সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০২:১৩:৫১

ইসলামে যাদেরকে মুসলিম, কাফের ও নাস্তিক বলা হয়েছে

ইসলামে যাদেরকে মুসলিম, কাফের ও নাস্তিক বলা হয়েছে

ইসলাম ডেস্ক: সাম্প্রতিক সময়ে নাস্তিক শব্দটি খুব বেশি ব্যবহার হচ্ছে। বর্তমানে যাদেরকে নাস্তিক বলা হচ্ছে তারা কি প্রকৃতই নাস্তিক? কিংবা যারা নাস্তিক বলছে তারা কি প্রকৃত মুসলমান? নাস্তিকরাই কি কাফের? চলুন জেনে নিই ইসলামের পরিভাষায় কাদেরকে মুসলমান, কাদেরকে কাফের এবং কাদেরকে নাস্তিক বলা হয়েছে।

 
মুসলমান:
রাসূল (সাঃ) হাদীসে মুসলমান হওয়ার পরিচয় দিয়েছেন।
عن أنس بن مالك قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( من صلى صلاتنا واستقبل قبلتنا وأكل ذبيحتنا فذلك المسلم
অনুবাদ-হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি আমাদের মত নামায পড়ে, আমাদের কিবলাকেই কিবলা নির্ধারণ করে, এবং আমাদের জবাইকৃত পশু খায়, সে মুসলমান। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৮৪)
মুসলামান হিসেবে নিজেকে দাবি করতে হলে কালিমা তৈয়বা ‘লা ইলাহা ইলাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ বিশ্বাসের পাশাপাশি আরো যেগুলো জরুরী ভিত্তিতে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে সেগুলো হলো:
১-আল্লাহ একক।
২-আল্লাহ তাআলার সকল সিফাত সত্য।
৩-আল্লাহ তাআলা অনাদি, অনন্ত।
৪-সকল কিছুই আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি।
৫-সব কিছুই আল্লাহ তাআলা অধীন।
৬-তার জ্ঞান সর্বত্র বিস্তৃত।
৭-তিনি সব জানেন, সব দেখেন। কোন কিছুই তার দেখার বাহিরে নয়।
৮-রাসূল সাঃ আল্লাহর প্রেরিত বান্দা।
৯-রাসূল সাঃ এর উপর নাজিলকৃত কুরআন সত্য।
১০-রাসূল সাঃ এর হাদীস সত্য।
১১-হাশর সত্য।
১২-কবরের আজাব সত্য।
১৩-জান্নাত-জাহান্নাম সত্য।
১৪-রাসূল সাঃ এর আগমনের পূর্বে আরো অনেক নবী রাসূল এসেছিলেন।
১৫-কুরআন ছাড়াও আরো আসমানী কিতাব ইতোপূর্বে নাজিল হয়েছিল, কিন্তু তা বর্তমানে রহিত ও বিকৃত।
১৬-রাসূল সাঃ সর্বকালের সর্বশেষ্ঠ সৃষ্টি।
১৭-তিনি সর্বশেষ নবী। তারপর কোন প্রকার নবী আর আসবে না।
১৮-রাসূল সাঃ নিষ্পাপ ছিলেন।
১৯-রাসূল সাঃ চরিত্রে সামান্যতম কোন দাগও নেই।
২০-সমস্ত সৃষ্টির মাঝে সবচে’ চরিত্রবান ও মর্যদাবান ব্যক্তিত্বের নাম মুহাম্মদ সাঃ ইত্যাদি।

কাফের কাকে বলে?
উল্লেখিত মুসলমান এর সংজ্ঞার দ্বারাই কাফের কাকে বলে তা জানা হয়ে গেছে। তা হল-ইসলাম ধর্মের আবশ্যকীয় কোন একটি বিশ্বাসকে অস্বিকার করার নাম কুফরী।
শুধু কালিমা পড়ে, তারপর রাসূল সাঃ এর আখলাক ও জীবনাচারকে অমান্য ও অবজ্ঞা করলেও কেউ মুসলমান থাকতে পারে না। যেমনটি আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা দিয়েছেন-
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا [٤:٦٥]
অতএব,তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না,যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হৃষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে।(সূরা নিসা-৬৫)
সুতরাং বুঝা গেল যে, কাফের ঐ ব্যক্তি যে জরূরিয়্যাতে দ্বীনের মধ্য থেকে সর্বনিম্ন যে কোন একটি বিষয়কে অস্বিকার করে। বেশি করলে যে কাফের তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

নাস্তিক কাকে বলে?
নাস্তিকতা বা এথিজম হল স্রষ্টার অস্তিত্বহীনতা। তথা একথার বিশ্বাস করা যে, স্রষ্টা বলতে কিছু নেই। আসমান, জমিন, গ্রহ-তারা সবই এমনিতেই প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে। এগুলোর কোন স্রষ্টা নেই। এক কথায় স্রষ্টার অস্তিত্বহীনতার বিশ্বাসের নাম নাস্তিক্যতা।
নাস্তিকতার অর্থ কাফের। কারণ কাফের হওয়ার জন্য দ্বীন ইসলামের যে কোন একটি আবশ্যকীয় বিষয় অস্বিকার করলেই হয়। আর সেখানে নাস্তিক সেতো কোন কিছুই মানে না, তাই সে যে কাফের এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এক কথায় বলা যায় যে নাস্তিক সে কাফের, কিন্তু যে কাফের সে নাস্তিক নয়।

কুরআন ও হাদীসে এ ব্যাপারে কড়া ভাবে বলা আছে
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا ضَرَبْتُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَتَبَيَّنُوا وَلَا تَقُولُوا لِمَنْ أَلْقَىٰ إِلَيْكُمُ السَّلَامَ لَسْتَ مُؤْمِنًا تَبْتَغُونَ عَرَضَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فَعِنْدَ اللَّهِ مَغَانِمُ كَثِيرَةٌ ۚ كَذَٰلِكَ كُنْتُمْ مِنْ قَبْلُ فَمَنَّ اللَّهُ عَلَيْكُمْ فَتَبَيَّنُوا ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا [٤:٩٤]
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন আল্লাহর পথে সফর কর,তখন যাচাই করে নিও এবং যে,তোমাদেরকে সালাম করে তাকে বলো না যে, তুমি মুসলমান নও। তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদ অন্বেষণ কর,বস্তুতঃ আল্লাহর কাছে অনেক সম্পদ রয়েছে। তোমরা ও তো এমনি ছিলে ইতিপূর্বে; অতঃপর আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। অতএব, এখন অনুসন্ধান করে নিও। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কাজ কর্মের খবর রাখেন। (সূরা নিসা-৯৪)
হাদীসে রাসূল সাঃ যে ব্যক্তি কাফের না তাকে কাফের বললে, সেই কুফরী নিজের দিকে প্রত্যাবর্তন করে মর্মে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন-
عن أبي ذر رضي الله عنه أنه سمع النبي صلى الله عليه و سلم يقول ( لا يرمي رجل رجلا بالفسوق ولا يرميه بالكفر إلا ارتدت عليه إن لم يكن صاحبه كذلك )
হযরত আবু জর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসুল সাঃ বলেছেন যে, তোমাদের কেউ যদি কাউকে ফাসেক বলে, কিংবা কাফের বলে অথচ লোকটি এমন নয়,তাহলে তা যিনি বলেছেন তার দিকে ফিরে আসবে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৬৯৮}

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে