মুফতি শাহেদ রহমানি : প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন, মুকিম, সুস্থদেহী মুসলিমের জন্য রোজা রাখা ফরজ। এখানে রোজার কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল বর্ণনা করা হলো :
রোজা অবস্থায় টুথপেস্ট, টুথপাউডার, মাজন বা কয়লা দিয়ে দাঁত মাজা মাকরুহ। রোজা অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে। কোনো ব্যক্তি যদি হাঁপানি অথবা অ্যাজমার কারণে ইনহেলার ব্যবহার করতে বাধ্য হয়, তাহলে রোজা ভাঙার অনুমতি আছে। তবে ওই রোজা পরে কাজা করতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে শামি ২/৩৯৫)
দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাদ্য যদি বুটের বরাবর হয় বা বড় হয়, এ পরিমাণ খাদ্যবস্তু গিলে ফেলার কারণে রোজা ভেঙে যাবে। আর যদি বুটের পরিমাণ থেকে কম হয়, তাহলে মুখের ভেতর থেকে গিলে ফেলার কারণে রোজা ভাঙবে না। হ্যাঁ, এ পরিমাণ বস্তু যদি মুখের বাইরে এনে পুনরায় খেয়ে নেয়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। এতে শুধু কাজা ওয়াজিব হবে। কাফফারা ওয়াজিব হবে না। (বেহেশতি জেওর ৩/১৪)
ইনহেলার ব্যবহার করলে রোজা ভাঙবে কি না
রোজা রেখে ইনহেলার ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে। কারণ, ইনহেলার দ্বারা অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগী শ্বাসকষ্ট দূর করার জন্য মুখ দিয়ে ধোঁয়া টেনে নেয়- যেভাবে মানুষ বিড়ি-সিগারেট পান করে। রোজা অবস্থায় বিড়ি-সিগারেট পান করা নিষেধ। এতে রোজা ভেঙে যায়। তাই ইনহেলার ব্যবহারেও রোজা ভেঙে যায়। উল্লেখ্য, রোজা রাখার উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় এমন যেকোনো কাজ রোজা ভঙ্গের কারণ। [ফতোয়ায়ে শামি, দ্বিতীয় খণ্ড, ৩৯৫ পৃষ্ঠা। ফতোয়ায়ে দারুল উলুম, ষষ্ঠ খণ্ড, ৪১৮ পৃষ্ঠা।]
রোজার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় কুলি করার সময় যদি পানি গলার ভেতর চলে যায়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। এতে শুধু কাজা ওয়াজিব হবে। কাফফারা ওয়াজিব হবে না। (দুররে মুখতার ১/১৫০)
কোনো কারণে রোজা ভেঙে গেলেও দিনের বেলায় পানাহার করা যাবে না। সারা দিন রোজাদারের মতো থাকা ওয়াজিব। (হিদায়া ১/১৮৫)
কানে তেল বা ওষুধ প্রবেশ করালে রোজা ভেঙে যাবে। এতে শুধু কাজা ওয়াজিব হবে। কাফফারা ওয়াজিব হবে না। তবে গোসল করার সময় যদি অনিচ্ছাবশত কানে পানি প্রবেশ করে, তাহলে রোজা ভাঙবে না। (রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৬)
পায়খানার রাস্তায় ডুশ ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে। এতে শুধু কাজা ওয়াজিব হবে। কাফফারা ওয়াজিব হবে না। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৪)
ভুলক্রমে পানাহার করলে রোজা ভঙ্গ হবে না। (বুখারি হা. ১৯৩৩)
রোজা অবস্থায় চোখে সুরমা বা শরীরে তেল, আতর ইত্যাদি ব্যবহার সম্পূর্ণ জায়েজ। এতে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। এমনকি যদি সুরমা ব্যবহারের পর থুতু কিংবা শ্লেষ্মায় রং পরিলক্ষিত হয়, তবু রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। (ফাতহুল কাদির ৪/৩২৭)
কোনো ধরনের ইনজেকশন-ইনসুলিন বা টিকা নিলে রোজা ভঙ্গ হয় না, এমনকি গ্লুকোজ ইনজেকশনের দ্বারাও রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। (ফাতাওয়ায়ে ওসমানী ২/১৮৬)
রোজা অবস্থায় চোখে ড্রপ ব্যবহারের দ্বারা রোজার কোনো ক্ষতি হবে না; যদিও ওষুধের স্বাদ মুখে অনুভূত হয়। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী ১/২০৩)
দেহের অভ্যন্তরীণ রোগব্যাধি নির্ণয় করার জন্য এন্ডোসকপি করা হয়। এ সময় গলা দিয়ে পেটের ভেতরে পাইপ প্রবেশ করানো হয়। যদি এই পাইপে তেল, পানি বা অন্য কোনো পদার্থ লাগানো থাকে, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। আর যদি তেল বা কোনো পদার্থ লাগানো না থাকে, বরং সম্পূর্ণ পরিষ্কার ও শুষ্ক থাকে, তাহলে এর দ্বারা রোজা ভাঙবে না। (রদ্দুল মুহতার ৩/৩৬৯)
সেহরি ইফতার ভুলবশত আগে পরে হলে তার বিধান
যদি কোনো ব্যক্তি সেহরি খাওয়ার পর জানতে পারল যে, যেই সময়ে সেহরি খেয়েছে এর আগেই সময় শেষ হয়ে গেছে। অথবা সূর্যাস্ত হয়ে গেছে ভেবে ইফতার করল। অতঃপর দেখা গেল এখনো সূর্যাস্ত হয়নি। তাহলে সেদিনের অবশিষ্ট সময়টুকু বিরতি পালন করবে এবং অন্য সময়ে তা কাজা আদায় করে নেবে। [হেদায়া, প্রথম খণ্ড, কিতাবুস সওম।]
রোজা অবস্থায় কোনো প্রকার মেডিসিন ব্যতীত অক্সিজেন গ্রহণ করার দ্বারা রোজা ভাঙবে না। আর যদি কোনো ওষুধ মিশ্রিত থাকে, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। (জাদিদ ফেকহি মাসায়েল ১/৮৮)
রোজা অবস্থায় ইনসুলিন ব্যবহার করা জায়েজ। এতে রোজা ভাঙবে না। (আল ইসলাম ওয়াতিব্বুল হাদিস পৃ. ২৮৫)
রোজার দুর্বলতা দূর করার লক্ষ্যে শরীরে স্যালাইন পুশ করা মাকরুহ। তবে রোগের কারণে শরীরে স্যালাইন নেওয়া যাবে। এতে রোজা ভাঙবে না। (আল ইসলাম ওয়াতিব্বুল হাদিস পৃ. ২৮৫)
সন্তানকে দুধ পান করালে রোজার ক্ষতি হয় কি না
সন্তানকে দুধ পান করালে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। কারণ, এটা রোজা ভঙ্গের কারণ নয়। আর রোজায় বলা হয় পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকাকে। এখানে যেহেতু পানাহার ও স্ত্রী সহবাসের কোনো সুযোগ নেই, তাই রোজা হয়ে যাবে। [ফতোয়ায়ে শামি, তৃতীয় খণ্ড, ৩৭১ পৃষ্ঠা।]
রোজা অবস্থায় রক্ত দিলে বা নিলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। (ফাতহুল কাদির ৪/৩২৭)