বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২১, ০৩:২৬:২২

মহান আল্লাহ তাআলাই বান্দার একমাত্র সাহায্যস্থল

মহান আল্লাহ তাআলাই বান্দার একমাত্র সাহায্যস্থল

ইসলাম ডেস্ক : ভরসা তো তার ওপরই করা যায়, যে সর্বাবস্থায় সাহায্য করতে পারেন। কাউকে সাহায্য করতে যার কারও কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। যিনি নিজেই সর্বে সর্বা। তিনি আর কেউ নন; তিনিই হলেন মহান আল্লাহ তাআলা। ‘আল্লাহুল মুস্তাআন বা মহান আল্লাহ তাআলাই বান্দার একমাত্র সাহায্যস্থল।

আল্লাহ তাআলা মানুষের রব। মানুষ সব বিষয়ে তার ওপর ভসরা করবে এটাই স্বাভাবিক ও নিয়ম। কিন্তু তারপরও মহান আল্লাহ কুরআনে তার ওপর ভরসা স্থাপনকারীর ব্যাপারে দিয়েছেন সুসংবাদ। হাদিসে বিশেষ প্রতিদানের কথা বলেছেন বিশ্বনবি। আল্লাহর ওপর ভরসাকারীর সেই বিশেষ প্রতিদান কী?

‘হ্যাঁ’, মহান আল্লাহ কুরআনের অনেক সুরায় তাঁর ওপর আস্থা ও ভরসা রাখার কথা বলেছেন বার বার। তার ওপর ভরসা রাখলে আল্লাহ তার সব ব্যাপারে যথেষ্ট হবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের (মুক্তির) পথ তৈরি করে দেন। আর তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন; যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করে; আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই।’ (সুরা তালাক : আয়াত ২-৩)

আল্লাহর ওপর ভরসাকারীদের জন্য দুনিয়া ও পরকালের বিশেষ দুইটি প্রতিদানের কথা ঘোষণা করেছেন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসের সুস্পষ্ট বর্ণনা থেকে তা প্রমাণিত।
> দুনিয়ার বিশেষ প্রতিদান
দুনিয়ায় মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ প্রতিদান পাওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে- আল্লাহ তাআলার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হওয়া। হাদিসে এসেছে-
হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা যদি প্রকৃতভাবেই আল্লাহ তাআলার ওপর নির্ভরশীল হতে তাহলে পাখিদের যেভাবে রিজিক দেয়া হয়; সেভাবে তোমাদেরও রিজিক দেয়া হতো। এরা (পাখি যেমনিভাবে) সকালবেলা খালি পেটে বের হয় এবং সন্ধ্যা বেলায় ভরা পেটে ফিরে আসে।’ (ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ )

> পরকালের বিশেষ প্রতিদান
আল্লাহর ওপর ভরসাকারীদের জন্য পরকালের বিশেষ প্রতিদান হলো বিনা হিসেবে জান্নাত লাভ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীর্ঘ এক হাদিসে বিনা হিসেবে জান্নাত পাওয়া ব্যক্তিদের বর্ণনা দিয়েছেন। তাতে এক শ্রেণি হলো- যারা মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে।
- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার উম্মত থেকে ৭০ হাজার ব্যক্তি বিনা হিসেবে জান্নাতে প্ৰবেশ করবে। তাদের অন্যতম গুণ এই যে- তারা আল্লাহর ওপর ভরসা করবে।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)

এছাড়া বিনা হিসেবে কারা জান্নাতে যাবে সে সম্পর্কে দীর্ঘ একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন প্রিয় নবি। তাহলো-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের সামনে বর্ণনা করছিলেন, ‘আমার কাছে সব (নবির) উম্মত পেশ করা হল। আমি দেখলাম, কোনো নবির সঙ্গে কতিপয় (৩ থেকে ৭ জন) অনুসারী রয়েছে। কোনো নবির সঙ্গে এক অথবা দুইজন রয়েছে। আবার কোনো কোনো নবিকে দেখলাম তার সঙ্গে কেউই নেই।

এমন সময় অনেক বড় একটি জামাআত আমার সামনে পেশ করা হল। আমি মনে করলাম, এটিই আমার উম্মত। কিন্তু আমাকে বলা হল যে, এটি হল হজরত মুসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর উম্মতের জামাআত। কিন্তু আপনি অন্য দিগন্তের দিকে তাকান।
অতপর আমি অন্য দিগন্তে তাকাতেই আরও বড় একটি জামাআত দেখতে পেলাম। আমাকে বলা হল যে- ‘এটি হল আপনার উম্মত। আর তাদের সঙ্গে রয়েছে এমন ৭০ হাজার ব্যক্তি; যারা বিনা হিসাব ও আজাব ভোগ কা ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’
এ কথা বলেই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঠে নিজ বাসায় প্রবেশ করলেন। আর এদিকে উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম ওই 
সব বিনা হিসাবে জান্নাতিদের ব্যাপারে বিভিন্ন আলোচনা শুরু করে দেয়-
- কেউ কেউ বলল, ‘সম্ভবত ওইসব লোকেরা হল তারা, যারা আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবাগণ।
- কিছু লোক বলল, বরং সম্ভবত ওরা হল তারা, যারা ইসলামের ওপর জন্মগ্রহণ করেছে এবং আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করেনি। এভাবে আরও অনেকে অনেক কিছু বলল।
কিছুক্ষণ পর...
আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের কাছে বের হয়ে এসে জানতে চাইলেন- তোমরা কী ব্যাপারে আলোচনা করছ? সাহাবায়ে কেরাম জানালেন, বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবেন; তারা কারা?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল।লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘ওরা হল সেইসব ব্যক্তি-
-যারা ঝাঁড়ফুঁক করে না এবং ঝাঁড়ফুঁক করায় না।
- আর কোনো জিনিসকে অশুভ লক্ষণ বলেও মনে করেন না। বরং
- তারা শুধুই মহান আল্লাহ তাআলার প্রতি আস্থা এবং বিশ্বাস রাখেন।

এ কথাগুলো শুনেই হজরত উক্কাশাহ ইবনে মিহসান রাদিয়াল্লাহু আনহু উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন-
‘(হে আল্লাহর রাসুল!) আপনি আমার জন্য দোয়া করুন, যেন আল্লাহ তাআলা আমাকে তাদের দলভুক্ত করে দেন! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সঙ্গে সঙ্গেই) বললেন, তুমি তাদের মধ্যে একজন।’

অতপর আরও এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আপনি আমার জন্যও দোয়া করুন, যেন আল্লাহ আমাকেও তাদের দলভুক্ত করে দেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘‘উক্কাশাহ (এ ব্যাপারে) তোমার চেয়ে অগ্রগামী।’ (বুখারি ও মুসলিম)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সব কাজে মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা। আল্লাহর ওপর আস্থা ও ভরসা রাখার মাধ্যমে দুনিয়ায় রিজিক ও পরকালে বিনা হিসেবে জান্নাত পাওয়ার চেষ্টা করা।

কেননা আল্লাহর ওপর ভরসা করা এবং শুধু আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করার গুরুত্ব যেমন অপরিসীম তেমনি মুমিন মুসলমানের জন্য তাঁর ওপর ভসরা করা অপরিহার্য কাজও বটে। তাই আল্লাহকে ভুলে গাফেল বা অজ্ঞদের তালিকায় নাম লেখানো থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের ঈমানের একান্ত দাবি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শুধু তাঁর ওপরই ভরসা করার তাওফিক দান করুন। মানুষের মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। হাদিসের বর্ণিত দুনিয়া ও পরকালের বিশেষ প্রতিদান পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে