মসজিদের শহর ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে বিশাল আয়তন ও সুরম্য স্থাপনা নিয়ে আজকের যে বায়তুল মোকাররম দাঁড়িয়ে আছে, ১৯৬৩ সালের ২৩ জানুয়ারি সেখানে প্রথম নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যদিও মসজিদের নির্মাণ ২৭ জানুয়ারি ১৯৬০ সালে শুরু হয়ে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত চলেছিল। বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম ৮.৩০ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং আয়তন ২৬৯৪.১৯ বর্গ মিটার। মসজিদটির সর্বোচ্চ গম্বুজের উচ্চতা ৩০.১৮ মিটার। মসজিদের প্রবেশ পথগুলো রাস্তা থেকে ৯.৯ ফুট উঁচুতে অবস্থিত।
যাত্রা শুরু : তৎকালীন পাকিস্তানের বিশিষ্ট শিল্পপতি আবদুল লতিফ ইব্রাহিম বাওয়ানি এবং তাঁর ভাতিজা ইয়াহইয়া বাওয়ানি বায়তুল মোকাররম মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। সে অনুযায়ী ১৯৫৯ সালে ‘বায়তুল মোকাররম মসজিদ সোসাইটি’ গঠন করা হয়। মসজিদ নির্মাণের জন্য ৮.৩০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। তৎকালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান মসজিদটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। মসজিদ কমপ্লেক্সের নকশা সিন্ধুর বিশিষ্ট স্থপতি আবদুল হুসেন থারিয়ানিকে। পুরো কমপ্লেক্স নকশার মধ্যে দোকান, অফিস, গ্রন্থাগার ও গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৬৩ সালের ২৫ জানুয়ারি (শুক্রবার) প্রথমবারের মতো এখানে নামাজ পড়া হয়।
আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ : ২০০৮ সালে সৌদি আরবের আর্থিক সহায়তায় বায়তুল মোকাররমের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ হয়। ফলে মুসল্লি ধারণ ক্ষমতা ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজারে উন্নীত হয়। এখন বায়তুল মোকাররম মসজিদ আটতলা। নিচতলায় বিপণিবিতান ও গুদামঘর। দোতলা থেকে ছয়তলা পর্যন্ত প্রতি তলায় নামাজ পড়া হয়। সব মিলিয়ে মুসল্লিরা বায়তুল মোকাররম মসজিদের এক লাখ ২৫ হাজার ৬২ বর্গফুট এলাকা ব্যবহার করেন। এ ছাড়া নারীদের জন্য রয়েছে ছয় হাজার ৩৮২ বর্গফুট নামাজের জায়গা।
পরিচালনা : ১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বায়তুল মোকাররমে সাতজন খতিব নিয়োগ পেয়েছেন। বিশিষ্ট আলেমে দ্বিন মাওলানা আবদুর রহমান কাশগরি (রহ.) ছিলেন বায়তুল মোকাররমের প্রথম খতিব।
স্থাপত্যশৈলী : বায়তুল মোকাররমের মূল অবকাঠামো কাবাঘরের আদলে তৈরি। তবে আধুনিক স্থাপত্য রীতিতে তৈরি এ মসজিদের নকশায় মোগল স্থাপত্যশৈলীর ছাপ রয়েছে। মূল নকশা অনুযায়ী, মসজিদের প্রধান প্রবেশপথ পূর্ব দিকে হওয়ার কথা থাকলেও উত্তর ও দক্ষিণ গেট দুটোই বেশি ব্যবহূত হয়। দক্ষিণ ও উত্তর পাশে ওজু করার জায়গা রয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ দিকে, মসজিদে প্রবেশ করার বারান্দার ওপর দুটি ছোট গম্বুজ নির্মাণের মাধ্যমে প্রধান ভবনের ওপর গম্বুজ না থাকার অভাব ঘোচানো হয়েছে। সমগ্র মসজিদজুড়েই অলংকরণের আধিক্যকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
মুজিববর্ষে আইনি স্বীকৃতির প্রত্যাশা : বায়তুল মোকাররম বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ হিসেবে খ্যাত হলেও এর কোনো আইনি স্বীকৃতি নেই। কিন্তু মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকার বায়তুল মোকাররমকে জাতীয় মসজিদ হিসেবে আইনি স্বীকৃতি দেবে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। প্রয়াত ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আবদুল্লাহ এ বিষয়ক একটি প্রস্তাবের সার-সংক্ষেপ অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোর কথা গণমাধ্যমকে জানিয়ে ছিলেন। ফলে চলতি বছরে জাতীয় মসজিদের স্বীকৃতি পাবে বলে প্রত্যাশা দেশের সাধারণ মুসল্লিদের।