ইসলাম ডেস্ক : এই মাস নাজাতের মাস, সেটা আপনারা অনেকভাবেই শুনেছেন। কিন্তু কিসের নাজাত, কীভাবে নাজাত?
এই নাজাতটা দুই ধরনের। যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তারা যদি কবরে বন্দী অবস্থায় থাকেন, নবীজী বলছেন যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সারাবছরই কিছু কিছু লোককে কবরের কষ্ট থেকে মুক্ত করেন, নাজাত দেন। কিন্তু রমজান মাসে তার কয়েকগুণ লোককে কবরের কষ্ট থেকে মুক্ত করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! এখন এই মুক্ত কারা হবে খুব চিন্তার বিষয়।
পৃথিবীর বাস্তবতাকে কল্পনা করুন। পৃথিবীতেও আমরা দেখি, বিভিন্ন দিবসে সরকার সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদেরকে মুক্তি দেন। ঈদ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ইত্যাদি উপলক্ষে এই মুক্তিদান হয়। এখন কাদেরকে এই মুক্তি দেয়া হয়? হঠাৎ করে একটা লটারি করে যার নাম উঠল তাদেরকে নাকি যাদের আপনজনরা বছরের পর বছর চেষ্টা করছে তাদের ছাড়িয়ে নেয়ার জন্যে, কর্তৃপক্ষকে হয়রান করে ফেলছে খোঁজ-খবর নিতে নিতে তারা? নিঃসন্দেহে যারা ধর্না দিয়ে আছে তারা। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঐ লোকগুলোরই কিন্তু তালিকা তৈরি করা হয়।
এমনকি সাজা হয় নি, কিন্তু খোঁজ খবর নেয়ার কেউ নেই বলে বিনা বিচারে বছরের পর বছর ধরে জেল খাটছে, এমন ঘটনাও কিন্তু অহরহই ঘটছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারেও সকাল-সন্ধ্যা দিবানিশি প্রতিনিয়ত যেসব জীবিত লোকেরা তাদের মৃত পরিচিতজনদের জন্যে চোখের পানি ফেলে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, প্রতিনিয়ত যার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় যা আল্লাহ দেখেন এই রমজান মাসে আসলে তালিকাটা তাদেরই তৈরি করা হয়।
কাজেই হঠাৎ শুনলে ‘ওহ, আপনার বাবা মারা গেছে’ চেহারা অন্ধকার হয়ে যায়। কী লাভ, সারাবছর তো মনে পড়ে না? মৃত্যুদিবস লিখে রাখেন। ঐদিন মনে পড়ে; লাভ নাই। এক হচ্ছে প্রতিনিয়ত আল্লাহ পাকের কাছে চাইতে হবে। দ্বিতীয়ত এই মাসটা যেহেতু আল্লাহ পাক বিশেষভাবে ঘোষণা করেছেন সেহেতু এই মাসে একটি প্রার্থনা যেন এমন না যায় যে আপনি আপনার মৃত ব্যক্তিদের জন্যে ক্ষমা চান নি। নাজাতের মাস মানে এই এবং নাজাত পেতে হলে আমাদের সবাইকে এরকম সক্রিয় হয়ে উঠতে হবে।
নাজাতের দ্বিতীয় দিক
নাজাতের দ্বিতীয় আরেকটি দিক হচ্ছে আমরা যারা জীবিত আছি আমরা কি আসলে মুক্ত? আমরাও যারা জ্ঞাতসারে অথবা অজ্ঞাতসারে অমানবিক কার্যক্রম করে ফেলেছি অর্থাৎ গুনাহর কাজ করেছি আপন লোকদেরকে শত্রু বানিয়ে ফেলেছি, নিজের সাথে নিজে জুলুম করেছি, অবধারিতভাবে তার কিছু কর্মফল আমরা ভোগ করছি। আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি। আমরা অশান্তিতে পড়েছি, আমার মেধা থেমে গেছে, ব্যর্থতা চতুর্দিক থেকে গ্রাস করেছে। এটি হচ্ছে আমাদের বন্দিত্ব যারা জীবিত আছি।
রমজান মাস শুধু মৃতদের জন্যে নাজাতের মাস নয়, আমরা যারা মনোদৈহিক শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে পড়েছি, আমাদেরও নাজাতের পথ হতে পারে যদি আমরা চাই। রমজান মাসের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমরাও আবার পরিপূর্ণরূপে মুক্তি লাভ করতে পারি। বেরিয়ে আসতে পারি আমাদের লালিত অভ্যাসচক্র থেকে।