোজা রাখা। সাহাবি হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, ‘পনের শাবান রাত যখন আসে, তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে পালন কর এবং দিনের বেলায় রোজা রাখ। কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহতায়ালা প্রথম আসমানে আসেন আর বলেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। কোনো রিজিক অন্বেষণকারী আছে কি? আমি তাকে রিজিক প্রদান করব। আছে কি কোনো রোগাক্রান্ত? আমি তাকে আরোগ্য দান করব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহতায়ালা মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে ডাকতে থাকেন’। (ইবনে মাজাহ, হা. ১৩৮৮)। আরব ও অনারবের হাদিস বিশারদ ইমামগণ শবেবরাতের হাদিসকে সহিহ, গ্রহণযোগ্য ও আমলযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন। মু
সলিম মিল্লাতের বিশেষজ্ঞ উলামায়ে কেরাম এবং সর্বস্তরের জনগণ ১৫০০ বছর যাবৎ অত্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে শবেবরাত পালন করে আসছে। তবে এ রাতে আলোকসজ্জা, আতশবাজি, কবরস্থানে পুষ্প অর্পণ ও হৈ হুল্লা করা কোরআন-হাদিস বহির্ভূত গর্হিত কাজ। বিশেষ করে করোনা পরিস্থিতিতে শবেবরাত পালনের জন্য গণজমায়েত পরিহার করে একাকী নির্জনে ইবাদত করা উত্তম হবে। রসুলুল্লাহ (সা.) এ রাতে কবর জিয়ারতে গিয়েছিলেন। তবে তিনি তো একাকী ও নীরবে তা করেছিলেন। (বায়হাকি শুয়াবুল ইমান, হা. ৩৮৩৭)।
অতএব আমাদের যাবতীয় লৌকিকতা ও লোক দেখানোর মানসিকতা পরিহার করে শবেবরাত পালন করতে হবে। আল্লাহর দয়া, অনুগ্রহ ও ক্ষমা লাভের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।