মুহাম্মদ হেদায়াতুল্লাহ: মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারামের সম্মানিত ইমাম ও খতিব শায়খ ড. মাহির বিন হামাদ আল মুআকলির সুন্দর তিলাওয়াতে মুগ্ধ সবাই। কাবা প্রাঙ্গণে জুমার দিন খুতবা দেওয়াসহ তিনি নিয়মিত নামাজের ইমামতি করেন। তাঁর দিকনির্দেশনাপূর্ণ আলোচনা শুনে নিজেদের পাথেয় সংগ্রহ করেন অনেকেই। হজ পালন করতে আসা বিশ্বের নানা প্রান্তের মুসলিমদের কাছে তিনি সুন্দর তিলাওয়াতের জন্য পরিচিত।
শায়খ মাহের ১৯৬৯ সালের ৭ নভেম্বর মদিনা নগরীর আল ওয়াজাহ নামক এলাকায় জন্মগ্রহণ করেছেন। অবশ্য তাঁর মা-বাবা লোহিত সাগর তীরে সৌদির ইয়ানবু শহর থেকে সেখানে বসবাস শুরু করেন। মদিনা নগরীতে শৈশব ও কৈশোরের এক বর্ণাঢ্য জীবন কাটিয়েছেন তিনি। ধার্মিক পরিবারে বড় হওয়ায় ইসলামী অনুশাসনের পাশাপাশি ছোটবেলা থেকে পবিত্র কোরআন পাঠে অত্যধিক গুরুত্বারোপ করেন।
শায়খ মাহির মদিনা নগরীর টিসার্চ কলেজে পড়াশোনা করেন। এরপর গণিতের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। গণিতের জটিল অঙ্ক বুঝিয়ে ব্যাপক সুনাম কুড়ান। পাশাপাশি মদিনার বিভিন্ন মসজিদে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। তাই তাঁকে নিয়মিত পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের চর্চা করতে হতো। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি চার সন্তানের পিতা।
শায়খ মাহির মক্কা নগরীর বালাত আশ শুহাদা স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। জনপ্রিয় বক্তা ও ইসলামের প্রচারক হিসেবে ব্যাপকভাবে সবার কাছে সমাদৃত হন। অতঃপর মক্কার প্রিন্স আবদুল মাজিদ স্কুলের স্টুডেন্টস কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মক্কার আবদুর রহমান আস সায়িদি মসজিদের ইমামও ছিলেন তিনি।
শায়খ মাহির ২০০৪ সালে উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিকাহ (ইসলামী আইনশাস্ত্র) বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। স্নাতকোত্তরে তিনি ‘ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.)-এর ফিকাহ চর্চা’ বিষয়ে গবেষণা করেন। ২০১২ সালে তিনি উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। পিএইচডি ডিগ্রিতে বিচার ও দণ্ডবিধি বিষয়ে ইমাম আল শিরাজি (রহ.) লিখিত ‘তুহফাতুন নাবিহ শরহুত তানবিহ’ বইয়ের একটি ব্যাখ্যাগ্রন্থ রচনা করেন।
একই সময় শায়খ মাহির উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের জুডিশিয়াল স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সুললিত কণ্ঠে পবিত্র কোরআনের তিলাওয়াতের মাধ্যমে তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পান।
শায়খ মাহির দুই বছর মসজিদে নববীতে তারাবির নামাজের ইমামতি করেন। এরপর ২০০৬ সাল থেকে দুই বছর তিনি ইমাম হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে তিনি মক্কার মসজিদুল হারামে শায়খ আবদুর রহমান আল সুদাইসের সঙ্গে তারাবির নামাজের ইমামতি করেন। এই বছর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান। প্রায় সময় তিনি ফজর ও মাগরিবের নামাজে ইমামতি করেন।
শায়খ মাহিরের মা একজন পাকিস্তান বংশোদ্ভূত ধর্মভীরু নারী ছিলেন। তাঁর বাবা হামাদ পাকিস্তানি নারী বিয়ে করায় গোত্রের লোকেরা তাঁকে তিরস্কার করে। কিন্তু ওই পাকিস্তানি নারীর সব সন্তানই পরবর্তী সময়ে পবিত্র কোরআনের হাফেজ হন। এমনকি শায়খ মাহির পবিত্র কাবার ইমাম নিযুক্ত হওয়ার পর তাঁর গোত্রের লোকেরা তাঁকে নিয়ে গর্ববোধ করে। তথ্যসূত্র : আল মারিফা ডটকম/কালের কণ্ঠ