ইসলাম ডেস্ক: মক্কার উত্তর দিকে মসজিদুল হারাম থেকে তিন মাইল দূরে অবস্থিত মুসলিম উম্মাহর এক অবিস্মরণীয় হেরা পর্বত। ভূমি থেকে ২০০ মিটার উঁচু খাড়া পাথরের পাহাড়। সেই পাহাড়ের একটি গুহা হলো হেরা গুহা। এই হেরা গুহাতেই পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছিল। তাই মুসলামানদের জন্য এই গুহার গুরুত্ব অনেক বেশি।
মুসলিম উম্মাহর এমন আবেগকে মাথায় রেখে এবার ইস্তাম্বুলে ঐতিহাসিক হেরা গুহার অনুরূপ ‘সানজাক্লার’ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। আরও অবাক করা কথা হলো, হেরা গুহার অনুকরণে নির্মিত মসজিদটি আর্কিটেকচার প্রতিযোগিতায় বিশ্বের মধ্যে প্রথম স্থান লাভ করেছে।
সম্প্রতি তুর্কির প্রাচীন টেলিভিশন চ্যানেল জানায়, ‘সানজাক্লার’ মসজিদটি ইস্তাম্বুলের ‘বুবুক চাকমে জেহ’ অঞ্চলে নির্মাণ করা হয়েছে। অত্যাধুনিক এ মসজিদটি অসাধারণভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে আধুনিক ডিজাইনের মসজিদগুলো থেকে একটু ভিন্ন ধরন ও প্রকৃতি এবং আকর্ষনীয়ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে আলোচিত এই মসজিদটি।
২০১২ সালে ‘আমরে আরওয়েল’ আর্কিটেকচার গ্রুপ মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু করে। ৭০০ বর্গ মিটার জমির ওপর মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ মসজিদ সম্পর্কে টিআরটি’র রিপোর্টার ‘মিশাদ খোসরাভী’ বলেছেন, আমরা সাধারণত মসজিদে মিনার ও গম্বুজ দেখে অভ্যস্ত। যা ছোট-বড় শহরে বৃহৎভাবে নির্মাণ করা হয়। সেই সঙ্গে মসজিদের ভিতরে বড় ঝাড়বাতি এবং ইসলামিক বিভিন্ন ডিজাইন দ্বারা মসজিদ সুসজ্জিত করা হয়।
সাধারণত আর দশটা মসজিদের থেকে ‘সানজাক্লার’ মসজিদটি একটু ভিন্ন। এর ডিজাইনের রয়েছে নতুনত্ব। ডিজাইনে নতুন হলেও মসজিদটি সিমেন্ট ও পাথর দিয়েই নির্মাণ করা হয়েছে এবং মসজিদের ভিতরের ডেকোরেশনও অতি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। যাতে করে জনগণ দৈনন্দিন জীবনের বিশৃঙ্খলা থেকে দূরে সরে এসে এ মসজিদে আরামদায়কভাবে গভীর মনোযোগ সহকারে ইবাদত-বন্দেগি করতে পারে। কারণ, নবুওয়তের আগে হেরা গুহায় দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় নবি (সা.) ধ্যানমগ্ন থাকতেন। নতুন এই মসজিদে যেন তেমন একটি আবহ থাকে তাই মসজিদের ভিতরের অঙ্গসজ্জা এড়িয়ে সাদামাটাভাবে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
হেরা গুহাটি নিয়ে আরো কিছু কথা:
পাহাড়ের চূড়া থেকে কিছুটা নিম্নমুখী ৫০ মিটার দূরত্বে এই গুহার অবস্থান। পাহাড়ে ওঠানামা ও গুহায় আরোহণের জন্য কোনো সিঁড়ির ব্যবস্থা নেই। পাহাড়ের গায়ে চড়েই গুহায় যাতায়াত করতে হয়। গুহার উচ্চতা ৫ থেকে ৬ ফুট, দৈর্ঘ্য ৪ গজ এবং প্রস্থ পৌনে দুই গজ। এর নিচ দিক অগভীর। এতে একসঙ্গে পাঁচজন লোক বসতে পারে। গুহাটি হচ্ছে ত্রিভুজ আকৃতির। এখানে বসে মহানবী (সা.) আল্লাহর ধ্যান করতেন। এখানে একটি পাথরে লেখা আছে সূরা আলাকের প্রথম আয়াত, ‘ইকরা বিসমি রাব্বি কাল্লাজি খালাক...।’ গুহার দর্শনার্থীরা এখানে এসে নফল নামায পড়েন। নানা বয়সী পর্যটকরা ভিড় জমান ঐতিহাসিক এই স্থানটি দেখার জন্যে।