ইসলাম ডেস্ক : পবিত্র কোরআনে নামাজ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি যাকাত আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই যাকাত সমন্বিত পরিকল্পনা করে সঠিকভাবে না দেওয়ায় মুসলমান হিসেবে যেমন সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ অমান্য করা হচ্ছে, অন্যদিকে গরিব মানুষও বছরের পর বছর গরিবই থেকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন ইসলামি গবেষকরা। যাকাত বিষয়ে ইসলাম কী বলছে, আর আমরা কী করছি? আর করণীয়ই বা কী?
১) যাকাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অন্যতম রুকন বা স্তম্ভ। এটি নিছক একটি নেক কাজ ও ভালো অভ্যাসই নয় চারটি প্রধান ইবাদতের অন্যতম একটি ইবাদত। যার অস্বীকার করা কুফরির সামিল।
২) যাকাত ধনীদের ধন-মালে গরিবদের সুনির্দিষ্ট হক। ধন-মালের প্রকৃত মালিক মহান আল্লাহই যা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। এতে গরিবদের উপর ধনীদের অনুগ্রহের কোনো ভাবধারা নেই।
৩) হক সুপরিজ্ঞাত। ইসলামী শরিয়াতই যাকাতের নিসাব ও পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে। এর সীমা ও শর্ত নির্ধারিত। প্রত্যেকটি মুসলিমই জানে তার দলিল প্রমাণ।
৪) এ অধিকারটি ব্যক্তিদের মনের ভালোলাগা না লাগার উপর ছেড়ে দেয়া হয়নি। তা সংগ্রহ বা আদায় করা ন্যায়নীতির ভিত্তিতে এবং বণ্টন করা ইনসাফের নীতি অনুযায়ী সরকারের ওপর অর্পিত দায়িত্ব। আর তা করা হবে এ কাজে নিযুক্ত বিশেষ কর্মচারীর মাধ্যমে এবং সরকার কর্তৃক ধার্যকৃত করের মতই তা আদায় করা হবে।
৫) এই ফরজ কাজ করতে অর্থাৎ যাকাত দিতে অস্বীকারকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকেই সরকার শাস্তি দেবে।
৬) যাকাত বাবদ সংগৃহীত সম্পদ শাসক-প্রশাসকদের খামখেয়ালীর উপর ছেড়ে দেয়া যাবে না। এজন্য ইসলাম তার সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে এবং পাওনাদারদের তালিকাও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে।
৭) গরিবদের উপস্থিত প্রয়োজন পূরণ কিংবা তাদের সাময়িক দৈন্য-দুর্দশা বিদূরণের জন্য এ যাকাত কোনো বদান্যতার ব্যাপার নয়। আসল লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র্যের উপর চূড়ান্ত আঘাত হানা, দরিদ্রদের দারিদ্র্য থেকে চিরমুক্তির ব্যবস্থা করা।
৮) কুরআন নির্ধারিত ও সুন্নাত কর্তৃক বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যাকৃত যাকাত ব্যয়ের ক্ষেত্রসমূহের প্রতি দৃষ্টি দিলে স্পষ্ট হয় যে, তা দিয়ে বহু সংখ্যক আত্মিক, নৈতিক, সামাজিক, ও রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন করাই উদ্দেশ্য। এ কারণে যাদের মন জয় করতে হবে, যারা বন্দী, ঋণগ্রস্ত এবং আল্লাহর পথে এ সবকে ব্যয়ের ক্ষেত্র হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
ইসলামের যে পাঁচটি স্তম্ভ, যাকাত তার মধ্যে অন্যতম। তবে যাকাত তার ওপরই ফরজ, যিনি যাকাত দেয়ার জন্য পরিমাণ মত অর্থ-সম্পদের মালিক এবং এই সম্পদ আদায়কারীর কাছে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকে। ইসলামে যাকাত দেয়ার ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে কি বলেছেন। কাদেরকে দিতে হবে এই যাকাত?
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির ড. মো. আবু সালেহ পাটোয়ারী বলেন, আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজিদে ১৩৪ বার নামাযের সঙ্গে যাকাতের কথা উল্লেখ করেছেন। এর পাশাপাশি কাদের কে যাকাত দিবেন তারও দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ফকির- মিসকিন যাদের এক দিনের খাওয়া নেই, যারা যাকাত আদায় উসুলকারী, দাসমুক্তির জন্য, ঋণ গ্রস্থ ও মুসাফিরদেরকে যাকাত দেওয়া ফরয।
কিন্তু আমরা কি সঠিকভাবে যাকাত দিচ্ছি? প্রকৃত যাকাত প্রাপ্তদের কাছে যাকাত পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সঠিক ভূমিকা পালন করা হচ্ছে না বলে জানালেন আরেকজন ইসলামি গবেষক।
দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজ ও দাওয়াহ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান বলেন, পবিত্র কোরআনে বার বার বলা আছে আকিমু সালাত, ওয়া আতুজ যাকাত তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা কর, যাকাত আদায় কর। সুতরাং শুধু নামায পড়লেই হবে না এর সঙ্গে যাকাত না দিলে আমাদের ইবাদত পরিপূর্ণ হবে না। ট্যাক্স ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে এই যাকাত সম্পদ কে কমিয়ে দেয় না বরং সম্পদকে বাড়িয়ে দেয় এবং পবিত্র করে। আমরা যদি একটি পরিবারকে মুরগির খামার করে দিতে পারি তাহলে সে পরিবারটি আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়।
ড. মুনিম খান বললেন, যাকাত আদায়ে রাষ্ট্র যদি উদ্যোগী হয় তাহলে কমে আসবে ধনী-গরীবের বৈষম্য। সমাজে যাকাত নেয়ার মানুষ কমে আসবে, বাড়বে যাকাত দেয়ার মানুষ।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় যাকাত আদায় করা হলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়, দারিদ্র বিমোচন হয়, রাষ্ট্রীয় প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়, ধনী গরিবের মধ্যে পার্থক্য কম হয়।
যদি বিত্তবানরা সঠিক ভাবে যাকাত আদায় করে তাহলে বাংলাদেশে গরিব লোকের সংখ্যা কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
ইসলামি বিশেষজ্ঞরা বললেন, যাকাত ঠিকমতো দেয়া হলে গরীবের ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে। যা দেশের অর্থনীতিতে সুফল বয়ে আনবে।