ড. হাসান নাকাতা একজন বিখ্যাত জাপানি মুসলিম পণ্ডিত। তিনি ইসলাম ও মুসলমানদের খেদমতে তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন। ড. হাসান একজন কূটনীতিবিদ, লেখক, শিক্ষাবিদ ও পণ্ডিত ব্যক্তি। ১৯৬০ সালের ২২ জুলাই তাঁর জন্ম। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন জাপানে। পরে তিনি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর অভিসন্দর্ভ ছিল ‘ইবনে তাইমিয়ার রাজনৈতিক তত্ত্ব’। থিসিসটি বই আকারে প্রকাশিত হয় দারুল আখলা, দাম্মাম থেকে। বইটির প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৯৯৪ সালে। ড. হাসান রিয়াদে জাপানি দূতাবাসে চাকরি শেষ করে জাপানের ইয়ামাগুচি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্তব্যরত।
ড. হাসান ১৯৯১ সালে কায়রোতে বিয়ে করেন। তখন তিনি তাঁর ছয় বছরের লেখাপড়া শেষ করেছেন। তাঁর স্ত্রী খাওলার জন্ম ১৯৬১ সালে। তিনি ১৯৯০ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন। ড. হাসানের সঙ্গে পরিচয়ের আগে তিনি ফ্রান্সে ইসলাম গ্রহণ করেন। মিসেস খাওলার এক বোনও ১৯৯১ সালে ইসলাম কবুল করেন। তাঁর বিয়ে হয় ১৯৯৩ সালে। তাঁর স্বামী ড. হাসানের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
ড. হাসানের আগের ধর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে মিসেস খাওলা জানান, তাঁর কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম ছিল না। তবে তিনি খ্রিস্টধর্মের ভক্ত ছিলেন। ছোটবেলা থেকে ঈশ্বরের প্রতি তাঁর বিশ্বাস ছিল। সেই সূত্রে মাঝেমধ্যে চার্চে যাতায়াত ছিল তাঁর। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় একটি বাইবেল ক্লাবের সঙ্গে জড়িত হন। দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় তিনি পরবর্তী বছরের জন্য তাঁর অতিরিক্ত বিষয় ঠিক করার চিন্তা-ভাবনা করছিলেন। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইসলামিক স্টাডিজ’ নামে নতুন বিভাগ খোলা হয়। তাই তিনি ইসলামকে তাঁর অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে নির্ধারণ করেন। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার, এক বছরের মাথায় ১৯৮৩ মতান্তরে ১৯৭৯ সালে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।
ইসলাম, পবিত্র কোরআন ও রাসুল মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে মিসেস খাওলা বলেন, ‘ইসলাম অখণ্ড ও সুসমন্বিত ধর্ম। সব মানুষের পবিত্র কোরআন শেখা প্রয়োজন। কেননা কারো মেধা ও আধ্যাত্মিক সামর্থ্য সম্পর্কে এ ধর্মে গভীর জ্ঞান আছে। মহান নবী মুহাম্মদ (সা.) সেরা নবী ও রাসুল। তাঁর মাধ্যমে আমরা ইসলাম শিখতে পারি এবং জান্নাতের পথ লাভ করতে পারি।’
জাপানে ইসলামের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে মিসেস খাওলা জানান, ‘তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো থেকে মুসলিমরা এখানে আসার ফলে সম্প্রতি জাপানে ইসলামের শক্তি বাড়ছে। জাপানের মুসলমানদের মধ্যে অনেকেই পাকিস্তান ও ইরানের নাগরিক। এখানে ইসলাম শিক্ষার উপকরণ কম থাকায় নবদীক্ষিত মুসলমানরা ইসলাম সম্পর্কে ভালোভাবে জানার সুযোগ পাচ্ছে না এবং তাদের আঞ্চলিক প্রথা ও ইসলামী প্রথার পার্থক্য নির্ধারণ করতে সক্ষম হচ্ছে না।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে জাপানে মুসলমানদের ব্যাপক বৃদ্ধি খুবই তাৎপর্যবহ। জাপানের বর্তমান প্রজন্ম ইসলাম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। তারা তাদের ছেলে-মেয়েদের ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চায়। যুব মুসলিমদের শিক্ষিত করে তোলার জন্য আমাদের আরো ক'ঠোর পরিশ্রম করে পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’