বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রয়োগ চলছে। রোজা রেখে করোনার ভ্যাকসিন নেয়া যাবে কিনা এ নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। এ বিষয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রধান মুফতি শায়খ ড. আহমাদ বিন আব্দুল আজিজ আল-হাদ্দাদ ফতোয়া দিয়েছেন। কী সেই ফতোয়া?
সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম চলছে। যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাদের অনেকের দ্বিতীয় ডোজের নির্ধারিত তারিখ পড়েছে রমজানে। এ ব্যাপারে অনেক দ্বীনদার মুসলিম টিকা গ্রহণে দ্বিধায় রয়েছে। এ বিষয়টির সমাধান দিতে এগিয়ে এসেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধান মুফতি শায়খ ড. আহমাদ বিন আব্দুল আজিজ আল-হাদ্দাদ।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের গ্র্যান্ড মুফতির দেয়া ফতোয়াটি আরব বিশ্বের একাধিক গণমাধ্যমে ওঠে এসেছে। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, করোনা ভাইরাসের টিকা নিলে রোজা নষ্ট হবে না। আরব আমিরাতের ওয়াকফ ও ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ফতোয়া বিভাগীয় প্রধান শায়খ ও গ্র্যান্ড মুফতি ড. আহমাদ বিন আবদুল আজিজ আল হাদ্দাদ এক বিবৃতিতে তা জানিয়েছেন।
গ্যান্ড মুফতি জানান, ‘রোজাদার ব্যক্তি মুখ, নাক ও অন্যান্য খোলা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে কোনো খাবার, পানীয় ও ওষুধ জাতীয় কোনো কিছু গ্রহণ করতে পারবে না। আর করোনার টিকা সূঁচের মাধ্যমে (ইন্ট্রামাস্কুলার) মাংসে নেয়া হয়। সূঁচের মাধ্যমে মাংসে টিনা নিয়ে রোজা ভাঙবে না বিধায় রোজাদার ব্যক্তি করোনার টিকা গ্রহণ করতে পারবে।
গ্যান্ড মুফতি আল-হাদ্দাদ আরও জানিয়েছেন, ‘নাকের শ্লেষ্মা বা রক্তের ফোঁটা থেকে করোনা পরীক্ষার নমুনা নেয়া হলেও রোজা ভাঙবে না। তাই প্রয়োজনে রোজা রেখে করোনা ভাইরাসের পরীক্ষাও করা যাবে। এ পরীক্ষার ফলে নাকের ভেতর নরম কাঠির মাধ্যমেও কোনো জিনিস প্রবেশ করে না। অধিকাংশ ইসলামিক স্কলারদের মতে, এতে রোজা ভাঙবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ইনসুলিন, ইনজেকশন ও স্যালাইন গ্রহণ
তাছাড়া নিয়মিত রোগের কারণে ইনসুলিন, ইনজেকশন, টিকা কিংবা স্যালাইন গ্রহণে ইসলামি আইন শাস্ত্রের সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত হলো- যে কোনো ধরনের ইনজেকশন বা টিকা নিলে রোজা নষ্ট হবেনা। চাই তা শিরায় দেয়া হোক কিংবা চামড়ায়, মাংসে, বা পেটে দেয়া হোক। যেমন-
কুকুরে কামড়ালে পেটে ইনজেকশন দিতে হয়। এসব অবস্থায় অধিকাংশ আলেমদের মতে এটা সুস্পষ্ট যে, এতে তাদের রোজা ভাঙবে না। ইনসুলিন ও স্যালাইন গ্রহণের ক্ষেত্রেও একই বিধান।
বিশ্ববিখ্যাত ইসলামিক স্কলারদের গবেষণা, ফতোয়া ও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার সম্বন্বয়ে এটা প্রমাণিত যে- ইনসুলিন, ইনজেকশন, টিকা কিংবা অসুস্থতায় স্যালাইন গ্রহণে রোজা ভাঙবে না।
কারণ ইনজেকশন দ্বারা যেসব ওষুধ শরীরে প্রবেশ করনো হয়, তা রোজা ভেঙে যাওয়ার জন্য যে শর্ত রয়েছে; তার মধ্যে পড়ে না। রোজা ভেঙে যাওয়ার জন্য যে গ্রহণযোগ্য রাস্তা তথা খাদ্যনালী বা মস্তিষ্কের রাস্তা পথ রয়েছে তা দিয়ে ইনজেকশন, ইনসুলিন, স্যালাইন কিংবা টিকা ইত্যাদি প্রবেশ করানো হয় না।
এ ওষুধগুলো শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে তা খাদ্যনালী দিয়ে পেটে যায় না। বরং অন্য রগ দিয়ে তা ঢুকে থাকে। তাই ইনজেকশন জাতীয় চিকিৎসা গ্রহণের দ্বারাও রোজা ভাঙবে না। তবে যারা রোজার কষ্ট কমানোর উদ্দেশ্যে স্যালাইন গ্রহণ করবে তাদের রোজা মাকরূহ হয়ে যাবে। সুতরাং এ মানসিকতা থেকে বিরত থাকতে হবে।