ইসলাম ডেস্ক: আমরা কি কেউ মৃত্যুর চিন্তা করি? প্রতিটি মানুষের জীবনে দিনের আলোর মতো যে কথাটি সত্য, সেটা হলো মৃত্যু। মানুষ যতই এর কাছ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুক না কেন মৃত্যুর হাত থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না। অথচ আমরা এই চিরন্তন সত্যটাকে জেনেও কেন জানি দিন দিন দীনের পথ ছেড়ে অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছি।
দুনিয়াতে কিভাবে একটু ভালভাবে বেঁচে থাকা যায় আমরা আছি সেই চিন্তা নিয়ে। কিন্তু আমাদের সামনে যে অনন্ত জীবন পড়ে আছে, তার জন্য আমরা কতটুকু পরিকল্পনা করি? আমাদের কোনো প্রিয়জন মারা গেলে আমরা শোক প্রকাশ করি। কেউ কেউ পাগলের মতো প্রলাপ বকতে থাকি। কেউ বা বুক চাপড়িয়ে, পোশাক-পরিচ্ছদ ছিঁড়ে, মাথায় ধুলামাটি ছিটিয়ে কিংবা মাটিতে গড়াগড়ি করে বিলাপ করতে থাকি। কেউ কেউ এ অকাল মৃত্যুর জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে দায়ী করেন। তারা বলেন, হে আল্লাহ, তোমার কি কোনো দয়ামায়া নেই? তুমি কেমনে আমার বা-জানরে লইয়া গেলা?
মৃত্যু আমাদের অতি কাছে। মহানবী (সা.) সাহাবিদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি যখন নামাজে ডানে সালাম ফিরাই তখন মনে হয় বামে সালাম ফেরাতে পারব না। এর মধ্যে মৃত্যু এসে যেতে পারে।’ আমাদের ভাবতে হবে প্রতিদিন ৭০ বার কবর আমাদের ডাকছে। সে ডাকে একদিন আমাদের সাড়া দিতে হবে। কিন্তু সেখানে যে যাব, কী নিয়ে যাব? যে কোনো সময় আমাকে-আপনাকে মৃত্যুর ফেরেশতা পাকড়াও করতে পারে। তখন আমাদের কী অবস্থা হবে? আমরা কী জবাব দেব কবরে? হাশরে, মিজানে কীভাবে পার হব পুলসেরাত?
পৃৃথিবীতে আমরা সবাই মুসাফির বা ভ্রমণকারী। পার্থক্য একটাই কেউ আগে আসে আগে যায়, আর কেউ পরে আসে পরে যায়। পৃথিবীর জীবনকে যানবাহনের স্টেশনের সঙ্গেও তুলনা করা যায়। গাড়িগুলো যেমন একটা নির্দিষ্ট সময় স্টেশনে এসে থামে এবং কিছু যাত্রী নিয়ে আবার চলে যায়। তেমনি আল্লাহতায়ালা অসংখ্য আদমকে দুনিয়াতে নামিয়ে দিচ্ছেন এবং উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
পৃথিবীর জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। মূলত আমরা সবাই রূহের জগতে ছিলাম। সেখান থেকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আমাদের পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। হায়াত শেষ হয়ে গেলে আবার আমাদের সেখানে চলে যেতে হবে।
পবিত্র কোরআনের সূরা আল ইমরানের ১৪৫ আয়াতে বলা হয়েছে- আর আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে না। সেজন্য একটা সময় নির্ধারিত রয়েছে। আমাদের এ জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। পরকালের জীবনের কাছে দুনিয়ার জীবনের উদাহরণ হল বিশাল সাগরের পানি সম্ভারের তুলনায় এক ফোঁটা পানির মতো।
পবিত্র হাদিসে বলা হয়েছে, ‘একদিন রাসূলের স্ত্রী উম্মে হাবিবা (রা.) আল্লাহর কাছে দীর্ঘ হায়াত কামনা করে দোয়া করছিলেন, এমন সময় রাসূল (সা.) এসে হাজির হন। তিনি বলেন, তুমি এমন এক বিষয়ের জন্য দেয়া করছ যেটা তিনি আগে থেকেই তোমাদের জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং তোমাদের রিজিক নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং বণ্টনও নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।’ আমাদের পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে মৃত্যুভয়ে আমরা ভীত হই। তাকে বাঁচানোর জন্য আমরা পাগল হয়ে যাই। দেশে-বিদেশে যার যার সাধ্যমতো বড় বড় ডাক্তার কবিরাজ দেখাই, যাতে সে সহজেই আরোগ্য লাভ করে। কিন্তু তারপরও সে আমাদের ছেড়ে চলে যায়।