আজ পবিত্র শবে মেরাজ। মুসলমানদের জন্য এ রাত বিশেষ তাৎপর্যাপূর্ণ। যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর্যের সঙ্গে এ রাজ মুসলিম বিশ্বে পালিত হয়ে থাকে।
বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এই রাতে মহান আল্লাহর সঙ্গে দেখা করেছেন। তার মেরাজে গমনের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত এ রজনী উপলক্ষে দেশব্যাপী আলোচনা সভা ও দোয়া-মোনাজাতের আয়োজন করা হয়ে থাকে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আজ এ উপলক্ষে আলোচনা সভা, দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করবে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের বেলা মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত যে জায়গার আশপাশে তিনি বরকত দান করেছেন-ভ্রমণ করালেন, যাতে তিনি তাকে তাঁর নিদর্শনগুলো দেখাতে পারেন, নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’। (সূরা বনি ইসরাইল : ১)
আল্লাহপাক তাঁর হাবিব (সা.)কে বিশেষ অভ্যর্থনায় মেরাজে নিয়ে যে সম্মাননা দিয়েছেন তার বর্ণনা কালামে পাকে বিবৃত হয়েছে এভাবে : ‘তখন তিনি ঊর্ধ্ব জগতে। তারপর তিনি তাঁর কাছাকাছি হলেন, আরও অনেক কাছে। তখন তাদের মধ্যে দুই ধনুক পরিমাণ বা এর চেয়েও কম পরিমাণ ব্যবধান ছিল। তখন আল্লাহপাক তাঁর প্রতি যা প্রত্যাদেশ করার করলেন।
তিনি যা দেখেছেন তা বিশ্বাস করতে অস্বীকার করেননি। তিনি যা দেখেছেন, তোমরা কি তাঁর সঙ্গে এ বিষয়ে তর্ক করবে? নিশ্চয়ই তিনি তাঁকে আরেকবার দেখেছিলেন। প্রান্তবর্তী সিদরা গাছের কাছে। যার কাছে জান্নাতুল মাওয়া অবস্থিত। যখন গাছটি আচ্ছাদিত ছিল যা দিয়ে তা আচ্ছাদিত হওয়ার ছিল। তাঁর দৃষ্টিবিভ্রম হয়নি, তাঁর দৃষ্টি লক্ষ্যবিচ্যুত হয়নি। তিনি তাঁর রবের মহান নিদর্শনাবলি দেখেছেন। (সূরা আন নাজম)
বিভিন্ন বর্ণনা মতে, বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নবুয়াত লাভের একাদশ বর্ষে ২৬ রজব দিবাগত রাতে চান্দ্র মাস বিবেচনায় ২৭ রজব মেরাজ সংঘটিত হয়েছিল। আরবি ভাষায় মেরাজ অর্থ হচ্ছে সিঁড়ি। আর ফারসি ভাষায় এর অর্থ ঊর্ধ্ব জগতে আরোহণ। পবিত্র কুরআনে আরবের মক্কা নগরী থেকে ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাস (মসজিদে আকসা) পর্যন্ত ভ্রমণকে পবিত্র ‘ইসরা’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। হাদিসে বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত উপনীত হওয়া ও আরশে আজিমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের মহিমান্বিত ঘটনাকে মেরাজ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
একই সময়ে মেরাজে মহানবী (সা.) সৃষ্টিজগতের সব কিছুর রহস্য অবলোকন করেন। মেরাজ থেকে আল্লাহর রাসূল উম্মতে মোহাম্মদির জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হুকুম নিয়ে ফিরে আসেন।
ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে পবিত্র এ রাতটি পালন করে থাকেন। কুরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, নফল নামাজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকা ও বাড়িতে মিলাদ এবং গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে থাকেন।
ইসলামে মেরাজের বিশেষ গুরুত্ব আছে, কেননা এ মেরাজের মাধ্যমেই ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ অর্থাৎ নামাজ মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যক (ফরজ) করা হয় এবং এ রাতেই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ মুসলমানদের জন্য নিয়ে আসেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)।