বৃহস্পতিবার, ১৮ মার্চ, ২০২১, ০৯:২৫:৫৩

নামাজ কবুল না হওয়ার ৬ কারণ

নামাজ কবুল না হওয়ার ৬ কারণ

শায়খ মো: সাইফুল্লাহ : আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কালামুল্লাহ শরিফে ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সূরা আনকাবুত-৪৫) একদা রাসূলুল্লাহ সা: সাহাবিদের নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বললেন, ‘যদি তোমাদের কারো বাড়ির দরজায় একটি প্রবাহিত নদী থাকে, যার মধ্যে সে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে। তাহলে তার দেহে কোনো ময়লা বাকি থাকবে কি?’

সাহাবিরা রা: বললেন, তার গায়ে কোনো ময়লা বাকি থাকবে না। তখন রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘এটাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উদাহরণ যা দ্বারা যাবতীয় গুণাহ মিটিয়ে দেয়া হয়।’(বুখারি, মুসলিম) অন্য হাদিসে রাসূল সা: বলেছেন, ‘মুমিন ও কাফিরের মাঝে পার্থক্য নিরুপণের মাধ্যম হচ্ছে সালাত।’ কুরআন-হাদিসে নামাজের হাকিকত সম্পর্কে অনেক মূল্যবান নির্দেশনা রয়েছে। এসব থেকে বুঝা যায়, নিয়মিত নামাজ আদায়কারী যেকোনো অশ্লীল, অন্যায় ও মন্দকাজ থেকে নিজেকে অনায়াসেই বিরত রাখতে সক্ষম।

বস্তুত, আমরা অনেক সময় এর বিপরীত চিত্র দেখতে পাই। অর্থাৎ এমন অনেক নামাজ আদায়কারীকে দেখা যায় যিনি, কবিরা গুনাহ, হারামসহ অনেক অন্যায় ও অপরাধমূলক কাজে জড়িত। তার দ্বারা অনেক অসামাজিক কাজ সংঘটিত হচ্ছে। শরিয়াতের ফরজওয়াজিব লঙ্ঘিত হচ্ছে। কিন্তু এমনটা কেন? সমাধান কী? এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? কুরআনের ঘোষণা যেহেতু নামাজ মানুষকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে সেহেতু নিয়মিত নামাজ আদায়কারী যদি অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়ে তাহলে বুঝতে হবে তার নামাজে কোনো ত্রুটি আছে! তার নামাজ আল্লাহর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ রয়ে যাচ্ছে! নামাজ ব্যর্থ হওয়া বা কবুল না হওয়ার পেছনে কুরআন-হাদিসের দৃষ্টিকোণ থেকে যে কারণগুলো পরিলক্ষিত হয় তা হলো-

০১. একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে না হওয়া : ইবাদতের প্রধান শর্তই হলো তা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে হতে হবে। নচেৎ তা ইবাদত হিসেবেই গণ্য হবে না। ইবাদতে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে শরিক, সম-অংশীদার বা সমকক্ষ মনে করা যাবে না; তাহলে তা শিরকি কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর এ জাতীয় ইবাদত আল্লাহ কবুল করার প্রশ্নই আসে না। তাই, ইবাদত করতে হবে একনিষ্ঠ নিয়তে, মনে-প্রাণে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। আল্লাহর ঘোষণা- ‘আমি (আল্লাহ) জ্বিন ও মানবজাতিকে আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা আয-জারিয়াত-৫৬) বান্দার সালাত আদায় যেন একমাত্র আল্লাহ সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সম্পাদিত হয়, তবেই আল্লাহ তা কবুল করবেন, অন্যথায় তার নামাজ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে এবং এর মাধ্যমে সে নিজেকে অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখতেও সক্ষম হবে না।

০২. সুন্নত তরিকা অনুসরণ না করা : যেকোনো ইবাদত (ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব, নফল, ফরজে কিফায়া) পালনের ক্ষেত্রে রাসূল সা: প্রদর্শিত সুন্নত তরিকা অনুসরণ করা অবশ্যই কর্তব্য। নচেৎ আল্লাহ তা কবুল করবেন না। রাসূল সা: বলেছেন, ‘যেভাবে তোমরা আমাকে দেখেছ নামাজ আদায় করতে সেভাবে নামাজ আদায় করো।’ হাদিসের স্পষ্ট ঘোষণা হচ্ছে- সুন্নত তরিকাবিহীন নামাজ আদায় কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। সুন্নত পদ্ধতি মেনে নামাজ আদায় করলে সে নামাজ আল্লাহর কাছে গ্রহণীয়।

০৩. খুশু-খুজু না থাকা : ‘খুশু-খুজু’ শব্দদ্বয় আরবি, অর্থ হচ্ছে বিনয়-নম্রতা। নামাজে বিনয়-নম্রতা প্রদর্শন আল্লাহর প্রতি ভয় জাগ্রত করে দেয় এবং নামাজে যথাযথ মনোযোগ আনয়নে সহায়তা করে। আর যে নামজে পূর্ণ মনোযোগ থাকে না, সে নামাজ পরিপূর্ণ হকসহ আদায় হয় না। তাই এ জাতীয় নামাজ দিয়ে অন্যায়, অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ।

০৪. হালাল রুজি ভক্ষণ না করা : যেকোনো ইবাদত কবুল হওয়ার অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে হালাল রুজি ভক্ষণ করা। হাদিসে এরশাদ করা হয়েছে, ‘হালাল রিজিক অন্বেষণ করা ফরজের (ইবাদতের) পর আরেকটি ফরজ’ (ইবাদত)। হালাল রুজি ভক্ষণ না করার কারণে বান্দার নামাজ আল্লাহর কাছে কবুল হচ্ছে না। আর এ ধরনের নামাজ আদায়কারী নিজেকে অন্যায় কাজ থেকেও বিরত রাখতে সক্ষম নয়।

০৫. নিছক দায়বদ্ধতা মনে করা : নামাজকে রুটিন মাফিক নিছক দায়বদ্ধতা মনে করে শৈথিল্য প্রদর্শনপূর্বক আদায় করা হলে সে নামাজ প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাবে। আর তাতে মুনাফিকের লক্ষণও চলে আসে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে ধোঁকাবাজি করে; বস্তুত তিনি তাহাদেরকে উহার শাস্তি দেন, আর যখন তাহারা সালাতে দাঁড়ায়- কেবল লোক দেখানোর জন্য এবং আল্লাহকে তাহারা অল্পই স্মরণ করে।’ (সূরা নিসা-১৪২) এ ধরনের নামাজ আদায়কারী নিজেকে অন্যায় ও মন্দকাজ থেকে কতটুকু বিরত রাখতে সক্ষম হবে? কারণ এ নামাজ আল্লাহর সাথে ধোঁকাবাজি ও প্রতারণার শামিল।

০৬. লোক দেখানো ইবাদত করা : লোক দেখানো ইবাদত আল্লাহ কবুল করবেন না। যারা লোক দেখানো ইবাদত করে তাদের জন্য ধ্বংস। তারা ইহকালেও ব্যর্থ পরকালেও তারা ব্যর্থ হবে। সূরা মাউনে চমৎকারভাবে এ দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং দুর্ভোগ সেই সালাত আদায়কারীদের, যারা তাহাদের সালাত সম্বন্ধে উদাসীন, যারা লোক দেখানোর জন্য উহা করে।’(সূরা মাউন-৪-৬)

দুনিয়াবি স্বার্থ, উদ্দেশ্য বাদ দিয়ে একমাত্র মহান রবের সন্তুষ্টির লক্ষ্যে ইবাদতে মনোনিবেশ করতে হবে, তবেই ইবাদতের স্বাদ গ্রহণ সম্ভব এবং কাক্সিক্ষত সফলতা অর্জন করাও সম্ভব হবে। ইবাদতের সঠিক পদ্ধতি না মেনে এবং যথাযথ হক আদায় না করে সারা জীবন ইবাদত করে গেলেও তা সফলতা বয়ে আনবে না। সঠিক পন্থা অবলম্বন করে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে বান্দা নিজেকে অন্যায়, অশালীন ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে। কাজেই আমাদেরকে কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশ মেনে ইবাদত পালন করতে হবে।

লেখক : এমফিল গবেষক, প্রাবন্ধিক

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে