সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে জুমার দিন হচ্ছে শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিন প্রতিটি ঈমানদারের সামনে হাজির হয় অফুরন্ত কল্যাণ ও সৌভাগ্যের বার্তা নিয়ে। জুমার দিনে কিছু করণীয়-বর্জনীয় রয়েছে।
জুমার দিনে কিছু করণীয়-বর্জনীয় নিম্নে উল্লেখ করা হল: জুমার দিন গোসল করা। যাদের ওপর জুমা ফরজ তাদের জন্য এদিনে গোসল করাকে রাসুল (সা.) ওয়াজিব করেছেন। (বোখারি : ৮৭৭)। পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসেবে সেদিন নখ ও চুল কাটাও একটি ভালো আমল।
জুমার সালাতের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা। (বোখারি : ৮৮০)। মেসওয়াক করা। (বোখারি : ৮৮৭)। গায়ে তেল ব্যবহার করা। (বোখারি : ৮৮৩)। উত্তম পোশাক পরিধান করে জুমা আদায় করা। (ইবনে মাজাহ : ১০৯৭)।
মুসল্লিদের ইমামের দিকে মুখ করে বসা। (তিরমিজি : ৫০৯, ইবনে মাজাহ : ১১৩৬)। মনোযোগসহ খুতবা শোনা ও চুপ থাকা ওয়াজিব। (বোখারি : ৯৩৪, মুসলিম : ৮৫৭)। আগেভাগে মসজিদে যাওয়া। (বোখারি : ৮৮১, মুসলিম : ৮৫০)।
পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন করা। (আবু দাউদ : ৩৪৫)। জুমার দিন ফজর নামাজে প্রথম রাকাতে সূরা সিজদা আর দ্বিতীয় রাকাতে সূরা দাহর পড়া। (বোখারি : ৮৯১, মুসলিম : ৮৭৯)। সূরা জুমা ও মোনাফিকুন দিয়ে জুমার সালাত আদায় করা। অথবা সূরা আলাক ও সূরা গাশিয়া দিয়ে জুমা আদায় করা। (মুসলিম : ৮৭৭)। জুমার দিন ও রাতে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। (আবু দাউদ : ১০৪৭)। এদিন বেশি বেশি দোয়া করা। (বোখারি : ৯৩৫)।
মুসল্লিদের ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে আগানোর চেষ্টা না করা। (আবু দাউদ : ৩৪৩)। কাউকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসার চেষ্টা না করা। (বোখারি : ৯১১, মুসলিম : ২১৭৭)। জুমার আগে মসজিদে জিকর বা কোনো শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান না করা। অর্থাৎ ভাগ ভাগ, গোল গোল হয়ে না বসা। (আবু দাউদ : ১০৮৯)।
কেউ কথা বললে ‘চুপ করুন’ এটুকুও না বলা। (নাসায়ি : ৭১৪, বোখারি : ৯৩৪)। মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা পেঁয়াজ, রসুন না খাওয়া ও ধূমপান না করা। (বোখারি : ৮৫৩)। ঘুমের ভাব বা তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে বসার জায়গা বদল করে বসা। (আবু দাউদ : ১১১৯)।
ইমামের খুতবা শ্রবণকালে দুই হাঁটু উঠিয়ে না বসা। (আবু দাউদ : ১১১০, ইবনে মাজাহ : ১১৩৪)। খুতবার সময় ইমামের কাছাকাছি বসা। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত হলেও ইমাম থেকে দূরে উপবেশনকারীরা বিলম্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদ : ১১০৮)।
জুমার দিন সূরা কাহফ তেলাওয়াত করা। এতে পাঠকের জন্য আল্লাহ তায়ালা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেন। (হাকেম : ২/৩৬৮, বায়হাকি : ৩/২৪৯)। জুমার আজান দেয়া। (বোখারি : ৯১২)। জুমার ফরজ নামাজ আদায়ের পর মসজিদে চার রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করা। (বোখারি : ১৮২)।
ওজর ছাড়া একই গ্রাম ও মহল্লায় একাধিক জুমা চালু না করা। আর ওজর হলো এলাকাটি খুব বড় হওয়া, প্রচুর জনবসতি থাকা, মসজিদ দূরে হওয়া, মসজিদে জায়গা না পাওয়া বা কোনো ফেতনার ভয় থাকা। (মুগনি লিবনি কুদামা : ৩/২১২)। অজু ভেঙে গেলে মসজিদ থেকে বের হয়ে অজু করা। (আবু দাউদ : ১১১৪)।
একান্ত ওজর না থাকলে দুই পিলারের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় নামাজ আদায় না করা। (হাকেম : ১/১২৮)। নামাজের জন্য কোনো একটা জায়গাকে নির্দিষ্ট করে না রাখা, যেখানে যখন জায়গা পাওয়া যায় সেখানেই নামাজ আদায় করা। (আবু দাউদ : ৮৬২)। কোনো নামাজির সামনে দিয়ে না হাঁটা। (বোখারি : ৫১০)।
এতটুকু জোরে আওয়াজ করে কোনো কিছু না পড়া, যাতে অন্যের নামাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে। (আবু দাউদ : ১৩৩২)। খুতবার সময় খতিবের কোনো কথার সাড়া দেয়া বা তার প্রশ্নের উত্তর প্রদানে কোনা সমস্যা নেই। (বোখারি : ১০২৯, মুসলিম : ৮৯৭)।
হানাফি ওলামায়ে কেরামের মতানুযায়ী, ভিড় বেশি হলে সামনের মুসল্লির পিঠের ওপর সেজদা দেয়া জায়েজ (আহমাদ : ১/৩২)। দরকার হলে পায়ের ওপরও দিতে পারে। (আর রাউদুল মুরবি)।
যেখানে জুমার ফরজ আদায় করা হয়েছে, উত্তম হলো ওই একই স্থানে সুন্নত না পড়া।এবং কোনো কথা না বলে পরবর্তী সুন্নত নামাজ আদায় করা। (মুসলিম : ৭১০, বোখারি : ৮৪৮)। ইমাম-খতিব সাহেব মিম্বরে এসে হাজির হওয়ার আগ পর্যন্ত তাসবিহ-তাহলিল, তওবা-এস্তেগফার ও কোরআন তেলাওয়াতে রত থাকা।