শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:৫৪:২৬

হাশরের ময়দানে মানুষ তিনটি অবস্থায় উত্থিত হবে

হাশরের ময়দানে মানুষ তিনটি অবস্থায় উত্থিত হবে

মুফতি তাজুল ইসলাম : কেয়ামতের দিনে মানুষের অবস্থা : হাশরের ময়দানে মানুষ তিনটি অবস্থায় উত্থিত হবে। ১. একদল বাহনে করে, ২. একদল পদব্রজে, ৩. একদল মাথায় হেঁটে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘অবশ্যই মানুষ তিনটি দলে বিভক্ত হবে। একদল আরোহী স্বাদগ্রহণকারী ও সম্মানী। আরেকদল রয়েছে, যাদের ফেরেশতারা চেহারায় হাঁটিয়ে দোজখে নিয়ে যাবেন, আরেকদল পদব্রজে হাশরে উত্থিত হবে।’ (নাসায়ি, মিশকাত, পৃষ্ঠা ৪৮৪)

হাদিস শরিফে রয়েছে, ‘প্রত্যেক ব্যক্তি হাশরের মাঠে ভয়ে বলতে থাকবে—আমাকে বাঁচান, আমাকে বাঁচান। একমাত্র মুহাম্মদ (সা.) উম্মত নিয়ে চিন্তা করবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ২৭১২)

কিয়ামতের বিভীষিকাময় ময়দানে কেউ কারো হবে না। সবাই ইয়া নাফসি, ইয়া নাফসি করতে থাকবে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে এসেছে, ‘সেদিন মানুষ নিজের ভাই, নিজের মা, নিজের পিতা, নিজের স্ত্রী ও সন্তানাদি থেকে পালাবে। তাদের মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর সেদিন এমন সময় এসে পড়বে, সে নিজেকে ছাড়া আর কারো প্রতি লক্ষ করার মতো অবস্থা থাকবে না।’ (সুরা : আবাসা, আয়াত : ৩৪-৩৭)

কঠিন দিনে বিনা হিসাবে জান্নাত লাভ : হাশরের মাঠে এত ভয়াবহ অবস্থা সত্ত্বেও কিছু মানুষ বিনা বিচারে বা বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে। এ বিষয়ে হাদিস শরিফে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রহ.) বলেন, একদিন রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার কাছে সব উম্মতের লোকদের উপস্থাপন করা হলো। আমি দেখলাম, কোনো নবীর সঙ্গে মাত্র সামান্য কয়জন (তিন থেকে সাতজন অনুসারী) আছে। কোনো নবীর সঙ্গে একজন অথবা দুজন লোক রয়েছে। কোনো নবীকে দেখলাম তাঁর সঙ্গে কেউ নেই! ইতোমধ্যে বিরাট একটি জামাত আমার সামনে পেশ করা হলো। আমি মনে করলাম, এটাই বুঝি আমার উম্মত। কিন্তু আমাকে বলা হলো যে এটা হলো মুসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর উম্মতের জামাত। কিন্তু আপনি অন্য দিগন্তে তাকান।

অতঃপর আমি সেই দিকে তাকাতেই আরো একটি বিরাট জামাত দেখতে পেলাম। আমাকে বলা হলো যে এটি আপনার উম্মত। আর তাদের সঙ্গে এমন ৭০ হাজার লোক আছে, যারা বিনা হিসাবে ও বিনা আজাবে সরাসরি জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ কথা বলে তিনি (আল্লাহর রাসুল) উঠে নিজ ঘরে প্রবেশ করলেন। এদিকে লোকেরা (উপস্থিত সাহাবিরা) ওই সব জান্নাতি লোকদের ব্যাপারে বিভিন্ন আলোচনা শুরু করে দিল, (কারা হবে সেই লোক) যারা বিনা হিসাবে ও বিনা আজাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে?

কেউ কেউ বলল, সম্ভবত, ওই লোকেরা হলো তারা, যারা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সাহাবা তারা। কিছু লোক বলল, বরং সম্ভবত ওরা হলো তারা, যারা ইসলামে জন্মগ্রহণ করেছে এবং আল্লাহর সঙ্গে কখনো কাউকে শরিক করেনি। আরো অনেকে অনেক কিছু বলল। কিছুক্ষণ পরে আল্লাহর রাসুল (সা.) তাদের কাছে বের হয়ে এসে বলেন, তোমরা কী ব্যাপারে আলোচনা করছ? তারা ব্যাপারটি খুলে বললে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, (বিনা বিচারে জান্নাতি লোক) হলো তারা, যারা—

(ক) দাগ কেটে রোগের চিকিৎসা করায় না। (খ) অন্যের কাছে রুকইয়া বা ঝাড়ফুঁক করে দিতে বলে না। (গ) কোনো জিনিসকে অশুভ লক্ষণ বলে মনে করে না। (ঘ) বরং তারা শুধু আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে।

এ কথা শুনে উক্কাশাহ ইবনু মিহসান নামক একজন সাহাবি উঠে দাঁড়ালেন এবং বলেন, (হে আল্লাহর রাসুল!) আপনি আমার জন্য দোয়া করুন, আল্লাহ যেন আমাকে তাদের দলভুক্ত করে দেন!

তিনি বলেন, তুমি তাদের মধ্যে একজন। অতঃপর আর এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আপনি আমার জন্যও দোয়া করুন, যেন আল্লাহ আমাকেও তাদের দলভুক্ত করে দেন। তিনি বলেন, উক্কাশাহ (এ ব্যাপারে) তোমার অগ্রগামী হয়ে গেছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৭০৫, ৩৪১০; তিরমিজি, হাদিস : ২৪৪৬)

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে