সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৩:৫৬:৪২

কোরআন কি বলছে, মেয়েদের লেখাপড়া কি জায়েয?

কোরআন কি বলছে, মেয়েদের লেখাপড়া কি জায়েয?

ইসলাম ডেস্ক: আজকাল প্রায়ই কিছু কিছু জ্ঞ্যান শূণ্য হুজুরেরা ফতুয়া দিয়ে বলেন, মেয়েদের কাজ নাকি শুধু ঘরে বসে থাকা আর স্বামীর সেবা করা। যেখানে পুরো বাংলাদেশ তথা বিশ্বেই অর্ধেক মানুষ নারী। তাহলে এই সংখ্যক এই গোষ্ঠিকে বাদ বা জ্ঞ্যান শূণ্য রেখে সমাজ তথা জাতি কিংবা বিশ্বায়ন করা কি আদৌ সম্ভব। আসলে নারী শিক্ষা বিষয়ে কোরআন কি বলছে- চলুন জেনে আসি।


ইসলাম ধর্মে জ্ঞান অর্জনের ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মহাগ্রন্থ আল-কুরআন ও হাদিসে বারবার জ্ঞান অর্জনের ওপর তাগিদ দেয়া হয়েছে। নামাজ, রোজা, হজ্বের মতো ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধি-বিধানের পাশাপাশি জ্ঞান অর্জন করতে বলা হয়েছে। এমনকি কোথাও কোথাও নামাজ ও রোজার মতো অবশ্য পালনীয় কর্তব্যের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিয়ে জ্ঞান অর্জন করতে বলা হয়েছে। ইসলামে জ্ঞান অর্জন করাকে ফরজ বা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর এ নির্দেশ শুধুমাত্র পুরুষদের দেয়া হয়নি বরং ঈমানদার নারী-পুরুষ সবাইকে জ্ঞান অর্জন করতে বলা হয়েছে।

ইসলামের ইতিহাসে নারী শুধু জ্ঞান অর্জনই করেননি সেইসঙ্গে শিক্ষক হিসেবে অসংখ্য শিক্ষার্থী গড়ে তুলেছেন তারা। অসংখ্য জ্ঞানী মুসলিম নারী যেমন-উম্মে সালমা, আসমা বিনতে উমাইস, হজরত আয়েশা, হজরত হাফসা এবং তাদের সবার শীর্ষে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রাণপ্রিয় কন্যা হযরত ফাতেমা জাহরা (সালামুল্লাহি আলাইহা) বিশ্বনবীর অসংখ্য হাদিস বর্ণনা করেছেন।

বর্ণিত আছে, দ্বিতীয় খলিফা বহু বিষয়ে পরামর্শের জন্য আসমা বিনতে উমাইসের শরণাপন্ন হতেন এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করতেন। এমনকি স্বপ্নের ব্যাখ্যা করার জন্যও আসমা বিনতে উমাইসের শরণাপন্ন হতেন দ্বিতীয় খলিফা।

হাদিসে এসেছে, একবার কয়েকজন মুসলিম নারী রাসূলুল্লাহর (সা.) কাছে এসে উপস্থিত হয়ে আবেদন করলেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ! সবসময় পুরুষরা আপনার চারপাশ ঘিরে রাখে বলে আমরা আপনার কাছে থেকে কোনো জ্ঞান অর্জন করতে পারি না। আমাদেরকেও আপনার কাছ থেকে মূল্যবান জ্ঞান অর্জনের সুযোগ দিন। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) নারীদেরকে ইসলামের বিধি-বিধান শিক্ষাদানের জন্য একটি দিন নির্ধারণ করে দেন। এ ছাড়া, হাদিসে এসেছে, বিশ্বনবী (সা.) তাঁর স্ত্রীদের (উম্মুল মু’মেনিনদের) লেখাপড়া শেখানোর জন্য একাধিক শিক্ষিত নারীকে নিয়োগ দিয়েছিলেন।  

এভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.)এর সাহাবীদের সহযোগিতায়  নারীরা জ্ঞান অর্জন করেন এমনকি জ্ঞানে পরিপূর্ণতা অর্জন করেন। এমনকি বলা হয়, বিশিষ্ট হাদিস বিশারদ হাফেজ ইবনে আসাকির ছিলেন একজন নারী।

কাজেই এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, ইসলামে নারীর জ্ঞান অর্জনে কোনো বাধাতো নেই-ই, বরং তাদের জ্ঞান অর্জন করা অতি জরুরি একটি বিষয়।

অবশ্য মনে রাখতে হবে, নারীকে জ্ঞান অর্জন করতে হবে শরিয়তের অন্যান্য বিধি-নিষেধ মেনেই। জ্ঞান অর্জন করতে গিয়ে শরীয়ত বিরোধী কোনো কাজে লিপ্ত হওয়া যাবে না (যেমন- ইসলামি শালীন পোশাক ত্যাগ করা যাবে না) বা শরীয়ত বিরোধী কোনো কাজকে বৈধতা দেয়ার জন্য ‘জ্ঞান অর্জন’কে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
তথ্যসূত্র:
১.কানযুল উম্মাল, মোত্তাকি হিন্দি, খ:১২ হাদিস নং ১-৩৪৩৮২
২.সহি বোখারী, খ:১অধ্যায়৭৮ ও খ:২ পৃষ্ঠা ৪০৮
৩.ওমদাহুল কারী ফি শারহ সহি বোখারী খ ২ পৃ:১৩৪
৪.রেসাতুল ইসলাম খ:৩ পৃ:৭৮
৫.আলএসাবাত ফি তামিজুল সাহাবি খ:৪
সূত্র: রেডিও তেহরান
২১ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/আরএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে