সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১১:০৭:৩৬

সর্বপ্রথম রোজা রেখেছিলেন যিনি

সর্বপ্রথম রোজা রেখেছিলেন যিনি

ইসলাম ডেস্ক : সাওম আরবি শব্দ। এর সমার্থক শব্দ রোজা। রোজা ফারসি থেকে আগত। সাওম শব্দের আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে সাওম বা রোজা অন্যতম। শরিয়তের পরিভাষায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়ত সহকারে পানাহার এবং স্ত্রীসঙ্গ থেকে বিরত থাকাকে সাওম বা রোজা বলা হয়। প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষ, কোনো ওজর আপত্তি না থাকলে সবার জন্য রোজা ফরজ।

রোজা সম্পর্কে দু’একদিনে আলোচনা করে শেষ করা যায় না। এটি একটি ব্যাপক বিষয়। পবিত্র রমজান মাসের প্রতিদিন কিঞ্চিৎ পরিসরে রোজার বহুমাত্রিক দিক সম্পর্কে এখানে আলোচনার আশা রাখি। আজকে রোজার ইতিহাস সম্পর্কে অতিসংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-

হজরত আদম (আ.) থেকে রোজা শুরু
পবিত্র কোরআন মজিদে এরশাদ হয়েছে, ‘ওহে যারা ঈমান এনেছে! তোমার ওপর ফরজ করা হলো রোজা, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ (২:১৮৩)।

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা আলুসি (রহ.) তার তাফসির গ্রন্থ রুহুল মাআনিতে বলেন, ‘এখানে পূর্ববর্তীদের বলতে হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে হজরত ঈসা (আ.) পর্যন্ত সব যুগের মানুষকে বোঝানো হয়েছে।’

হজরত মাওলানা মাহমুদুল হাসান দেওবন্দি ওই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘রোজার হুকুম যুগ যুগ থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে।’ (ফাওয়ায়িদে ওসমানি)।

তাফসিরের বর্ণনায় রয়েছে, আদম (আ.)-এর সৃষ্টির পর তাঁকে 'নিষিদ্ধ ফল' আহার বর্জনের যে আদেশ দিয়েছেন- এটাই মানব ইতিহাসের প্রথম সিয়াম সাধনা। ইতিহাসে আরো পাওয়া যায়, আদম (আ.) সেই রোজা ভাঙার কাফ্ফারাস্বরূপ ৪০ বছর রোজা রেখেছিলেন।

আর ওই নিষিদ্ধ ফলের প্রভাব আদম (আ.)-এর পেটে ৩০ দিন বিদ্যমান ছিল বলে আদম (আ.)-এর শ্রেষ্ঠ সন্তান মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতকে আল্লাহ তাআলা এক মাস রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিহাসে এ-ও পাওয়া যায়, ওই ফলের প্রভাবে হজরত ইব্রাহিম (আ.) থেকে শুরু করে হজরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত সব যুগে ৩০টি রোজা ফরজ ছিল।

হজরত মুসা (আ.)ও ৩০ দিন রোজা রেখেছিলেন। তুর পাহাড়ে যাওয়ার পর আল্লাহ তাআলা তাঁকে আরো অতিরিক্ত ১০টি রোজা রাখার আদেশ দেন। ফলে তাঁর রোজা হয়েছিল মোট ৪০ দিন। হজরত ঈসা (আ.)ও মুসা (আ.)-এর মতো ৪০ দিন রোজা রাখতেন। হজরত ইদ্রিস (আ.) গোটা জীবন রোজা রেখেছিলেন। হজরত দাউদ (আ.) এক দিন পর পর অর্থাৎ বছরে ছয় মাস রোজা রাখতেন।

ইসলামের প্রাথমিক যুগে তিনদিন করে রোজা রাখার বিধান প্রচলিত ছিল। হজরত ইবনে মাসউদ, হজরত ইবনে আব্বাস, হজরত মুআজ, হজরত কাতাদা, হজরত আতা ও হজরত যাহহক (রহ.) এর বর্ণনা থেকে জানা যায়, তিনদিন করে রোজা রাখার নিয়ম হজরত নুহ (আ.) থেকে শুরু হয় এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত প্রচলিত থাকে।

তবে এ বিষয়ে অনেকে দ্বিমত পোষণ করেন। ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, ইহুদিরা ৪০ দিন রোজা রাখত। খ্রিস্টানরা রোজা রাখত ৫০ দিন। সর্বশেষ নবী ও রাসূল হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর উম্মতদের জন্য ৩০ দিন রোজা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। (সূত্র: বায়হাকি শরিফ ও ফাতহুল বারি)।

হিজরি দ্বিতীয় সনে রোজা ফরজ হয়:
প্রথম কোন রোজা ফরজ ছিল এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন, ১০ মহররম অর্থাৎ আশুরায় রোজা ফরজ ছিল, আবার কারও কারও মতে, ‘আইয়ামুল বিজ’ অর্থাৎ প্রত্যেক চন্দ্র মাসে ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা ফরয ছিল। রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মদিনায় হিজরত করলেন তখন আইয়ামুল বিজের রোজা রাখতেন। হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে অর্থাৎ দ্বিতীয় হিজরিতে উম্মতে মুহাম্মদির জন্য রোজা ফরজ করা হয়। এ সময় এ আয়াত নাজিল হয় ‘রমজান মাস, এ মাসেই নাজিল করা হয়েছে কোরআন মানুষের জন্য হেদায়েত, সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন এবং হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী। অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে। তবে কেউ রোগাক্রান্ত হলে অথবা সফরে থাকলে এ সংখ্যা অন্য সময় পূরণ করবে। আল্লাহ চান তোমাদের জন্য যা সহজ তা, আর তিনি চান না তোমাদের জন্য যা কষ্টকর তা, যেন তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করো এবং আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করো, তোমাদের সৎপথে পরিচালিত করার জন্য এবং যেন তোমরা শোকর করতে পার।’ (সূরা বাকারা : ১৮৫)।

এ আয়াত নাজিলের পর আশুরার রোজা অথবা আইয়ামুল বিজের রোজা পালনের ফরজিয়াত মানসুখ হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরত করার পর হিজরি দ্বিতীয় সনে রোজা ফরজ হওয়ার আগ পর্যন্ত দু’ধরনের রোজার প্রচলন ছিল। ক. আইয়ামুল বিজ অর্থাৎ প্রত্যেক চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখা। খ. আশুরার দিন অর্থাৎ ১০ মহররমের দিন রোজা রাখা। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আব্বাস (রা.) এর বর্ণনা থেকে জানা যায়, আগে রোজা ছিল এক সন্ধ্যা থেকে আরেক সন্ধ্যা পর্যন্ত। রাতে ঘুমানোর পরে পানাহার ও জৈবিক চাহিদা পূরণ করা বৈধ ছিল না।

হিজরি দ্বিতীয় সনে রোজা ফরজ হওয়ার পর থেকে উম্মতে মুহাম্মদি দীর্ঘ এক মাসব্যাপী রোজা পালন করে আসছে। পবিত্র রমজানের রোজার ক্ষেত্রে পাঁচটি পালনীয় দিক রয়েছে। ১. চাঁদ দেখে রোজা রাখা, ২. সকাল হওয়ার আগে রোজার জন্য নিয়ত করা, ৩. পানাহার ও জৈবিক বিশেষ করে যৌন চাহিদা পূরণ করা থেকে বিরত থাকা, ৪. ইচ্ছাকৃত বমি করা থেকে নিবৃত্ত থাকা ও ৫. রোজার পবিত্রতা রক্ষা করা।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে