ইসলাম ডেস্ক: ইচ্ছা যদি ভালো হয় পূরণ হবেই। আর এমন এক নজীর গড়লেন এক কাপড় ব্যবসায়ী। আশির দশকের সৈকত সিনেমাটি এখন আর সিনেমা হল নেই। ট্রলারঘাট বাজারের আলেম ব্যবসায়ী হাফেজ মাওলানা আবদুর রউফের প্রচেষ্টায় এটি এখন ‘সওতুল হেরা হাফিজিয়া মাদরাসা’।
এক সময় কিশোরগঞ্জ জেলায় প্রায় ২৫টি সিনেমা হল ছিল। মালিক পক্ষ এ হলগুলো চালাতো প্রতিযোগিতা করে। সময়ের ব্যবধানে ১৭ স্থান নিয়েছে কফিনে। বাকিগুলোও মৃতপ্রায়। অনেক হল রূপ নিয়েছে অনেক রকমের। কোনোটি হয়ে গুদাম, কোনোটি মার্কেট, কোনটি শপিংমল, কোনোটি ভেঙ্গে হয়েছে রাস্তা। কিন্তু ‘সৈকত’ রূপ নিয়েছে হিফজুল কোরআন মাদরাসার।
কীভাবে এ কাজটি সম্ভব হলো? জানতে চাইলে ‘‘সওতুল হেরা হাফিজিয়া মাদরাসা’র পরিচালক হাফেজ মাওলানা আবদুর রউফ জানান, দীর্ঘদিন মাদ্রাসায় পড়ানোর পর প্রিয় নবীর সুন্নাত হিসেবে কাপড়ের ব্যবসার সঙ্গে আমি যুক্ত হই। আমার দোকান ছিল এই ট্রলারঘাট বাজারেই। আমি দেখেছি যে, আশির দশকে প্রতিষ্ঠিত এই ‘সৈকত’ সিনেমা হলটি যখন ব্যবসায় মন্দা সময় কাটাচ্ছিল, তখন এতে ছবি প্রদর্শিত না হয়ে ভেতরে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম চলত। এ বিষয়টি আমাকে খুবই ব্যথিত করত।
তখনকার সময় আমার একটি মনে মনে ইচ্ছে ছিল যে, আমি এমন একটি মাদ্রাসা করব; যে মাদ্রাসার মধ্যে কোন ধরনের কালেকশন হবে না। ছাত্ররা একমনে শুধু লেখাপড়া করবে। আমি আমার ইচ্ছে দূর সম্পর্কের এক ভাগিনাকে বললে, সে আমাকে বলে মামা! আপনি এই সিনেমা হলটিকে ভাড়া নিয়ে মাদ্রাসা বানিয়ে ফেলেন। আমি তো ওর কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। আমি জানতাম না যে তার এই কথাটি একসময় বাস্তবে রূপ নিবে।
সে আমাকে প্রস্তাব দিয়ে ওই দিক দিয়ে সিনেমা হলের জায়গার মালিক এ এলাকার অন্যতম ব্যবসায়ী ও ধনী ব্যক্তি জনাব গিয়াস উদ্দিন লাকি মহাজনের সঙ্গে কথা বলেন। তখন ওইলোক আমাকে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। আমি একদিন দুই রাকাত নামাজ পড়ে তার সঙ্গে দেখা করতে যাই। তার সঙ্গে আমার মনের সবকিছু খুলে বলি। কিন্তু এই স্থাপনাটির ভাড়া আমি কত দিবা এবং অ্যাডভান্সড কত দিবো তা নিয়ে আমাদের দুজনের মধ্যে একটু মতানৈক্য তৈরি হয়। আমাকে তিনি পরে জানাবেন বললে আমি চলে আসি।
কিন্তু তার স্ত্রী যখন বিষয়টি জানতে পারেন তখন বারবার তাকে তাগাদা দিতে লাগলেন যেন সিনেমাটি ভাড়া নেয়া লোকের কাছ থেকে স্থাপনাটি নিয়ে আমাকে মাদরাসা করার জন্য দিয়ে দেয়। তার স্ত্রী তাকে আরো বলেন, আপনার তো টাকা পয়সার অভাব নেই। টাকার জন্য কেন একটি মাদরাসা হবে না! এসব কথা শুনে তিনি আমাকে ডেকে নিয়ে আমার প্রস্তাব করা টাকাতেই স্থাপনাটি ভাড়া দিতে রাজি হন। এরপর আমি আল্লাহর অশেষ রহমতে ২০১৬ সালের রমজানে সিনেমাটি ভাড়া হিসেবে পাই এবং কয়েক লক্ষ টাকা খরচে এটিকে মাদরাসার উপযোগী করে তুলি। আলহামদুলিল্লাহ এরপর থেকে বেশ ভালোই চলছে।
এলাকার মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি কেমন সাড়া ফেলেছে তা জানতে চাইলে হাফেজ মাওলানা আবদুর রউফ জানান, আলহামদুলিল্লাহ প্রচুর এলাকার প্রচুর শিক্ষার্থী এখানে লেখাপড়া করছে। তারা কুরআন শরীফ পড়ছে, হাদিস পড়ছে, ইসলামের প্রাথমিক জ্ঞানগুলো এখান থেকে শিক্ষা অর্জনের চেষ্টা করছে। তাছাড়া আনন্দের বিষয় হলো, এলাকায় কোনো মেহমান বেড়াতে এলে তাদেরকে এলাকাবাসী এ প্রতিষ্ঠানটি দেখাতে নিয়ে আসে। তাদেরকে বলে যে, আগে আমাদের এলাকায় একটা সিনেমা হল ছিল আল্লাহর রহমতে এখন এটি হিফজুল কোরআন মাদ্রাসায় পরিনত হয়েছে। তারা এ প্রতিষ্ঠানকে দেখে আপ্লুত হয়। তাদের এ ভালোবাসা আমাকে পথ চলার সাহস যোগায়।
কতজন ছাত্র ছাত্রী বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, বর্তমানে হিফজুল কোরআন বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫জন, নাজেরা বিভাগে ৩৪ জন এবং মক্তবে আছে ৩৮ জন। প্রায় ৫ শিক্ষকের পরিচালনায় চলছে বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে তার স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এই তাড়াইল এলাকায় প্রায় ৬৩ টি মাদ্রাসা বিদ্যমান। কিন্তু মানসম্পন্ন কোনো হিফজুল কোরআন বিভাগ আছে বলে আমার জানা নেই। তাই আমার ইচ্ছে এখানে বড় পরিসরে একটি হিফজুল কোরআন মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা; যেটি হবে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন।