আর কয়েকটা দিন পরেই অনুষ্ঠিত হবে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান কোরবানির ঈদ। চলুন এই ব্যাপারে আরো বিশদ জানা যাক-
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি : আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কোরবানির পশু জবাই করতে হবে। আল্লহর কাছে (কুরবানির পশুর) মাংস, রক্ত পৌঁছে না, বরং আল্লাহর কাছে তোমাদের তাকওয়া (তথা একনিষ্ঠভাবে সম্পন্ন আমল) পৌঁছে।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৩৭) আল্লাহ আরো বলেন, ‘হে রাসুল! আপনি বলুন, আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু বিশ্বজগতের পালনকর্তা আল্লাহর জন্য নিবেদিত।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৬২)
সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর শর্তসাপেক্ষে কোরবানি করা ওয়াজিব। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তোমার রবের জন্য নামাজ আদায় করো এবং কোরবানি করো।’ (সুরা : কাউসার, আয়াত : ২)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও কুরবানি করল না সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং : ২১২৩, মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং : ৮২৭৩)
কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্ত : কয়েকটি শর্ত পূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে কোরবানি ওয়াজিব হবে। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো :
এক. মুসলিম হওয়া। অতএব অমুসলিমদের ওপর কোরবানির বিধান প্রযোজ্য হবে না। দুই. প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়া। অতএব অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক ব্যক্তি নির্দিষ্ট সম্পদের মালিক হলেও কোরবিান আবশ্যক নয়। তিন. সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হওয়া। অতএব পাগল সম্পদের মালিক হলেও কোরবানি ওয়াজিব হবে না। চার. মুকিম হওয়া অর্থাৎ কোনো স্থানে ১৫ দিনের বেশি সময়ের জন্য স্থায়ী হওয়া। অতএব মুসাফিরের ওপর কোরবানি আবশ্যক নয়।
চার. জাকাত ফরজ হয় এই পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া। ১০ জিলহজ ফজরের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তাকে কোরবানি দিতে হবে। কোরবানির ওয়াজিব হওয়ার জন্য ওই সম্পদ এক বছর অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়। (আদ দুররুল মুখতার, পৃষ্ঠা : ২১৯, খণ্ড : ৫)
আর নিসাব পরিমাণ সম্পদ বলতে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা থাকে অথবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সব সম্পদ মিলে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের হয়, তখনও কোরবানি করা ওয়াজিব। সরাসরি স্বর্ণ বা রুপা থাকা শর্ত নয়, বরং প্রয়োজনের অতিরিক্ত সমমূল্যের নগদ অর্থ বা বাড়ি বা ব্যবসায়িক পণ্য বা অন্যান্য আসবাবপত্রের মালিক হবে। (তাবয়িনুল হাকায়িক, পৃষ্ঠা : ১০, খণ্ড : ৬)
কোরবানির গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা : নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিকের ওপর শুধুমাত্র একটি কোরবানি ওয়াজিব হয়। অনেক সম্পদের মালিক হলেও একটি কোরবানি ওয়াজিব হবে। অবশ্য সে একাধিক পশু কোরবানি করতে চাইলে সওয়াবের অধিকারী হবে।
কোরবানি শুধুমাত্র নিজের ওপর ওয়াজিব হয়। তাই সন্তানের পক্ষ থেকে কোরবানানি দেওয়া পিতার ওপর ওয়াজিব নয়। অবশ্য নাবালিগ বা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নয় এমন সন্তানের পক্ষ থেকে কোরবানি করলে সওয়াবের অধিকারী হবেন।
কোনো নারী নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার ওপরও কোরবানি ওয়াজিব হবে। একান্নভুক্ত পরিবারের মধ্যে একাধিক ব্যক্তির কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তাদের প্রত্যেকের ওপর ভিন্ন ভিন্ন কোরবানি ওয়াজিব।
যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয় এমন দরিদ্র ব্যক্তি কোরবানি করলে তার কোরবানি শুদ্ধ হবে এবং অনেক সওয়াব লাভ করবে। এমন দরিদ্র লোক কোরবানির উদ্দেশ্যে পশু ক্র করলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে যায়। (কিফায়াতুল মুফতি : ৮/১৭৮)