হুসাইন আল জাওয়াদ : পর্দার বিধান মানুষের মনগড়া আইন কিংবা সামাজিক কোনো প্রথা নয়। বরং মানবজীবন সুষ্ঠুরূপে পরিচালনার জন্য আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নির্ধারিত বিধান। তাই বলতে হয়- পর্দা মুমিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কুরআন মাজিদ ও হাদিসে রাসূল এটাকে অলঙ্ঘনীয় বিধান তথা ফরজ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিধান অস্বীকারকারী নিশ্চিত কাফির বলে স্বীকৃত। এতে কোনো ওলামায়ে কিরামের দ্বিমত নেই। আজ পদে পদে যেভাবে পর্দা লঙ্ঘিত হচ্ছে তার পরিণতি খুবই ভয়াবহ।
অনেকের ধারণা, পর্দা শুধু নারীর জন্য ফরজ, পুরুষের জন্য নয়। এ ধারণা নিতান্তই ভুল। নারীর পাশাপাশি পর্দা পুরুষের ওপরও ফরজ। মহান আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীই তার প্রমাণ। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘হে নবী মুমিন পুরুষদের বলে দিন তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনমিত রাখে এবং যৌন পবিত্রতা রক্ষা করে চলে। এটাই তাদের জন্য পবিত্রতম পন্থা। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে আল্লাহ তা অবহিত’ (সূরা আননূর : ৩০)।
জারির ইবনে আবদিল্লাহ বাজালি রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা:-কে কোনো নারীর প্রতি হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে যাওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, সাথে সাথেই দৃষ্টি সরিয়ে নেবে (সহিহ মুসলিম)।
বুরাইদা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: আলী রা:-কে বললেন, হে আলী! দৃষ্টির ওপর দৃষ্টি ফেলো না। হঠাৎ যে দৃষ্টি পড়ে ওটা তোমার ক্ষমার্হ; কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি তোমার জন্য ক্ষমাহীন পাপ (হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আবু দাউদ (রহ:)।
আবু উমামা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, যার দৃষ্টি কোনো স্ত্রী লোকের সৌন্দর্যের প্রতি পতিত হয়, অতঃপর দৃষ্টি সরিয়ে নেয়, আল্লাহ তায়ালা এর বিনিময়ে তাকে এমন এক ইবাদত দান করেন, যার মজা বা স্বাদ সে তার অন্তরেই উপভোগ করে ( হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমদ রহ:)।
এবার আসা যাক পর্দার ব্যাপারে হাদিসের নির্দেশিকা। বিশ্বনবী রাসূলে আকরাম সা: বলেন- তোমরা (মুমিনরা) নবীপত্নীদের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা পর্দার (পর্দার বিধান) তোমাদের এবং তাদের অন্তরসমূহের জন্য পবিত্র থাকার উত্তম পন্থা (সূরা আহজাব: ৫৩)।
রাসূল (সা:) আরো বলেন, সাবধান! কোনো (পর) পুরুষ যেন কোনো (পর) নারীর সাথে নির্জনে অবস্থান না করে। কেননা যখনই তারা (নিরিবিলিতে) মিলিত হয়, শয়তান তাদের তৃতীয়জন হয় এবং (উভয়কে) কুকর্মে লিপ্ত করানোর প্রচেষ্টায় সে তাদের পিছু লেগে যায় ( তিরমিজি শরিফ)।
কোনো (পর) পুরুষ যেন কোনো মহিলার সাথে নির্জনে মিলিত না হয়। তবে মাহরাম ব্যক্তির (ব্যাপারটি) স্বতন্ত্র। আর কোনো মহিলা যেন মাহরাম ছাড়া একাকী তিন দিনের পথ (৪৮ মাইল) পথ ভ্রমণ না করে (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)।
আল কুরআনের সূরা নিসায় যেসব মহিলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে যাদের বিয়ে করা হারাম। তাদের সাথে দেখা করা বৈধ। এ ছাড়া অন্য কারো প্রতি দৃষ্টি দেয়াকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ দেখা থেকেই সৃষ্টি হয় আকাঙ্ক্ষা। আকাক্সক্ষা থেকে সৃষ্টি হয় অবৈধ সম্পর্ক, যা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম। এমনকি বিয়ের পাত্র-পাত্রীকেও একান্তে বসে কথা বলা কিংবা দেখা করা হারাম বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও তৃতীয় একজনকে রাখার জন্য বলা হয়েছে। সেখানে আমরা অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেভাবে বিনাবাধায় কথা বলছি, মেয়েদের বান্ধবী বানাচ্ছি, ইসলাম তা স্পষ্ট হারাম ঘোষণা করেছে। এসব কর্মকাণ্ড থেকে যদি আমরা নিজেদের বিরত না রাখি তাহলে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় অবধারিত। আজ পদে পদে ইসলামী বিধানকে যেভাবে তুচ্ছ করে দেখা হচ্ছে, অচিরেই তা মুসলিম পারিবারিক অবকাঠামোর ভাঙনকে ত্বরান্বিত করবে বৈকি।
পর্দার বিধান মেনে চললে লাভটা আমাদেরই। এ বিধানের মাধ্যমে হত্যা, নারী নির্যাতন, ইভটিজিং আর পরকীয়ার মতো নিন্দনীয় ও গর্হিত কাজ সমাজ থেকে অনেকটাই বিলুপ্ত হবে। আর বাস্তব আইনের চেয়ে স্রষ্টার ভয়ই পারে মানুষকে পরিপূর্ণভাবে অন্যায় ও অপকর্র্ম থেকে বিরত রাখতে। তাই আসুন, ইসলামী বিধানকে আঁকড়ে ধরি, জান্নাতের পথে চলি। এভাবেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে শান্তি ও সাম্য।-নয়াদিগন্ত
লেখক : সাংবাদিক