ইসলাম ডেস্ক : রমজান বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ মাস। এ মাসে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। আর কোরআন অবতীর্ণ হওয়ায় এ মাসের মর্যাদা অনেক বেড়ে গেছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- রমজান মাস, এ মাসে মানুষের দিশারী, সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। (বাকারা-১৮৫)। সর্বশ্রেষ্ঠ মাস রমজানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া অর্জন। এক মাস তাকওয়ার অনুশীলন করে সারা বছরের তাকওয়ার কাক্সিক্ষত গুণ অর্জনের জন্যই আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের রমজান মাসটি দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে মুমিনগণ তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপরও ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার। (বাকারা : ১৮৩)।
তাকওয়া অর্জন করতে হলে মহান আল্লাহর প্রতিটি বিধান যথাসাধ্য মানতে হবে। রমজানের রোজা ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম। মুত্তাকি হতে হলে এ ফরজ রোজা শরিয়তের নিয়মানুযায়ী রাখতে হবে। আর এর জন্য এ সংশ্লিষ্ট খুঁটিনাটি বিধি-বিধান সবই জানা জরুরি। কিন্তু ক’জন মুসলমানই বা এসব বিধি-বিধান বিস্তারিত জানেন। বিশেষত নারীরা শরিয়তের অন্যান্য হুকুম আহকামের মতোই রোজার বিস্তারিত বিধি-বিধান খুব কমই জানেন। অনেক মাসআলা লজ্জার বিষয় মনে করে তারা কারও কাছে জানতেও কুণ্ঠাবোধ করেন। অথবা জানার মতো লোক পান না বলে সে বিষয়ে তারা ভুলের মধ্যেই থেকে জান। যা অনাকাক্সিক্ষত। এসব বিবেচনায় রমজানের রোজা সংশ্লিষ্ট মহিলাদের জরুরি মাসআলা-মাসায়েল নিয়ে এ লেখাটির প্রয়োজন অনুভব করলাম। এতে ধর্মপ্রাণ মুসলিম নারীরা উপকৃত হবেন বলেই দৃঢ় বিশ্বাস, কারও কোনো বিষয়ে বিস্তারিত জানার প্রয়োজন হলে ফোনে কথা বলতে পারেন।
নারীর রোজা : পুরুষের রোজার যত সওয়াব পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এসেছে তার সবই নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- কী পুরুষ, কী নারী যে কেউ সৎকর্ম করে এমতাবস্থায় যে, সে মুমিন তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের প্রতি অণুপরিমাণও জুলুম করা হবে না। (নিসা-১২৪)। অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে- কী পুরুষ, কী নারী, যে কেউ নেক আমল করবে এবং সে মুমিন নিশ্চয় আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব। (নাহল-৯৭)।
কোনো কোনো হাদিসে অবশ্য জানা যায়, মহিলারা কোনো নেক আমল করলে তারা বরং দ্বিগুণ সওয়াব পাবেন। কারণ তারা স্বামীর খেদমত করেন, সংসার সামলান, সন্তান লালন-পালন করেন। এসব ঠিক রেখে যখন তারা ইবাদত-বন্দেগিও ঠিকঠাক করেন তখন দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়ারই তো কথা।
গর্ভাবস্থায় রোজা : অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে যদি কোনো মুসলমান পরহেজগার অভিজ্ঞ ডাক্তার বলেন, রোজা রাখলে তার নিজের বা গর্ভের বাচ্চার প্রাণনাশের বা মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার আশংকা রয়েছে, তাহলে তিনি রোজা না রাখতে পারেন। পরে শুধু কাজা করে নিলেই হবে। (তিরামিজি ১/১৫২, নাসায়ী ১/২৪৭, হেদায়া, ১/২২২, বাদাইউস সানায়ে, ২/২৫০)।
স্তন্যদানকারিনীর রোজা : স্তন্যদানকারিনীর রোজার বিষয়টিও অনেকটাই অন্তঃসত্ত্বার রোজার মতো। অর্থাৎ স্তন্যদানকারিনী যদি নিজে রোজা রাখলে দুগ্ধপোষ্য শিশুর প্রাণনাশ বা অন্য কোনো মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার প্রবল আশংকা থাকে তাহলে তিনি রোজা না রাখতে পারেন। পরে কাজা করে নিতে হবে।
ওষুধ-বড়ি খেয়ে মাসিক বন্ধ রেখে রোজা রাখা : মহিলাদের পিরিয়ড হওয়াটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আল্লাহতায়ালা তাদের এভাবেই সৃষ্টি করেছেন। এতে তাদের কোনো দোষত্রুটি নেই। পিরিয়ড অবস্থায় নামাজ মাফ। আর রোজা পিরিয়ড অবস্থায় রাখা নিষেধ তবে এ রোজা না রাখাতে তাদের কোনো গোনাহ নেই। তবে পরে তা কাজা করতে হয়। এজন্য রমজান মাসে পিরিয়ড হলে তা নিয়ে মনঃক্ষুণ্ণ হওয়ার কোনো যুক্তি নেই। তবে কেউ যদি শুরু হওয়ার আগেই ওষুধ-বড়ি খেয়ে পিরিয়ড বন্ধ রেখে রোজা রাখেন তবে সে রোজা সহি হয়ে যাবে। ফলে তা আর পরে কাজা করতে হবে না। (শামী ১/৫০৮, আলমগীরি ১/৩৮, বাদায়ে ১/৩৯, ফাতহুল কাদির ১/১৪৫, আপকে মাসায়েল ৩/২০৭)।
লেখক : শায়খে সানী ও প্রধান মুফতি চৌধুরীপাড়া মাদ্রাসা,
খতিব-মুহাম্মদিয়া দারুল উলুম জামে মসজিদ, পশ্চিম রামপুরা, ঢাকা। প্রয়োজনে ফোন করুন- ০১৭৪২৫৪২৯৯২