ইসলাম ডেস্ক : দীর্ঘ একটি মাস সিয়াম সাধনার পর শাওয়াল মাসের আগমনে সমাপ্তি ঘটে পবিত্র রমজান। আত্মশুদ্ধির এই মাসে অনেকেই নিজেকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করেন। অনেকে ফিরে আসেন কল্যাণের পথে। পাপাচার থেকে হাত গুটিয়ে নেন। রমজান চলে গেলে অনেকেই আবার তাদের আগের জীবনে ফিরে যান। নামাজ ও ভালো কাজের প্রতি তাদের আকর্ষণ কমে যায়। আবার অনেকে সত্যের পথে চলতে গিয়ে অনেকে বাঁ'ধা-বিপ'ত্তি, শয়তানের ওয়াসওয়াসা, আর সমস্যার চোরাবালিতে হোঁচট খেয়ে পথ ভুলে যান। তাই রমজানের শিক্ষা পুরো বছর জুড়ে জীবনে ধ'রে রাখতে আমাদের রমজান থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘যারা ঈমানের ঘোষণা দিচ্ছ, (শোনো) তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। উদ্দেশ্য হলো, তোমরা যেন তাকওয়ার শিক্ষা লাভ করতে পার। তবে তোমাদের যারা অসুস্থ কিংবা সফরের অবস্থায় থাকবে তাদের জন্য পরবর্তী সময়ে এ সংখ্যা পূর্ণ করে দেওয়ার অবকাশ থাকলো। আর যাদের রোজার রাখার দৈহিক সামর্থ্য শেষ হয়েছে তাদের জন্য প্রতি রোজার বিনিময়ে একজন মিসকীনের খাবার দানের ব্যবস্থা রাখা হলো। তবে কেউ অতিরিক্ত কিছু কল্যাণকর্ম সম্পাদন করলে তা হবে উপকারী। আর তোমরা রোজা রাখতে পারলেই তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর যদি তোমরা জানতে পার। রমজান মাস হলো এমন একটি সময় যার মধ্যে অবতীর্ণ হয়েছে কুরআনুল কারীম। মানবগোষ্ঠীকে হেদায়েতের সন্ধ্যান দানের উদ্দেশ্য আর যা নাকি হেদায়েতের সুস্পষ্ট নির্দেশনগুলো এবং সত্য ও মিথ্যা পার্থক্য বিধায়ক। অত্রএব, তোমাদের যে কেউ রমজান মাসটি প্রাপ্ত হবে সে যেন তাতে অবশ্যই রোজা রাখে। (আল-বাকারা)
রমজানের তাৎপর্য ও শিক্ষার প্রধান উৎস হলো, আল-কোরআনের এই অমীয় ঘোষণা। আর রমজানের প্রথম ও প্রধান শিক্ষা হলো তাকওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করা। তাকওয়া হচ্ছে এমন একটি গুণ যা না থাকলে কোন ব্যক্তি হেদায়েতের পথে অগ্রসর হতে পারে না। এর জন্য চাই দৃঢ় মনোবল ও ইচ্ছা। যেমন ইরশাদ হচ্ছে, যদি তোমরা ধৈর্য্যরে পরিচয় দাও এবং তাকওয়া অবলম্বন করতে থাক তাহলে এটা হবে এক দৃঢ়সংকল্পের ব্যাপার। (আল-ইমরান)
রোজার মাধ্যমে কষ্ট ও ত্যাগের যে শিক্ষা মানুষ লাভ করতে পারে তার কোন তুলনা নেই। যেমন কেউ রোজার নিয়ত করার পর যদি তৃষ্ণায় কিংবা ক্ষুধার তাড়নায় যদি প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়, আর কোন নির্জন স্থানে সে সুস্বাদু খাবার হাতের নাগালে প্রাপ্ত হয় তবুও সে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কষ্ট সহ্য করে থাকে। এবং তার মাঝে গরিবের জন্য সহানুভূতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয় এবং কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা বেড়ে যায়। রাসূল স. বলেন- ‘রমজান হলো ধৈর্যের মা।’ –(ইবনে খুযাইমাহ)
ভালো অভ্যাস গুলো লালন করা: রমজানের মাধ্যমে মানুষের দান সাদাকাহ সহ অনেক ভালো অভ্যাস গড়ে উঠে। এগুলোর নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে ব্যক্তি ধীরে ধীরে ভালো মানুষে পরিণত হয়। আর সমাজেও আসবে পরিবর্তন। হাদীসে এসেছে, তোমরা দান করতে থাকো এবং তা গুণতে যেও না! ( যদি করো) তাহলে আল্লাহও তোমার বিপক্ষে গুণাহ গণনা করে রাখবেন।
আত্মসংযমের শিক্ষা: মানুষের চাহিদা পশুবৃত্তিকেও হার মানায়। এই এক মাস সিয়ামের মাধ্যমে মানুষের যে সংযমের গুণ গড়ে উঠে তা পরবর্তী মাস গুলোতেই চলার পথে সঞ্চয় হয়ে থাকে। হাদীসে আছেরোযা একটি ঢালের ন্যায়”
সততার গুণ অর্জন: রমজানে মানুষের অসৎ প্রবৃত্তিকে দমন করে সততার উন্মেষ ঘটে, যা ব্যক্তির জন্য প্রশিক্ষণ স্বরূপ। হাদীসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ ত্যাগ করতে পারেনি, তার না খেয়ে থাকায় আল্লাহর কাছে কোনো মূল্য নেই। (সহীহ বুখারী)
একজন মুমিন দীর্ঘ একমাস মিথ্যাচারিতা থেকে দূরে থাকার প্রশিক্ষণ পায়। ফলে সততার মতো মহৎ চারিত্রিক গুণটি সে অর্জন করে । এভাবেই রমজানের শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ হয়ে ওঠে আলোকিত মানুষ! সিয়াম সাধনার মাধ্যমে যে আত্মশুদ্ধি আমাদের অর্জন হয়েছে তা যেন জীবন থেকে হারিয়ে না যায়।